রবিবার, ৩০ জানুয়ারী, ২০১১

সমর্পনের ভূমি


সমর্পনের ভূমি
প্রগাঢ অন্ধকারে উড়ে যায় কোন পাখির
ঝাঁক, বিস্তীর্ণ নীলিমার দেহে কী সাড়া দেয় ?
নিদ্রিত পৃথিবী হারায় ঘূর্ণন, চন্দ্র বিহীন রাতে 
তারক বৃন্দ গেয়ে যায় স্বস্তির গান, নিজেকে 
ছড়িয়ে দিতে যায় শুন্য ব্রহ্মান্ডে, নীলাভ 
আলো খেলে লুকোচুরি, নদীর ঢেউ ধরা দিতে 
চায় না, ধেয়ে ধেয়ে যায় উজানের মুখে,
এই উদ্বায়ী পরিবেশে মন ধরে রাখে উড়ন্ত 
স্বপ্নের পশম, লুকিয়ে দিতে চায় হৃদয়ের মাঝে,
নদীর বুকে জাগ্রত, গোপন স্রোতের প্রেম 
ভেসে উঠে মাঝে মাঝে নিঃশ্বাসের লাগি উপরে,
ঝরে রয় শিউলি অবিরাম সারা রাত -
শিশির কণিকা খুঁজে বেড়ায় সমর্পনের ভূমি.
--- শান্তনু সান্যাল  

শুক্রবার, ২৮ জানুয়ারী, ২০১১

ঈশানী মেঘেদল


ঈশানী মেঘেদল 
ফুলের মরশুম, সিক্ত হৃদয়ে ঢেলে যেও
না বিরূপ আগুন, মালঞ্চ সম থেক উন্মুক্ত,
এই অশ্রুময় লেখচিত্রে ও আছে অনেক 
অব্যক্ত, দ্বৈত গানের মধুরিম স্বরলিপি,
যেন ঝুলে আছে, ভালবাসার সুক্ষ্ণ জালে 
শিশিরময় অগনিত বেগুনি মুক্তমালিকা,
 কী বা আছে যদি এই কল্পনায় জীবনের 
শেষ দিন গুলি যায় কেটে নিমেষে নিমেষে,
অনির্দিষ্ট পথে হাটতে গিয়ে দেখি তুমি 
অপ্রত্যাশিত ভাবে  তুলে চলেছ ঝরানো 
শুভ্র হরিদ্রাভ কত অনাম ফুলের স্তবক,
জীবনের বিতানে তুমি সাজিয়ে যাও এই 
ভাবে পল্লবময় হরিত প্রদেশ বহু বার, 
অন্ধকার পথে জ্বলে যাও প্রদীপের পংক্তি, 
তোমার স্নিগ্ধ লোচনে জেগে উঠে অজস্র 
স্বপ্ন, অমন সন্ধিক্ষণে হৃদয়ের শান্ত সুর
 বেজে উঠে আপন মনে, ভরে যায় জোছনা
জীবন নদী ছুঁতে চায় ঈশানী মেঘের আদ্রতা.
---- শান্তনু সান্যাল 

