আজ এই পর্যন্তই থাক সাক্ষাৎকার, কিছু কুয়াশায় ঢাকা, কিছু নরম রোদে মাখা, জীবনের উঁচু নিচু অবুঝ উপত্যকা ! তোমার চোখেও আছে এক বুনো গন্ধের কৌতুহল, আর আমার বুকের গভীরতা, ছুঁয়ে যেতে চায় যাযাবর মেঘের ছায়া ! দুজনের মাঝে গড়ে উঠতে চায় এক অদৃশ্য খুঁটি বিহীন সাঁকো, জানি না এ কেমন জলস্রোতের মায়া, লহর বিহীন ডুবিয়ে যেতে চায় গ্রাম - গঞ্জ, শহর - বন্দর ! এপার - ওপার, আজ এই পর্যন্তই থাক পরস্পরের উপলব্ধি, কিছু - - আরও সময় দরকার চোখের ভাষা বোঝার জন্য, কিছু আরও বাড়ুক ধরা-ছোঁয়ার অনুভূতি ! এখনো তুমি, অনেক দুরে দাঁড়িয়ে আছো অজানা আমার বুকের বাহিরে - -
মাঝ শহরের ওই খোলা মাঠে, আজ নাকি আছে কোন এক মহৎ সম্মেলন, সকাল হতে চতুর্ধারে, এক বিচিত্র টলমলানি আছে বাতাসে ! রাজপথের দুই ধারে জানি আবার সাজবে - মীনাবাজার, ঢাউস মাছের দল খুঁজবে আবার কুচি মাছের ঝাঁক, ওই আলোর দপদপানির মাঝে নিয়ে চলো আমায় শিকলবদ্ধ পায়ে, কিসের ভয় হে প্রিয় বন্ধু তোমার, আমি যে পুরাকালের এক ঘোষিত আসামি, ওই ঝুলন্ত চত্বরে বহুবার উঠেছি আমি ! আর ঝুলেছি শূন্যে মুক্তির দোলা বহুবার একাকী, এই - নগর তোমার নগরপালও তোমার, শহরকাজী শুধুই নয়, হুকুম ও হাকিম সবাই তোমার, নিয়ে চলো সার্বজনীন ভাবে, হাতটি ধরে মুখোশহীন মাঝপথে ! আমি পুনরায় ভিঝতে চাই মুক্তির মহান বৃষ্টিতে, এমন অঝর ধারা ঝরুক প্রাণে, আবার ভরে উঠুক মানবিকতার বনস্পতি অভিশাপিত মরুপ্রান্তরে, পুনরপি অন্তর্তমের শুকানো নদী বহে যাক প্রাণোচ্ছল আবেগে - -
অবশেষে, তোমার মনের গ্রন্থি গেছে খুলে, খুঁজে পেয়েছো হয়তো আমায় নিজের খুব কাছে, ঠিক ধিকিধিকি দুপুর পেরিয়ে যেমন ভিজিয়ে যায় হটাৎ দমকা বৃষ্টি, নিষিক্ত সন্ধ্যার মুখে দাঁড়িয়ে রয়ে অবাক ভাবে, স্বপ্নের ফেরিওয়ালা, বাদামী আকাশ, ক্রমশঃ তখন মনে হয় পুরাতন সুরা ! ভরে চলেছে বুকের মাঝে অদ্ভুত, ঝিম ধরানো মনোভাব - - আমি তখন কেমন যেন, নিজেকে নিজ থেকে এড়িয়ে যেতে চাই, ঠিক নাটকের শেষে মুখোশ খোলার পালা, নায়ক থেকে খলনায়কের উপলব্ধি ! অথবা বাস্তবিক অভিনয়ের প্রারব্ধ, খোলস পরিত্যাগের প্রক্রিয়া, তখন জীবন নির্ভিক ভাবে হয়ে ওঠে সরীসৃপ ! লতিয়ে যেতে চায় বুকের নিচে সব কিছু - কাঁটার অরণ্য পথ, দুরারোহ শিলার পাহাড়, অনেক কিছু, তুমি তখন বিস্ময়ে মোড়া বিরল মণি, যার পরশে জীবন খুঁজে পায়ে লুপ্তপ্রায় নন্দন কানন - -
