শুক্রবার, ৬ অক্টোবর, ২০১৭

অফুরন্ত সুরভি - -

হটাৎ সব কিছু যেন গতিহীন, মৌন,
বুড়ো শিবের অশ্বত্থ গাছ, রাত্রি
ক্রমশঃ হয় উঠছে বাজ -
পাখির ডিগবাজি।
জনশূন্য ঘাটে
নৌকোর
একান্তবাস, শিউলির গন্ধে নিশীথ -
খুঁজে পুরাতন নিঃশ্বাস।অফুরন্ত
জোয়ার ভাটার খেলা যেন
চলছে পৃথিবীর আগ্নেয়
বুকে, তুমি আর
আমি এই
সন্ধিক্ষণে শুধুই এক জ্বলন্ত কর্পূরের -
আভাস।চাঁদ ডুববে যথারীতি
গহন দিগন্তে, ফুল ঝরবে
মাটির টানে, জন্ম -
মৃত্যুর শৃঙ্খলে
প্রণয়গন্ধ
যেন একগুঁয়ে, দেহ হতে প্রাণে বহে - -
যায় উন্মুক্ত ভাবে। 
* *
- শান্তনু সান্যাল

রবিবার, ৬ আগস্ট, ২০১৭

বাস্তবিকতা - -

 সব কিছুই ফুরিয়ে যায় একদিন, ফুরিয়ে
যাওয়াটা স্বাভাবিক, কিছু স্মৃতির
মোম ছড়িয়ে থাকে টেবিলের
গায়ে, ক্রমশঃ সকাল
আত্মসাৎ করে
অন্ধকারের
সমস্ত
ভাসন্ত আবর্জনা।হটাৎ জীবন তখন হয় -
ওঠে জীবন্ত নদী, ধরে রাখতে চায়
দুই পারের ফলন্ত ভূমি, আর
বুকের দ্বার খুলে, করে
প্রবল বৃষ্টির -
আবাহন !
বৃষ্টি
আসে নিজের ইচ্ছায়, কখনো না ছুঁয়েই
উড়ে যায় সুদূর প্রান্তরে, আবার
কখনো ভাঙিয়ে যায় সব
কিছু বাড়ি - ঘর হতে
চাষ - বাস, আর
একদিন হটাৎ
উধাও !
ঠিক যেন কোনো এক প্রিয় জন, ভুলে
যায় পরিচিত ঠিকানা।ফুরিয়ে
যাওয়াটা স্বাভাবিক, বুকে
টেনে রাখাটা সত্যি
খুবই কঠিন,
তাই
বাস্তবিকতাকে অঙ্গীকার করাই জীবন।

* *
- শান্তনু সান্যাল 
  
 

 

বুধবার, ৩১ মে, ২০১৭

সরে যাওয়ার আগে - -

 সেই চিরন্তন সাপ সিঁড়ির খেলা, নিয়তির
হাতে ছক কাটা, কখনো তুমি ছিলে
পছন্দসই কয়েন গায়ে, কখনো
আমি খুঁজেছি মাটির বুকে
ঠাঁই।জীবনের গ্রাফ
কোনো দিনেই
ওঠে না
সমান ভাবে আকাশমুখী, কিছু না কিছু - -
অপূর্ণতা থেকেই যায় জীবনের সাথে।
তবুও হৃদয়ের তৃষ্ণা যেন অরণ্য
আগুন জ্বলে যায় অন্তহীন
প্রান্তরে, কখনো তুমি
গা ভাসিয়ে
গেছো
ধোঁয়াটে আকাশে, কখনো আমিও গা ঢাকা
দিয়েছি ঠিক পুংহরিণের রূপে। অস্তিত্ব
নিয়ে যত সব জ্বালা, ওই হারানো
প্রাপ্তির মাঝখানে জীবন
গড়ে যায় কত
রকমের
পাশা,
তাই সরে যাওয়ার আগে বারেবারে বুকের - -
ভিতরে একরাশ ধরে রাখা।

* *
- শান্তনু সান্যাল

বৃহস্পতিবার, ৪ মে, ২০১৭

পৃথিবী ও নারী - -

বুকের গভীরে কত কি ওঠে নামে
মরমের কথা রয়ে যায় না-বলা
জীবন খাতার ছেঁড়া পৃষ্ঠে।
সে যেন পৃথিবী কিংবা
অভিশপ্ত নারীর
অন্তরের
কাহিনী, ভরা শ্রাবণেও জ্বলে যায়
মুক্ত প্রবাহে। যখন নীলাভ
সাগরের গায়ে খেলে
অগম জোছনার
মায়া তখন
তুমি - -
খুলে রাখো হৃদয়ের গন্ধকোষ - - -
আর ঢেলে যাও যথারীতি
সৃজনের সুধা, বিন্দু -
বিন্দু, নিজেকে
বিলাও
উজাড় করে। তোমার ওই অনবরত,
মৌন অবদান যদিও রয়ে যায়
না-দেখা পরশমণির গায়ে,
তবুও তার ছায়া তীরে
গড়ে ওঠে মানুষের
 স্বার্থপর জগৎ,
আর তুমি
পড়ে
থাকো ঝিনুকের মরা খোলসের রূপে
কখনো সাগর সৈকতে, কখনো
ঠিকানাবিহীন কোনো
বৃদ্ধাশ্রমে ! জানি
না কিসের
আশায়,
তুমি চেয়ে থাকো অন্তিম প্রহরের ওই 
আবছা দিগন্ত রেখা।