বৃহস্পতিবার, ২৭ জানুয়ারী, ২০১১

রেখাঙ্কিত আবেগ

অধীর মনে গেছ রেখে, শুন্যতার মাঝে ও 
 প্রত্যাশার কিছু বিন্দু, রেখাঙ্কিত আবেগ,
 অনাগ্রহী তোমার মুখে ছিল অস্পষ্ট ব্যথা,
নিষ্পতির পথে উচ্ছল শ্যামলিমার সঙ্কেত,
 ওই দুবিধা ভরা ভালবাসায় থেমে রয়েছে 
কোথায় যেন স্থির মধুমাসের আন্দোলন, 
বিযুক্ত হয়ে ও তুমি গেলে জড়িয়ে বহু 
অপ্রকাশিত মনের স্বপ্নাবেশ, কিংবা হিয় 
দ্বন্দ, খুঁজতে গিয়ে নয়নের গভীরতা, ফিরে 
ফিরে আসি যেন কূল হারা উদাসীন খেয়া,
সুদূর তোমার পীছে মুড়ে সেই চাহনি যায় 
করে উদ্বেলিত, নিরব প্রেমের উপত্যকা,
নিষ্প্রভ সাঁঝের আকাশে এখনো দেখি কিছু 
 ভাঙা হাসিময় শুভ্র নিরদের উড়ে যাওয়া,
তুমি গেছ মিলিত ব্যক্তিত্বের শিরায় শিরায় 
এই  ভাবে, যে অবশ হৃদয় গেছে উন্মত্ত,
অবহেলনার মধ্যে ও দিয়ে গেছ ভালবাসা,
এই নিগুঢ মূলসুত্রে জীবন যায় বিশ্রঙ্খলিত.
---  শান্তনু সান্যাল 

সত্য শাশ্বত সুন্দর


সত্য শাশ্বত সুন্দর
জানি সে সুন্দর নয় তবু ও ভালোবাসি
হৃদয়ের তার বহে পবিত্র জলধারা, 
আমার কুত্সিত ভাবনা সে করে যায় নির্মল,
নিষ্কলঙ্ক, তার অনুরাগে জীবনের উজ্জ্বলতা, 
শিশির বিন্দু ঝরে মধ্যে নিশীথে 
শরতের চাঁদ বোঝে না পার্থক্যের ভাষা, 
শাপলা ও পদ্ম সমান ভাবে ভেসে রয় 
বুকে লুকিয়ে অজস্র জল কণিকা, 
অবুঝ হৃত্পিন্ডের ভুবনে খেলে অহর্নিশি 
প্রেমের শিশু, কাঁদে হাসে ক্ষণে প্রতিক্ষণে, 
ভুলে ও যায় অনেক সময়, ছলনার ওই খেলনায় !
স্বপ্নের শিমুল তুলো উন্মুক্ত লয়ে, 
সুন্দর অসুন্দরের দ্বন্দ সে মানে না, শুধুই 
উড়ে যায় দিগ দিগন্তে, নদীর উতলা জলে মেঘের বিম্ব 
রচে নব মরিচিকা , আবার মরু তে কভু 
শ্বেত মেঘ যায় ঝরিয়া, ভরে উঠে বালুর মাঝে 
পুষ্প বাটিকা, ফুলে রয় কন্টকময় ভালবাসা, 
জীবনের বৃষ্টি ছায়ার প্রান্তরে, দুই দিগে 
দেখি নির্ঝর এঁকে যায় প্রণয়ের বিরাট এক ইন্দ্রধনু, 
এই মহাসেতুর দুই পারে রয়েছে অদৃশ্য আধার স্থম্ভ ,
বাহ্য আবরণে অন্তর্মনের গভীরতা নিছক-
এক কল্পনা, আমি জানি তার মনের নিবিড় সৌন্দর্য্য, 
নিশ্ছল ভালবাসার তরঙ্গিত অগাধ জলরাশি, 
ছুঁয়ে যায় তার নিষ্কলুষ চোখের ঢেউ বারে বারে,
 সেই পরম সত্যতার লাগি আমি মন্ত্রমুগ্ধ হয় পড়ি,
সে যতই অসুন্দর হওক, আমি তাকেই ভালোবাসি, 
সত্য শাশ্বত সুন্দর, চিরদিন শুধুই এটা আমি জানি.
--- শান্তনু সান্যাল   

বুধবার, ২৬ জানুয়ারী, ২০১১

অদৃশ্য প্রভুসত্তা !