আর আমি ব্যথা পাই না, তুমি ছুঁয়ে দেখতে পারো বুকে অবস্থিত ক্ষত স্থান, আসলে সহিষ্ণুতার আছে এক নিশ্চিত সীমাবদ্ধতা, তার পরে, মানুষ হয় ওঠে আশ্চর্য্য ভাবে অনড়, মৌসুমের পরোয়া করে না, আর আমি কাঁদি না, হয়তো অশ্রু ধারা গেছে - শুকিয়ে, ওই শুষ্ক ধরাতলে ক্রমশঃ গজিয়ে উঠেছে লবণাক্ত ভূমি, আর কিছু ঝলসানো স্বপ্নের বৃক্ষ, পাতা বিহীন, আর আমি ওই মৃগজলের পিছনে ধেয়ে যেতে চাই না, সে প্রেম কি স্পৃহা ছিল জানি না, আমি আর - - স্বপ্নের জাল বুনি না, হয়তো তোমার এই মুহুর্তে কিছু অস্বস্তি হতেও পারে, কিন্তু বাস্তবিকতা শুধু এটাই যে তুমি আমায় নৈসর্গিক ভাবে পেতে চাও, যাকে বলে কটু সত্য রূপে, পূর্ণ পৌরুষে।
* * - শান্তনু সান্যাল
http://sanyalsplanet.blogspot.in/ Glennda Field Fine Art.jpg
আমি গেছি বহুবার বহে, নদীমুখের সাথে দূর সমুদ্র গভীরে, হারিয়েছি নিজের অস্তিত্বের দ্বীপ খানি তার বুকের বিশৃঙ্খল পৃষ্ঠতলে, অনেক সময়ে, সে যেন রহস্য ভরা সুদুর ছায়াপথের অধিবাসী, তার ওই উদ্ভাসিত প্রণয়ের মোহনে, আমি ভেসে গেছি মহাকাশে ! আবার, কতবার দেখেছি তাকে অন্তহীন মহাসাগরের অশ্রান্ত নাবিকের রূপে, নিয়ে যেতে চায় আমায় সুদুর, কোন এক সপ্তরঙ্গী দেশে, শুনেছি যেখানে নাকি আছে এক অবসান বিহীন জোছনার রাত্রি ! ঝরে অষ্টপ্রহর যেখানে দিব্য আলোর ঝরনা, জীবন খুঁজে পায় হৃদয়ের পবিত্র পরশ পাথর, কাজেই বারংবার আমি ধেয়ে যাই তার অদৃশ্য ভালবাসার পিছনে - -
* * - শান্তনু সান্যাল
http://sanyalsplanet.blogspot.in/ mary maxam painting
অনেক কিছুই ছিল তার কাছে, তবুও - জানি না কেন, কোথায় যেন সে ছিল ভীষণ একাকী ! বাহ্য - অভ্যন্তরীণে সমান ভাবে ফাঁপা, আসলে অতিরিক্ত পাওয়ার অভিলাষ - নিজেই ডেকে আনে শূন্যতা, এবং সেখান থেকেই, স্বয়ং ক্ষয়ে যাওয়ার সূত্রপাত ! চোখের আগে যেন ভেসে রয় বিস্তীর্ণ মায়াবী মরুদ্যান, - - চার দিকে, সারি সারি খেজুর বৃক্ষের বীথি, আর মাঝখানে নীল গভীর ঝিল ! ওই মৃগতৃষ্ণার পারে স্বপ্ন গুলোর - আছে চির নিদ্রার দেশ, যেখান হতে ফিরে আসা খুবই জটিল, জীবন শুধুই খুঁজে বেড়ায় অনবরত ভাবে মনের বন্ধু ! যদিও, বুকের খুব কাছে থাকে সে প্রণয়ী মানুষ, কিন্তু খোলা চোখ তাকে চিনতেই পারে না,