* *
- শান্তনু সান্যাল


রবিবার, ৯ এপ্রিল, ২০১৭

মহাসাগরীয় জরিমানা - -

ওই সীমান্তে যেখানে নদীর কূল যায় হারিয়ে
উচ্চ তরঙ্গ ছুঁতে চায় উন্মুক্ত পালের
উড়ন্ত আঁচল, ওই অফুরন্ত
গভীরতায় যখন সূর্য
যায় দেশান্তরে,
তখন তুমি
করে
যাও দখল বুকের জলশূন্য ভূমি।অন্ধকার -
সহসা হয়ে ওঠে অলীক সরীসৃপ, গিলে
নিতে চায় মানব সভ্যতার মিথ্যা
খোলস, মহানগরের ওই
উড়াল পুলের নিচে
তখন উলঙ্গ
সত্যতা,
ধর্ম
ও রাজনীতির মাঝে তখন আমার অস্তিত্ব -
শুধুই নগণ্য - অজানা, তারা সবাই
নিয়নের আলোয় যেন তুলসী
পাতায় ধোয়া,  ঝগঝগ -
উজ্জ্বল, তথাকথিত
মহামানব
যেন
ষোল আনা, সচরাচর, সেই মহাসাগরীয় -
জরিমানা - -

* *
- শান্তনু সান্যাল

বৃহস্পতিবার, ১৬ মার্চ, ২০১৭

দীর্ঘ ছায়ার দেশে - -


সময়ের স্রোতে বহে যায় সব কিছু,
কচি সকালের আলো ক্রমশঃ
হয়ে ওঠে ধোঁয়াটে আর
অতীতের দিনগুলো
মনে হয় যেন
ছাই গুড়ো
ছড়িয়ে
আছে ভাঙা কাচের টেবিলে অমনি
এলোমেলো।তোমার অনুরক্তির
টান ধরে রাখে বুকের পাঁজর
অদ্ভুত ভাবে, ঠিক যেন
কাগজ ফুলের লতা
জড়িয়ে আছে
ছারখার
পুরাতন ঘরের পাঁচিল, যদিও বহু
দিন আগে ফুলের মৌসুম গেছে
হারিয়ে, রয়েছে কাঁটার
সাথে কিছু হলদে
সবুজ পাতা।
তবুও,
জীবন চেয়ে রয় ধূসর আকাশের - -
দিকে, যদি কোনো দিন,  সহসা
ঝাপসা দৃষ্টি খুঁজে পায়  ওই
নীহারিকার বিলুপ্ত জগৎ,
স্বপ্নগুলো খুবই জেদি
কোনো ভাবেই
হাল ছাড়ে
না।

* *
- শান্তনু সান্যাল




শুক্রবার, ৩ মার্চ, ২০১৭

চিরন্তন ধাঁধা - -

অবশ্যই, আজও মনের জানালা, উন্মুক্ত খুলে
আছে ঠিক দিগন্তের অভিমুখ, জানি না
আজও কি তুমি ভেসে যাও, ওই
উত্তাল সাগরের বুক ছুঁয়ে।
অবশ্যই বহু দিন হল
আমি শুনে নি
কড়া
নাড়ার শব্দ, জলজ পাখিদের ঝাঁক যথারীতি
উড়ে যায় দক্ষিণা আকাশে, বহুদূর - -
জানি না কোন দেশের তারা
যাত্রী, কিংবা রীতিমতো
যাযাবর, ভালই
লাগে
জানলার বাইরের জগৎ, উড়াল পুলের উপরে
উড়ো জাহাজ, আর কিছু টুকরো সাদা -
মেঘ, কিন্তু আকাশটা বড়ই যেন
ধূসর, যুগের মরচে মাখা,
শুধুই পুড়ে যাচ্ছে
জানি না
কার
অভিশাপে।সময়ের ছানি, সন্ধ্যার অপেক্ষা - -
করে না, অন্ধকার, খুবই কাছের
মানুষ, দরজা না খুলেই ঘরের 
ভেতরে নিঃশব্দে ঢুকে
পড়ে। অবশ্যই
আজও মনে
হয়
কোথায় যেন তরঙ্গিত আছে প্রেমের কূল বিহীন
সরোবর, কাজেই উদ্বেলিত করে যায় মাঝে
মাঝে, অদৃশ্য কপিঞ্জলের চিৎকার - -
আর ভেসে আসে সুদূর হতে
সজল মানসুনি সমীরণ।
ধীরে - ধীরে
নিঃশ্বাসে
আমি
খুঁজে পাই অনেক কিছু, জীবন যথারীতি হয়ে - -
ওঠে তখন প্রতিষেধক, আর ভুলে যেতে
চায় হিসেবে - নিকেশের  চিরন্তন
ধাঁধা - -

* *
- শান্তনু সান্যাল 



রবিবার, ১৫ জানুয়ারী, ২০১৭

নিঃশ্বাসের সমান্তরালে - -

পুনরায় অভিলাষের আরোহণ, সমস্ত
অন্ধকার পেরিয়ে তোমায় ছুঁতে
চায়, উন্মাদিত জোছনার
রূপে। যদিও তুমি
এখনো লুকিয়ে
আছো
মায়ার সুড়ঙ্গে, নির্বাক, অনড় নিজের
মাঝে নিজেই বিলুপ্ত। নৈশ ফুলের
গন্ধে এখন রাত, আনন্দে
যেন আত্মহারা, আর
পার্থিব দেহ পড়ে
আছে স্থির,
ফুলের
বিছানায় একাকী, প্রাণ ছুটে চলেছে - -
তোমার সন্ধানে, পৃথিবী হতে
আকাশ পথে, অবিরাম,
অন্তহীন আলোর
স্রোতে, খুব
সম্ভব - -
শেষ প্রহরের কিছু আগে, তুমি ফিরে
আসবে নিঃশ্বাসের সমান্তরালে।

* *
-  - শান্তনু সান্যাল