অদৃশ্য প্রভুসত্তা !
আম্র মুকুলিত ওই হাসির মঞ্জিরি
পৌস মানে না পূর্ব ফাল্গুনী, চঞ্চল সমীরণ 
স্বর্ণ চম্পক বরন সেই রূপের আলো
সাজিয়ে রাখে অরুনোদযের পথ বিস্তীর্ণ, 
ব্রহ্ম মুহুর্তে তুমি হয় উঠ সজাগ 
হৃদয় নদীর ধারে বিশৃঙ্খল অর্ঘ্য রূপে,
নিঃশব্দ শঙ্খ ধ্বনি ! হারানো দীর্ঘ নিঃশ্বাস
নিয়ে তোমায় হেরি মন্দির সোপানে,
কম্পিত যজ্ঞ শিখা সুবাসিত ধুম্র বলয় 
আমি ভুলে যাই বৈদিক ঋচার মন্ত্র খানি, 
উত্তরীয় বিহীন বক্ষে তুমি এঁকে যাও 
কোন অদৃশ্য লিপিতে মহা কাব্য কিংবা 
মৌন ভাষায় রচিয়া যাও জীবনের মধু অর্থ, 
ওই কোমল গ্রীবায় জড়ানো, ভেজা আঁচলে 
 রাখো প্রণয়ের অগ্নিশিখা, লহরিয়া কেশের
জল বিন্দু মৃদু সুরে বলে যায় স্বাহা,
বৃন্দ লয়ে ঝরে যায় আকাশ কুসুম অবিরাম, 
পূর্ব গগনে, অমৃত কুম্ভ যেন যায় উচ্ছলীয়,
প্লাবিত সূর্য্য ভেসে যায় সজল অন্তরীক্ষে,
ভাব শুন্য আমার চোখে তুমি সাজিয়ে যাও 
অসংখ্য দীপমালিকা, হাতে পূজার থাল লয়ে 
তুমি নেমে যাও ধীরে ধীরে 
স্থির নদী গর্ভে, মহা স্রোত রূপিনি, সেই 
জলাবতরণের অসংখ্য আভায় হয়ে উঠে
পরিতৃপ্ত  চরাচর, পৃথিবী নভ, পাতাল ও মনের
 অথৈ গভীরতা, তুমি করে যাও এমন ক্ষণে 
প্রতিষ্ঠিত, জীবনের অসীম অনন্ত প্রভুসত্তা. 
--- শান্তনু সান্যাল 

মঙ্গলবার, ২৫ জানুয়ারী, ২০১১

আবিষ্কার


আবিষ্কার 
নতুন করে আবিষ্কার করতে যেও না
মনের বাতায়ন খোলা রেখো ভালবাসা, 
ওই মেঘের গর্জনে বৃষ্টি কোথায় যে হবে 
কেউ তা জানে না, মিছে মিছে স্বপ্ন ছাতা
হাতে নিয়ে পথে যেন নেমে পড় না
শীতল সমীরণে ভেজা মাটির গন্ধ 
ভাসিয়ে নিয়ে যায় এক অদ্ভুত জগতে 
দেহ হইতে মনের বীথিকায় অভিসার যতই 
সুখদ মনে কর, ওই বাড়ন্ত জলরাশি অবশেষে 
নেমে বিশ্রী কাদায় হয় পরিনীত,  
সেই আদ্রভূমির নীচে নিঃশ্বাস হয় উঠে দুষ্কর  
জ্বার ভাটায়, জীবন নৌকা যায় ক্রমশঃ গর্তে 
হিংস ভাবনার কালান্তরে হয়ে উঠে বাসা,
পরিত্যক্ত তটভূমি করে হাহাকার 
এখানে কৃতিম দাবানল নিষ্ক্রিয়, সজল 
দ্বীপে পাষণ ঘর্শনেও আগুন ধরে না,
শুধুই আগামী প্লাবনের পথ চাওয়া 
দিবা নিশি, সূর্য্য শশী, এক দীর্ঘ যাত্রা 
মৌচাকের  সন্ধানে বারে বারে পীছে চাওয়া 
যেন এক অদৃশ্য আতঙ্ক 
শয়নে, জাগরণে, নিদ্রিত অথবা উন্মুক্ত 
নয়নে যেন উন্মাদিত কামনা 
এক পা ফেলতে গিয়ে অন্যের দুর্গতি, খুবই মুশকিল 
মনের জিনিষ মনেই গোছালে ভালো 
শরীরে মাখতে গেলে বিতৃষ্ণার প্রতিধ্বনি
মেঘ গর্জন কিন্তু বৃষ্টির ঠিকানা জানে না.
---- শান্তনু সান্যাল  

