রবিবার, ১১ মার্চ, ২০১২


অগোচর নায়ক 

পার্ক বলতে ওই ক একটা ফুলের গাছ, চার দিকে 
বুনো মেহেদীর বেড়া, দু চারটি জং ধরা 
বেঞ্চ, ভাঙা লোহার মুখ্য দ্বার,
পার্ক কম কবরখানা যেন 
বেশি, পরিত্যক্ত সেই 
পুরাতন বাগানে 
প্রায়ঃ দেখেছি তাকে একাকী বসে থাকতে, কি 
যেন চেয়ে রয় তার স্বনিলীন চোখ 
আকাশপানে, মনে হয় সে 
যেন অন্বেষক সতত 
অনুসন্ধানে 
ব্যস্ত, কিংবা অপ্রকাশিত কবি খুঁজে কবিতার 
ঝরা পালক, কখন আবার মনে হয় 
সে যেন পলাতক বিপ্লবী 
ছুঁতে চায় দেয়ালের 
নতুন রঙ্গে 
ঢাকা পড়া ক্রান্তির শ্লোগান, এ ও হতে পারে 
সে এক বিফল প্রেমিক, জনম জনমের 
অপেক্ষা চাপিয়ে বুকে  বসে আছে 
বিজনে, তার নিস্তেজ 
চোখের নিচের 
কালিমা,
শুধায়, হয় ত সে কোনো সাধক অনিদ্রা 
রোগে সংক্রান্ত মানুষ, ঘুমোয় নি 
এক মুহূর্ত, সৃষ্টি হতে আজ 
পর্যন্ত, কিসের সন্ধান 
কোন পথের সে 
পথিক, 
গায়ে উঠে চলেছে বন্য লতা, ধরে আছে দেহে 
শেওলার পরত  কি পাখির বিষ্টা, বলা 
মুশকিল, বৃষ্টি রোদে একান্ত লয়ে 
সে কি গায় মুক্তির মৌন
গান, কিংবা হারিয়ে 
গেছে সংবেদনা, 
তার মুখের 
খসে পড়া পলাস্তরে, অশ্বত্থ গাছের  চারা  উঁকি 
দিয়ে জানিয়ে দিতে চায় তার মোক্ষের 
বৃতান্ত, তার পরাভবের কাহিনী, 
সংস্কৃতির মৃত্যু, স্বপ্নের 
অসময়ে প্রয়াণ,
মানব ও 
পাষাণের বিভেদ, তার আস্তে আস্তে মান্ধাতার 
আমলে সরে যাওয়া, হয় ত অজানায় 
কিংবা জ্ঞাতে প্রেমী যুগল থুথু 
ও ফেলে যায় তার পায়ে, 
তার বিষয়ে কেউ 
কিছু জানে না 
সে এক 
বিলুপ্ত আত্মা, অগোচর নায়ক ইতিহাস তাকে 
ভুলিয়ে দিয়েছে অনেক আগে, তা সত্তেও
সে বসে থাকে, অবহেলিত, নিঃসঙ্গ,
নিয়ে হাতে অতীতের ছেঁড়া 
পৃষ্ঠ, লিখতে চায় 
আবার 
পুনর্জাগরণের কবিতা, নব যুগের উপক্রমণিকা,

- শান্তনু সান্যাল 
painting by Caspar David Friedrich