এমন কোনো লিখিত চুক্তি ছিল না আমাদের মধ্যে, তা সত্তেও সে পারি নি কোনো দিন ঠকাতে আমায়, অবশ্যই, আমার কাছে ছিল না - - এমন কোনো বিশাল সম্পত্তি, কিংবা অদৃশ্য মোহের বাঁধন, রূপ রঙের বাহার, তবুও জানি না কেন তার চোখের গভীরে, প্রেমের বিম্ব চিরদিনই উজ্জ্বল ! সময়ের ছায়া কোনো দিনই তাকে পারি নি করতে বর্ণ হীন, বহুধা বিস্মিত চোখে আমি চেয়ে রই তার নিঃশর্ত প্রণয়ের লীলা ! আর ভাবি, ওই মানুষটা তো বহু দিন ধরে, জড়িয়ে আছে আমার নিঃশ্বাস নিজের মাঝে তবুও দেখি তার বুকে নেই কোনো অভিযোগ ! সহজ ভাবে সে নিজের সাথে আমার এলোমেলো অস্তিত্বটা বয়ে চলেছে, ঠিক বন্য নদীর রূপে - - মন্থর বেগে, পাথর ভরা পৃষ্ঠতলে, সুদুর কোন অজানা গন্তব্যে, যথাবত,
তার এক নজরে ছিল সহস্ত্র তীরের বিঁধান, কে হলো অভিহত আর কে যে খুঁজে পেল জীবনের সন্ধান, বলা সহজ কোথায়, বহু যত্নের পরেও গেছে হারিয়ে সে এক অমূল্য অঙ্গুরী, নিয়তির ঘূর্ণাবর্তে কত সম্রাটের মুকুট যায় হারিয়ে, তুমি আর আমি যেখানে শুধুই শুষ্ক খড়কুটা, এক দমকা হাওয়ায় উড়ে যাবো জানি না কোথায় - -
সব কিছুই এখানে শীশ মহলের দুনিয়া, বহু আযামী হতে পারে তোমার তথাকথিত ভালবাসা কিন্তু নিয়তির আগে অসহায়, যখন ভাঙ্গলো ঝুলন্ত ঝাড় - - বাতিদান, মেঝের উপরে ছিল এক অসমাপ্ত নীরবতা, সারাটা জীবনের অনবরত লেখা তবুও যেন রইলো বুকে অপূর্ণ কবিতা, ওই তারকের আসরে সবাই ছিল নির্বাক, নিঃশব্দ ! আকাশ - গঙ্গার তীরে খুঁজে পাই নি তাকে, মিথ্যে প্রতিশ্রুতির আলো ছিল - চারদিকে, খুব বিষণ্ণ মনে ফিরে এলাম আবার ঊষর প্রান্তরে, জানি কিছু ক্ষণ থাকবে ঘিরে যথারীতি বিষাদের ছায়া, পুনরায় জীবনের সাথে বোঝাপড়া, এমন বিরাট কিছু ঘটে নি, শুধুই নিশান্তে ভেঙে ছিল এক সুন্দর স্বপ্নের ঝুমুর ভরা আকাশ, কিন্তু পৃথিবী নড়ে - নি লেশমাত্র - -
কিছু বিশেষ ছিল না, বলার জন্য - - তাই আরশিকে দিলাম বিদায়, আসলে, অনেক সময়ে ওই গলাগলি ভাবটাই ডেকে আনে সহজ জীবনে তিক্ততা, খুব নিখুঁত ভাবে আত্মীয়তা গড়তে গিয়ে দেখি, ওই সমস্ত চেনা মুখ দাঁড়িয়ে আছে ঠিক উঠোনের পারে, হাতে - নিয়ে জ্বলন্ত মশাল ! যাকে বলে হাতায় লুকোনো সাপ, বিভীষণের সগোত্রীয় মানুষ, আমি অথবা তুমি কেউ নয় এখানে ব্যতিক্রমী, সবাই যেন মৌসুমের সাথে জড়িয়ে আছে আবরণের ভিতরে আর একটা আবরণ, ওই দেউলের ঘাটে কিংবা সুদুর আকাশের তারক ভরা হাটে, খুঁজে পাই নি তোমায়, মনে হয় জেনেশুনেই দিয়েছিলে ভুল ঠিকানা।