সোমবার, ২৪ জানুয়ারী, ২০১১

কবিতা নয় মৃগয়ার মুখে

কবিতা নয় মৃগয়ার মুখে 
 গৌর বর্ণ, বড় বড় ধারালু চোখ, গেরুয়া বসনে 
মধ্য বয়সী সেই দিব্য আভা মুখী পুরুষ কিংবা ---
কোনো অনন্য গ্রহের  মানুষ জানি না,
ধারাপ্রবাহ ইংরেজি তে অবিরল কথা বলেই 
চলে ছিল, গঙ্গা পার হতে গিয়ে আলাপ, 
মন্ত্রমুগ্ধতার সঙ্গে মনে হয় বশীকরণ ও জানত,
ওই ক্ষণিক পরিচয়, নৌকা থেকে নামার বেলায় 
দেখি হাতে এক কার্ড থামিয়ে দিলেন, 
এক দিন চলে এস আশ্রমে -- আবার হাসির ঢেউ 
সেই বৈরাগীর জাল, ভেসে গেলাম 
ঠিকানা দেখি ঠিকই ছিল, কোন মহাপুরুষের 
নামে জড়িত সেই রাস্তা, ১১২ কী ১১৩ বি কি সি 
পৌঁছলাম, দেখা মাত্র সে অরন্যানন্দ কি যেন 
তরঙ্গিত মুদ্রায় বললে - আমি জানতাম তুমি আসবেই 
আশ্চর্য্য, আমি যেন তার প্রেমিক কী প্রেমিকা 
হাসি থামতে না থামতে দেখি আমার সুপুরুষ 
মাংসল গায়ে তার হাত কিছু যেন খুঁজে চলেছে 
অস্বস্তির মধ্যে আদর যত্ন, যেন প্রাণ ঢেলে দিতে চায় 
দেখি ভক্ত বৃন্দ সব কটা অল্প বয়সী পুরুষ 
নারীদের প্রবেশ না কী বর্জিত, পবিত্র ভক্তি মার্গ 
আরো কত কিছু, বিশ  বায়িশের বয়সে ওই সব 
ভারী ভারী মন্ত্র মাথার উপর দিয়ে গেল 
সাঁঝ ঘনিয়ে এলো, দেখি গায়ে থেকে হাত গুলো 
আর সরে না, প্রণাম করে বললাম গায়ে হাত দেবেন না 
মাথায় হস্ত রেখে আশীর্বাদের নিয়ম জানি 
ওখানেই বৈরাগের শ্রী ইতি, আর ফিরে দেখি নি.
--- শান্তনু সান্যাল 

