বৃহস্পতিবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০১০

ইচ্ছা মৃত্যু

ইচ্ছা মৃত্যু 

সেই কুয়াশায় ঢাকা শীতের সকাল
গায়ে জড়ানো সাধারণ শাল
হেদুয়ার সেই বিবেকানন্দ রোডে
তুমি পথ চেয়ে ছিলে, সেই নীম গাছ,
অমলতাস কী শিরীষ কিংবা হয় ত 
কৃষ্ণচূড়া,পার্কের বেঁচে বসে অনেক ক্ষণ 
গল্পের মাঝে জেনেছিলাম যে 
তুমি আমায় ভালবাসতে, 
ট্রাম বাসের চলাচল সে দিন ছিল কম
মনে হয় সে দিন ছিল রবিবার,
ঢেউ খেলানো চুলের মাঝে 
কিছু অতীতের পৃষ্ঠে ছিল 
লুকানো রজনীগন্ধা, মেঘবিহীন
নযনাকাশে সে দিন ও ছিল প্রেমাঞ্জন,
আমি চেয়ে ছিলাম  পড়তে বহু দিন পরে 
পুরাতন অভিলেখের ভাষা,
তুমি নিস্তেজ চোখে চেয়ে ছিলে শুন্যে, 
ধুম্র্ময় আকাশে সূর্য্য তখন ও  অস্পষ্ট
ভাস্যমান, কী হলো কোথায় যে হারিয়ে গেলে?
অপ্রত্যাশিত তোমার উত্তরে আমি খুঁজেছিলাম 
প্রণয়ের লুপ্তপ্রায় বিশাল উপত্যকা 
যুগে যুগান্তর ধরে যথাবত 
যেন পরিপূর্ণ স্থির গভীরতম জলরাশি,
অনন্ত সলিলা,কিন্তু সচক্ষে কেও সে দেখি নি 
নীচে গড়ানো শাল, হাতে তুলে আমি শুধুই 
তোমার মৃতপ্রায় দেহে আসতে জড়াতে গিয়ে 
নিজেকেই মৌন প্রশ্ন করলাম -
প্রেমের কী ইচ্ছা মৃত্যু সম্ভব !
-- শান্তনু সান্যাল 
 painting - kanchanmala ghosh     

বুধবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০১০

ভালই ছিলাম

বেশ ভালই ছিলাম 
পুকুর পারে কলমির গন্ধে 
টিয়া রঙের কদলী পাতায় 
শালিকের আপন মনে, চাতালে 
বসে একাকী ভিন্ন ভাষী গল্পের মাঝে,
বাজের মত ধুসর ডানায়
কে যেন ঢিল ছুড়ল, শান্ত মনে -
দ্বিপ্রহরের ঘুমে ওই ছিঁটে ফোঁটা
বর্ষায়, হটাত তোমার প্রেমের চিরকুট 
উড়ে আসে ভেজা দালানের গায়ে, 
আমি পড়তে চাই নি এটাও মিথ্যে 
কিন্তু ভিজতে দিতে চাই নি ওটাও সত্যি 
আদ্র সাঁঝের সঙ্গে বৃষ্টি ও কেঁপে উঠলো 
অর্ধ উলঙ্গ যেন কোনো বৈরাগী, 
মিষ্টি অনুভূতির সেই চিঠির নৌকা 
না চেয়ে ও ভাসিয়ে দিলাম
অজানা নদীর ধারে,
কবে যে ভিজে গেছি মনে নাই 
নৌকা ভাসানোর ব্যথা নিয়ে বুকে 
আজ ও বসে আছি সেই শঙ্খ ঝিলের তীরে 
বর্ষা থেমে গেছে বহু দিন আগে, 
আকাশের গায়ে রঙ্গ ধনু যেন আবছা 
ধুয়ে গেছে ভালবাসা //
---- শান্তনু সান্যাল  

মঙ্গলবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০১০

প্রেমের মায়া

নীলাভ তিমিরে সাঁঝের আলেয়া, ভেসে উঠে অসংখ্য 
প্রাচির গগনে, দেখি ত্বম অপরূপ দিব্য  প্রেমের মায়া,
মন্থর গতি লয়ে বহে যায়, দুই নদীর সুপ্তময়  কিনারা 
বহু দূর ক্ষিতিজে মিশে একাকার,স্নিগ্ধ দুটি মূর্ত ছায়া ,
মালবিকা বনে চন্দ্রিমা ঢেলে যায় অবিরল প্রণয় সুধা,
অনন্ত কালে পরিণিত মুক্ত ছন্দ, আজ যেন একান্ত কায়া,
অজ্ঞাত বৃক্ষে রয়েছে,স্বপ্নময়ী কৃষ্ণচুড়ার অগনিত কুড়ি
 মধুমাস পলাশের সন্ধানে, আজি বেয়ে যায় জীবন খেয়া,
সুদূরে জোনাকিদের দ্বীপে, বাউলের লেগেছে মস্ত  মেলা,
একতারায় মহামিলনের গান, হৃদয়ের শুধু নেয়া দেয়া, 
প্রাচির গগনে, দেখি ত্বম অপরূপ দিব্য প্রেমের মায়া //
---- শান্তনু সান্যাল  

সোমবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০১০

সুপ্রভাত

সুপ্রভাত
কাঁচা হলুদ রঙ্গে, ভোরের আলো
শুভ্র চন্দ্রমল্লিকার বুকে সজল কম্পন,
তুমি কী ঘুমিয়ে আছো এখনো
হৃদয় দিয়ে যায় সমানে ডাক, শুনো নি,
শরত সকালে মিলনের প্রতিশ্রুতি  ?
শ্রাবনের মেঘ নিশ্চই জানিয়েছে!
প্রেমের আমন্ত্রণ, সঘন আকাশে
লিখে যায় নি সৌদামিনী স্বরলিপিকা!
স্মরণে দোলা দিয়ে যায় না
মালতি গন্ধে ভরা প্রথম যুগ্ম অধর
নিশ্বাস বিনিময় শিহরিত আলিঙ্গন,
সাড়া দিয়ে যায় অবশ্যই
দেহের বিশ্রঙ্খলিত আবেগ, উন্মুক্ত চেতনা,
কই  বেলা গড়িয়ে গেল তুমি দ্বার  যে
খুলতে ভুলেই গেছ, মনে হয় বিহানের
স্বপ্ন এখনো তোমায় বুকে জড়িয়ে রয়েছে,
গলিয়ে গেলাম দরজার নিচে দিয়ে কিছু
অশ্রু ভেজা পুষ্প গুচ্ছ -- শুভেচ্ছা সহ /
--- শান্তনু সান্যাল
photo - Nkhilesh Sanyal - Dacca

শুক্রবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০১০

ডুবে গেছে ভালবাসা

ডুবে গেছে ভালবাসা 
১ -অসময় কড়া নাড়ার শব্দ 
    শব্দে মনে হলো শুনেছি সে 
    বহু কাল আগে, রহস্য ও 
    কৌতুহলের মাঝে, দরজা 
    খুলে দিলাম, গাল ভরা দাড়ি 
    কঙ্কাল দেহে রয়েছে কিছু 
    ক্ষত, ঘায়ের অমিট দাগ 
    কলিঙ্গ বিজয়ী যেন মহা যোদ্ধা 
    নিরস্ত্র দাড়ায়ে আছে সম্মুখে 
    নিখোঁজ আমার প্রতিচ্ছায়া 
     ফিরে পেলাম কোন অরণ্য পথে,
     আজ আমি নিজেই নিহত 
     বাহিরে উল্লসিত বৃন্দ গান 
     জানি না কোন পন্থের অনুযায়ী 
      আগে তো আর তাদের দেখি নাই, 
      সমানে গেয়ে চলেছে অজানা 
      ভাষায় অবিরাম একসুরে,
      আত্ম উত্থানের বিস্মৃত গান 
      আকাশ কুয়াশাচ্ছন্ন 
      কে জানে কোথায় বয়ে যায় 
      আনন্দ ধারা --------------
২  এই কোলাহলের মাঝে প্রতিধ্বনি বিলুপ্ত 
     শিশুরা খেলছে নদীর চরে
      লিখছে কিছু হারিয়ে যাওয়ার কবিতা 
     ওই মাঠের শেষে কিছু ছায়া 
      সহসা উধাত যেন অজ্ঞাত মায়াজালে 
      বহু দূরে মনে হয় তাহারা খেলে 
      লুকুচুরি, 
      চেয়ে ছিলাম থামাতে ঢেউর অশান্তি 
      সাগর সৈকতে তুমি আর পথ 
       চাও নি, উদাস মনে ফিরে গেছি,
       জানি তুমি আর সে তুমি নও 
       প্রতিধ্বনির পথে হয় তো 
       জেগে উঠেছে ঘুমন্ত পাহাড় কিংবা 
       রমনীয় পর্যটক স্থল
       এক ঝিলিক রোদে ডুবে গেছে 
       ভালবাসা 
     -- শান্তনু সান্যাল  
      

শনিবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০১০

অহম অনন্ত স্বপ্ন পশ্যামি

অদ্ভুত নীলাভ ওই দৃষ্টি 
শুন্য নিয়ে উঠে আসে অন্তরীক্ষে 
জীবনের অবুঝ প্রহর
গতিমান, চিরস্থায়ী, চিরন্তন 
প্রশ্নের আলো ছায়ার মাঝে 
নিয়তির ধুম্র বলয় নিমিষে নিজের 
খেলা নিঃশব্দে দেখিয়ে যায় 
শুধু রয়ে যায় এক শ্বেত দীর্ঘ রেখা 
উর্ধমুখী বিলীনতার দিগে 
আকাশ অবাক যেন বুঝতে চায় 
মিসরের অজ্ঞাত চিত্র লিপি 
কিংবা ভাগ্য লিখন গভীর ভাবে 
এখানে জীবনের উদ্গম এখানেই 
মৃত্যুর মহাপ্রস্থান ও শেষে 
অহম অনন্ত স্বপ্ন পশ্যামি -
--- শান্তনু সান্যাল