সে এক রহস্যময় হৃদয়ের লিপি, লিখে যায় নিগূঢ় সৌন্দর্য্যের কবিতা, অথবা অন্তরের ব্যথা, নির্বাক চোখে আমি চেয়ে রই তার ওই উন্মুক্ত হাসির - - মাঝে জীবনের বাস্তবিকতা, তার চোখের পরশে লুকিয়ে রয় এক অদ্ভুত মলম, দেহ ও প্রাণের সমস্ত প্রদাহ যেন খুঁজে পায় সুরাহা, প্রতিকারক - শক্তি, পৃথিবী ও আকাশ যেখানে মিলে মিশে একাকার রাঙিয়ে যায় দিগন্ত রেখা অলৌকিক - - রূপে - -
ওই শেষ বিন্দুতে আমি আজ ও আছি অবস্থিত, যেখানে তুমি বলেছিলে আবার দেখা হবে, অবশ্যই ওই প্রান্ত রেখায় গড়ে উঠেছে পাকা সিঁড়ি - - সারাটা বেলা ওই মোহানামুখী নদীর সঙ্গে, অন্তর্নিহিত যুদ্ধ স্পষ্ট দেখা যায়, তাই অদৃশ্য আতঙ্কে জীবন চেয়ে রয় নদীর ওঠা নামা, কোথায় যেন সিঁড়ির ভূমিকায় আমি দাঁড়িয়ে রই অযৌক্তিক অপেক্ষায়, তার উন্মুক্ত প্রণয়ের কোনো সীমা নেই, সে করে যায় স্বেচ্ছায় আঘাত, ভাঙ্গন ভরা কিনারায় আমি ক্রমশঃ হয়ে - - উঠি শুকনো গাছের কুঁদা, নোঙরের বাঁধন স্থল, চির মৌন আর নিমগ্ন !
* * - শান্তনু সান্যাল
http://sanyalsplanet.blogspot.in/ Paintings by Nancy Medina
সবাই যায় ঝরে সময়ের সাথে, চিরদিনের - ভালবাসা, শুধুই মধুমাসের এক উজ্জ্বল সবুজ পাতা, ঠিক মৌসুমী হাওয়ার সঙ্গে, এক দিন বিবর্ণ হয়ে, সহসা যাবে উড়ে ! অনেক বার দেখেছি আয়না, এড়িয়ে গেছি কিন্তু উঠন্ত বলির রেখা, চোখের নিম্নাঞ্চলে ওই বাতিল আলোহীন প্রান্তর, সব কিছু কিন্তু বাতিল করা যায় না, সে এক হারানো প্রতি - ধ্বনি ধেয়ে যায় ঠিক মৃগয়ার রূপে, নিজেকে লুকোতে চায় মানুষ নিজের ভেতরে এক অদৃশ্য খোলে, কিন্তু সব কিছু কী, নিজের নজরে লুকানো সম্ভব ! তার দাবির সত্যতা জানতে ভয় পায় হৃদয়, তাই মোহভঙের আগেই খুলে রাখি দুই নয়নের জানালা, সুদূরে দেখি এখনো ভরে আছে কৃষ্ণচুড়ার গাছে একরাশ ফুল -
* * - শান্তনু সান্যাল
http://sanyalsplanet.blogspot.in/ art by nancy franke 2
সে এক বন্য নদীর অনুরূপ ছিল আমার অস্তিত্ব, উচ্ছৃঙ্খল, উদ্দাম, যেন জন্ম - সিদ্ধ অবাধ, অরণ্য, গ্রাম,শহর যেন চেয়ে থাকতো - নির্বাক হয়ে, আমার বহে যাওয়া, নিজের লয়ে অগোছালভাবে, নিশ্চিন্ত বেগে সমুদ্রমুখী অভিযান, বেশ - ভালই ছিল নিজের জগতে দুই ধারের কিনারার সাথে ভাঙনের খেলা ! জানি না হঠাৎ, কেমন করে সে, বিশাল বট বৃক্ষের ঝুলন্ত শিকড়ের রূপে, ছুঁয়ে গেছে আমার স্থির বুকের তরঙ্গ,সব কিছু যেন নিমিষে উথাল পাতাল, বহু গভীরস্থ ঘূর্ণির সহসা অদৃশ্য আর্বিভাব, বুকের মাঝে এখন, স্থগিত ঝড়ের প্রতিধ্বনি, জানি - না কোথায় নিয়ে যেতে চায় সাগর সঙ্গমে অথবা শাশ্বত প্রণয় স্থলে !