রবিবার, ২৩ জানুয়ারী, ২০১১

পরাশ্রয়ী পুরুষ

পরাশ্রয়ী পুরুষ 
নাকের ডগায় সিঁদুরের কিছু কণা দেখে 
ভালবাসার ঠাওর করা যায় না 
তোমার ওই উত্তরে শাঁখা ও পলার
দ্বন্দ কোথায় যেন ভেসে উঠে ছিল 
অবশ্যই ওই সোহাগের চিহ্ন নজীর পড়ি নি 
না জানার সত্তেও তোমার বিতৃষ্ণার সুর 
নিজেই যেন তটবন্ধ ভেঙে ফেলেছিল 
আমি কিন্তু ওই ঘায়ে হাত দিতে চাই নি 
সহানুভূতি কিংবা সম্মোহনের বশিভুতে 
নাটকীয় প্রেম দেখলাম তোমার অতৃপ্ত মনে 
অসময়ের বৃষ্টির সম ক্ষনিক শান্তি দিয়েছে 
সেই থেকে অবৈধ প্রণয়ের বীজারোপন
প্রেম আবার বৈধ ও অবৈধতা মানে না কী 
আলাপের আধারশীলায় আমি জানিয়ে দিয়েছি 
যে আমি মুখ্য অতিথি এবং তুমি শুধুই 
বাঞ্ছিত বাস্তু ভূমি, আমার ইচ্ছার বাহিরে 
তোমার কোনো গতি নাই, আমি পরজীবী 
অমরলতা, যেখানে মন চায়, সাম্রাজ্য গঠিত করি, 
ক্রমশঃ তোমার জড়িয়ে পড়া, যেন আমার 
উত্থানের পথ প্রসস্ত করে দিয়েছে 
ওই নাকের ডগার সিঁদুর গেছে মলিন হয়ে 
পুরাতন কাপড়ের দোকানে নির্বাচনের বিধান কী 
আছে, এই ভাবেই তোমার অস্তিত্ব গেছে হারিয়ে 
আমি হয়ে উঠলাম মহা নদ, ভাঙনের স্রষ্টা 
এবং তুমি গুটিয়ে গেছ সমস্ত ব্যথা 
জানি তুমি একাকী পড়ে থাক অভিশপ্ত জীবন 
নিয়ে, আমি চির পরজীবী আবার 
পুষ্প ভরা উচ্চ গাছের সন্ধানে //
--- শান্তনু সান্যাল  

শনিবার, ২২ জানুয়ারী, ২০১১

পুনর্মৃত্যুর পথে


পুনর্মৃত্যুর পথে 
জীবনের এই জটিল চক্রব্যু ভাঙতে গিয়ে
অনেক কিছু যায় হারিয়ে, সরে যায় আপন জন 
প্রেমের অনর্থক বিলাপের কোনো অস্তিত্ব থাকে না 
নিজের শব নিয়ে দাড়িয়ে আছি মণিকর্ণিকা  ঘাটে
তারা সবাই সত্যবাদী রাজা হরিশ্চন্দ্র 
শ্বশান শুল্কের পণ জানি দেবে না কেউ 
আস্তে আস্তে আত্মীয়তার মুখোশ খুলে 
মুখ্য দ্বার থেকে ফিরে যাবে নিজের ভবনে 
এটা আমার প্রথম মৃত্যু তো নয় 
জীবনের রঙ্গভূমিতে কত যে নাটক, প্রহসন 
ঘটে যায়, সবাই তা কী মনে রাখে 
এই ধর সে দিন তুমি আমার নগ্ন ছবি আঁকলে 
জানি কিছু পয়সার জন্য আমি রাজি হলাম 
বাঁচার পথ খুঁজতে গিয়ে মৃত্যু বরণ করা 
কোনো আশ্চর্য্যর ব্যাপার নয় 
কিন্তু যাদের জন্য এই মরণ আত্মসাত করলাম 
তারাই শেষ গায়ে আগুন দিয়ে লিখে দিল 
আমি কলঙ্কিত, নোংরা, নষ্ট মানুষ, বাজারু 
এই মৃত্যুর ভষ্ম গায়ে মেখে আসলে 
আমার আত্মা গেছে অমৃত মন্থন পার করে 
তাকে কেউ আর মারতে পারবে না 
পার্থ সারথির মতে -
নিজের অন্ত্যসংস্কার করতে গিয়ে দেখি 
যারা আমায় ভালবাসত তারা সব ঋণ আগেই 
মুক্ত করে, খাতায় এক এক হিসাব লিখে রেখেছে 
ওই সমস্ত ভালবাসা, প্রেম, অনুরাগ, প্রণয়
নাটকের গাদা গাদা পৃষ্ট বুকে নিয়ে 
নেমেছি তিলাঞ্জলী দিতে, পুনর্মৃত্যু পথে //  
-- শান্তনু সান্যাল 

