অনেক কিছু জীবনে যায় হারিয়ে, আবার অনেক কিছু সময়ের লহর ফেলে যায় বন্দ দুয়ারে, তবুও মানুষের ঝুলি চিরদিন ঝুলে রয় শুন্যের - তাকে, অভিলাষের ফর্দ অন্তহীন, আর প্রাণ - বায়ুর সীমা সর্বদা সঙ্কুচিত, শেষ প্রহরে কেমন যেন সব কিছু ছিল এলোমেলো, ঝরা ফুল তুলতে গিয়ে দেখি রাত্রি করে অদ্ভুত ভাবে অট্টহাস, আর আমি দিগন্তের কুয়াশায় খুঁজে মরি বিহানের ঠিকানা, যদিত্ত অন্তর্তমের আলোকে তুমি আছো চিরকাল প্রতিষ্ঠিত - তবুও, জানি না কেন এক অনির্দিষ্ট মৃগতৃষ্ণার পিছনে ধেয়ে যায়, এই অস্থির জীবন - -
প্রত্যেক মানুষের ভিতরে কিছু না কিছু জন্মগত অভাব থেকেই যায়, না তুমি আছো সম্পূর্ণ মানবী, না আমি কোনো বিশুদ্ধ পুরুষ, নিসর্গের - হাতে অসম্পাদিত দুটি কৃতি, কাট কুটের প্রক্রিয়া চলে সারাটা জীবন, তাই মিথ্যে অহংকারের স্থান নেই এখানে, ওই প্রকৃত মিলন - বিন্দুর শীর্ষে, যখন গাঢ় আঁধারে দুই - পরস্পর, পরশের সঘনতা ছড়িয়ে যায় এক বুনো গন্ধ পরিবেশে, তখন সমস্ত নৈতিক অথবা অনৈতিক মূল্যের পরিধান খসে পড়ে নিজেই ওই বন্য অন্ধকারে - - নিঃশ্বাসের বিনিমযে মানুষ তখন অন্য জগতে।
সম্ভবতঃ, সে দেখতে চাই নি আমার অন্ত:শীল রূপ সময়ের অতিক্রমে, আসলে মানুষ যাকে খুব ভালবাসে তাকেই সবচেয়ে সুন্দর মনে করে, তার সমস্ত অসৎ সে নিজের বুকে নিবিষ্ট করে যায়, এখান হতেই এক এমন উপাসনার সূত্রপাত, যার কোনো শেষ নেই, দেহের ওই - পঞ্চ - ধাতুর পিঞ্জর তখন নিজেই খুলে দেয় শুন্য মুখী কপাট, তবুও প্রাণ পাখি যেন উদাসীন, কেমন যেন চেয়ে রয় সমস্ত অন্তরিক্ষের ভাসন্ত জগৎ! ভাবের কারাগার তার জন্য যেন স্বর্গ, ডানা থাকা সত্বেও সে যেন খুব অসহায় বোধ করে, কোনো ভাবেই উড়ার সাহস যোগাতে পারে না, নিয়তির আগে তখন সে নতজানু, নিজের পায়ে নিজেই শিকল বেঁধে পরিতৃপ্ত ভাবে শেষ জীবনটা কাটিয়ে দিতে - চায়, তখন প্রেম ভৌতিক জগতের সমস্ত বেড়া গুলো ডিঙিয়ে সুদূরে এগিয়ে যায়, আবরণ কি অলংকার সব কিছুই পড়ে রয় পৃথিবীর বুকে নিষ্প্রয়োজন ভাবে।
জানি না কিসের যেন চুক্তি ছিল তাদের - - মধ্যে, মৌসুমি হাওয়ার সাথে দেখি সমস্ত চেনা চেহারা, চেয়ে আছে আমায় কেমন যেন অপরিচিত ভানে ! আমি যতই তাদের কাছে যেতে চাই তারা সরে যায় আরও দুরে, তাদের ওই আশ্চর্য্য ভরা চাহিনীর মাঝে, আমি খুঁজে চলেছি জীবনের দ্বিতীয় অধ্যায়, কিছু গোলাপ ফুলের - - - আত্ম - কেন্দ্রিত সুবাস আর কিছু কচি কাঁটার আবরণ, এক বিন্দু রক্ত ঠিক আঙ্গুল ডগায়, আর সেই উষ্ণ ঠোঁটের মধ্যখানে, পূর্ণ সমর্পিত আমার ওই অস্থির নিঃশ্বাস, সে দিন পৃথিবী যেন খুব সবুজ ছিল, আকাশও খুব টলটলে নীল, বিশ্বাস কর আমি সে দিন চেয়ে ছিলাম চিরতরের কারাগার, তার উষ্ণ অধর - - হতে বুকের অন্তরজগতে চির - নিবাস।