মন্থর বেগে জ্বলে লোবানের মিহি টুকরো অথবা জীবন চায় তার বিলীনতা, বুকের মাঝে পরিপূর্ণ ভাবে ! যখন ঝরে উজাড় করে মেঘলা আকাশ, সেই প্রথম বৃষ্টির শিহরণে, জীবন হতে চায় পরিতপ্ত পৃথিবীর অভিশপ্ত ভূমি, নিঃশর্ত বিলয়ন ! তার চোখের চার পাশে জড়িয়ে রয় এক অদ্ভুত ছায়া, জীবন ফিরে ফিরে আসে সুদুর মায়াবী পথ হতে, খুঁজে পায় কিছু মুহুর্তের স্বস্তি, যেন প্রবাসী পাখিরা পেয়েছে ক'এক দিনের পান্থশালা, অস্থায়ী অভয়ারণ্য - -
সে এক রহস্যময়ী জলধারা, অগ্রগামী উজানমুখী, আমি ভাঙ্গনের বেদন, বুকে নিয়ে শুধুই চেয়ে থাকি , বুঝি না স্রোতের মৌন অভিলাষ, প্রেম কিংবা অভিমান তার স্বপ্নের প্রান্তর, মহাসিন্ধুর বিশাল মুহানা, আমার পৃথিবী বিছিন্ন, খণ্ডিত, রুক্ষ মরুভূমি ,তবু আমি ভালোবাসী, তার মায়াবী জগত, সে আমায় আত্মসাত করে প্রতিক্ষণ, প্রতিপলকিছু পাওয়ার আশায় জীবনে অনেক কিছু হারাতে ও হয় বৈকি , ---শান্তনু সান্যাল river-nile-george-rossidis
রোজ সকালে দেখি সে দাঁড়িয়ে থাকে, পার্কের বাইরে, ঠিক অমলতাসের নিছে, আবছা আলোয় চেয়ে রয় যেন সুদুর প্রান্তরে, হয়'ত খুঁজে লুপ্ত শৈশবের কিছু বিশৃঙ্খল দিনগুলি, মন তখন - - কাঁদা মাটি পেরিয়ে পুকুর পারে, যেন দৌড়িয়ে যেতে চায়, কাচিক ডানা ওয়ালা ফড়িং এর পিছনে, ধরতে চায় ওই ছদ্মবেশী প্রজাপতি, যে উড়ে চলেছে নয়নতারার ঝোপে, তার নিবন্ত চোখের ভাষা বুঝতে খুব ইচ্ছে করে, দেখা হলেই কিন্তু আমি ভুলে যাই সব কিছু, সামনে দাঁড়িয়ে রয় শুধুই কংক্রিটের জঙ্গল, আর বামনগাছের সারি, নিঃশ্বাসটা ও যেন কেমন পর পর লাগে, উপায় কিছুই নাই, তাই বনসাই আত্মীয়তা জড়িয়ে রাখি বুকে - -
* * - শান্তনু সান্যাল http://sanyalsplanet.blogspot.com/ art by pino daeni