বুধবার, ১৯ জানুয়ারী, ২০১১

অলৌকিক

জীবন্ত হৃত্পিণ্ড নিয়ে আছি সম্মুখে 
এই ভাবে তফাতে যেও না সরে,
নির্বাক স্পন্দনের কিছু বাঞ্ছিত রেখা 
চায় স্বীকৃতি, শর্তের বাহিরে পাওয়া,
পার্থিব সমর্পণের সীমান্তে ও আছে -
নতুন এক অভূতপূর্ব সিংহ তোরণ,
অন্তঃকরণ ও তোমার সৌম্য আঁখির 
মধ্যিখানে রয়েছে সে অনামিত প্রেম, 
এই বেগবান প্রবাহে শুধুই থেকো
আশেপাশে, ঘূর্ণাবর্তের জাদু লয়ে যায় 
শুন্যতার দিগে ক্রমশঃ নিমজ্জিত, 
এই মিহিন সাঁঝে, নির্বাপিত হয় উঠে 
সমস্ত বাসনা, মনে জেগে রয় শুধুই 
তোমায় চেয়ে থাকার অনিন্দ্য চাহনি,
এই চাহনি তে গড়ে যেতে চাই 
জীবনের ধ্বংসময় প্রাচীন অনুরাগের 
লুপ্তপ্রায় সভ্যতা,নিঃস্বার্থ মূল্যায়ন, 
অলৌকিক প্রণয়ের ইচ্ছে প্রজ্বলিত হয় 
উঠে শিরায় শিরায়, এমন সময় তুমি 
মানবীর রূপে যেন দিব্যতার দিগে এগিয়ে 
যাও নিরন্তর,শুভ্র চন্দ্র রশ্মি রেখা উর্ধ মুখী //
---- শান্তনু সান্যাল 

নির্ঝর দীপ্তি

না, জানতে চেয় না প্রণয়ের অথৈ গভীরতা

অজস্র অনল শিখা জ্বলে উঠে নিমিষে
সহস্ত্র সাওনের ধারা বহে গেছে জীবনে
তবু নিভি নি তোমার অনন্ত ভালবাসা,
হৃদয়ের সেই অতৃপ্ত গহ্বরে
অর্ধ প্রস্ফুটিত কত শতদল ভেসে যায়
লবনীয় অথাহ সলিলের উপরে,
কত স্বপ্ন গেছে বদলিয়ে
স্ফটিক শৈল রূপে, ঝরে যায়
বিন্দু বিন্দু অনুরাগ অশ্রু, ঝুলন্ত
পাষাণী জটাকৃতির অঙ্গ হইতে,
এই পাতাল পথে নিঃশ্বাস যায় হারিয়ে
রহস্যময় গুহা পেরিয়ে ভেসে উঠে
মধ্য মহাসাগরের বুকে,
মনের ব্যথিত উর্মিমালা ধেয়ে যায়
তোমার প্রেমের অন্তহীন সাগর তীরে,
যেন তুমি আজ ও দাড়িয়ে আছ
অবনত মেঘের অণু পরমাণু প্রবাহে
আমার তৃষিত বক্ষে বিলীনতার অভিমুখে,
সেই মহা সিন্ধুর তটে দেখি তুমি
হয় উঠেছে প্রকাশ স্থম্ভের নীল জ্যোতি
রিক্ত পাত্র নিয়ে, আমি হাত বাড়িয়ে চেয়ে থাকি
তোমার অমৃতময় ঝরিত নির্ঝর দীপ্তি
রোমাঞ্চ মিশ্রিত সেই তোমার হাসি
কোনো দিনেই ডুবতে দেয় না জীবনের মহাদ্বীপ
আমি ভেসে যাই দিশাহীন  তোমার ওই
ভুবন মোহিনী রূপের অদৃশ্য বিরাট তরঙ্গে //
--- শান্তনু সান্যাল