যখন জীবনের পড়ন্ত বেলায় ভালবাসা খুঁজে শীতকালের গোলাপী রোদ্দুর, আর হারানো যৌবন বসে রয় আরামকেদারায় একাকী, ঠিক এমন সময়ে অলিন্দের এক কোনায় অযথাই দাঁড়িয়ে থাকতে ভালোই লাগে, যখন ঈশান কোণে মেঘের দল ঘনিয়ে ওঠে বিন্দু বিন্দু,তখন জানি না কেন, অজ্ঞাতসারে, আমি ছুঁয়ে দেখতে চাই - - তোমার বুকের স্পন্দন, জানতে চাই তার বাস্তবিক ভাষা, ওই উঁচু নিচু রেখায় বুঝতে চাই জীবনের মর্ম, আর দেখতে চাই ওই গোপন স্থান ! যেটা পড়ে রয় দাবিদারহীন নিয়তির সাথে এক কিনারায়, নিজেকে উজাড় করে ভালবাসা, আমি আবার ভরে দিতে চাই সেই শুন্য জগৎ, অবশ্যই আমার - - হাতে রয়েছে কয়েকটি মৌসুমের সূচী আর তোমার পুরাতন হাসির বর্ণমালা, ঠিক যেন অপঠিত প্রেম পত্র বুকের সিন্দুকে খুব যতনে পাট করে রাখা আছে বহু যুগ ধরে।
* * - শান্তনু সান্যাল art by irene sheri http://sanyalsplanet.blogspot.in/
অনেক দিনের পরে হটাৎ আজ, বৈকালিন বৃষ্টি ! বয়ে আনলো সুদুর হতে কিছু উটকো স্মৃতি, কিছু ভাসন্ত দ্বীপ আবার যেন খুঁজে পেয়েছে হারানো পৃথিবী, পুনরায় - জীবন ধরে রাখতে চায় খুব যতনে মুঠোর মাঝে, তোমার সাবলীল ভালবাসা ! ছাদের কোণে, এন্টেনার গায়ে সেই ঝুলন্ত ছেঁড়া ঘুড়ি, দেখি আর নেই, বোধ হয় খুঁজে পেয়েছে শেষ মিলনের ঠিকানা, ঠিক আমরাও একদিন ছিলাম প্রাণবন্ত দুই নদী, মিলনাতুর, ক্ষিপ্র - আবেগী, সেটা অন্য ব্যাপার যে সঙ্গমের অনেক আগেই, আমরা গিয়েছি - - শুকিয়ে, কিন্তু সেই মরুধরার নিচে বিশ্বাস করো, আজও বহে যায় ভূগর্ভস্থ এক জলধারা, দুই বুকের মাঝে ওই অদৃশ্য জগতে আজও আছে হরিৎ প্রদেশ।
জীবনের নাগরদোলা ঘুরে যায় অবিশ্রাম লয়ে, কখনো আকাশপথে আবার কখনো পৃথিবীর গা ছুঁয়ে, মৌসুম, যথারীতি দাঁড়িয়ে রয় দর্শক দীর্ঘায়, ওই ভাবনার সঘন ভিড়ে, আমি ডেকেছি তোমায় খুব আপন করে, কখনো তুমি দিয়েছ মৌন সাড়া, আবার দেখি বহুবার তুমি করেছ অবহেলা, কৈফিয়ৎ বলতে কিছুই নেই - এই মুহুর্তে, সবাইর আছে নিজস্ব এক দুনিয়া, নিজের কিছু আপন কলাকৃতি, কিছু অবুঝ জ্যামিতি, আর বারংবার মুছে স্বপ্নের স্লেটে, নতুন ভাবে লেখা - কিছু ভালবাসার কবিতা, আত্ম গোপনের কিছু নাটক, কখনো একক আর কখনো কোরাসে নিজেকে হারাবার অভিনব - - প্রয়াস।
* * - শান্তনু সান্যাল http://sanyalsplanet.blogspot.in/ Irene Sheri art
গহন অন্ধকারেও সে খুঁজতে পারে - আমার নিঃশ্বাসের ঠিকানা, অদৃশ্য ছায়ার মতন সে জড়িয়ে রয় অহর্নিশ আমার অস্তিত্বের সাথে। সে প্রেম কি দিব্য অনুভূতি, প্রায়ই ভাবে জীবন, যখন দৈহিক সুখের অভিলাষ ক্ষণে ক্ষণে যায় উপাসনার পথে। সমস্ত ছদ্ম - - আবরণের তখন পরিসমাপ্তি ঘটে। ধূপের ধোঁয়া শুন্যে যায় হারিয়ে, পড়ে থাকে দেউলের মেঝে - কিছু ছাইর গুড়ো, আর এক পরিতৃপ্তির মধুর গন্ধ, উজান হতে প্রতিধ্বনিত তখন নদীর সাগরকুলে হারিয়ে যাওয়ার গান।
* * - শান্তনু সান্যাল http://sanyalsplanet.blogspot.in/ painting by artist Jacqueline Gnott 1