মঙ্গলবার, ১৮ জানুয়ারী, ২০১১

স্বর্ণিম বর্ণমালা

স্বর্ণিম বর্ণমালা
অভিষিক্ত পরাগে, ঘনিয়ে উঠে 
ত্বম অনিন্দ্য হৃদয় ঢেলে রয় -
সুবাস, জীবনের মোহভঙ্গ বৃন্তে,
নব কল্পনার, কিশলয়ের শীর্ষে 
যেন শিশির বিন্দু রয়েছে অস্থির,
 পৃথিবীর ক্রন্দন থেমে যায় কিছু 
ক্ষণ, ভূগর্ভ দহনের মাঝে,
ভূমিকম্প দেখে রয় অদৃশ্য সপন,
এই সৃষ্টির মধুরিম শয়নে 
আমি পুঁতেছি দুর্লভ প্রেমাঙ্কুর,
ঢেলে গেছি আত্ম সুধা বারে বারে 
সেই অঙ্কুরিত ভাবনার প্রবাহে 
লিখে গেছি ইন্দ্রধনুর গায়ে কিছু 
ভালবাসার গান, এঁকেছি মম 
কল্পনার মনোরম ভিন্ন পৃথিবী, 
এই সুন্দর কৃতির আড়ালে ও 
লুকিয়ে রয়েছে বহু মরুভূমি 
পরিত্যক্ত বন্ধ্যা বিস্তীর্ণ আকাশ, 
যেন হাসতে গিয়ে ভেঙে গেছে 
অশ্রু কটিবন্ধ, মণিমুক্ত হার 
জীবনের এই আলো আঁধারের
নাগরদোলায়, দুলেছি আপন মনে 
বহুবার, ত্বম প্রেমের প্রতিচ্ছায়া 
লাগে ভালো, ভুলে রই কিছু পল 
দুঃখ বেদন, তারা বলে আমি না 
কী অর্ধাংশ মনু গ্রহণ,
ত্বম বর্চস্বমাধুরী, ভরে যায় জীবনে 
নানান রঙের কাহিনী, গল্প, উপন্যাস 
আমি তোমার প্রনয় কাব্যের পৃষ্ঠে 
হয় উঠি স্বর্ণিম বর্ণমালা // 
-- শান্তনু সান্যাল    

সোমবার, ১৭ জানুয়ারী, ২০১১

তুমি, কলকাতা এবং মাতৃভাষা

তুমি, কলকাতা এবং মাতৃভাষা

আগামী জন্মে আমার শুধুই তিনটা  জিনিষ চাই

তোমার ভালবাসা, কলকাতা এবং

মুখে বাংলাভাষা, এর বাহিরে নাই

কোনো অভিলাষা ----

এই তিন ভুবন ঘিরে আমি বেঁচে আছি

ওই গড়ের মাঠে সাত জন্ম

পেরিয়ে ও আমি পথ চেয়ে থাকব

সঘন বর্ষায়, জ্বলন্ত ফাল্গুনে

শারদীয় রাতে, শীতের প্রভাতে

বেলুর মঠে কিংবা বাবুর ঘাটে

আমার রুধিরে, নিঃশ্বাসে, দুঃখে, সুখে

জন্ম মরণে, তুমি, কলকাতা এবং মাতৃভাষা

থাকবে চিরন্তন, চিরস্থায়ী

মহাজল্প্লাবনে অথবা প্রলয়ন্কারী 

ঘূর্ণিঝড়ে ও বেঁচে থাকতে চাই

বুকে জড়িয়ে রবি ঠাকুরের গান 

সেউলি, কাঁশ ফুল, দেবীর আগমনী

ছায়াময়ী তুমি কুত্সিত কী সুন্দর

তা আমি জানি না, আমার প্রেমের উদয়াস্ত

তোমার হৃদয়ের মাঝে

আমি আর কোন অনন্য পথ শোধ করি নি

করতে ও চাই না - আমি চাই তোমার পরিপূর্ণ

প্রেম, দেহে বাংলার মাটি, কলকাতার জীবন !

কল্প লোকের বাসনা নাই

বাস্তবিক ধরাতলেই থাকতে চাই //

--- শান্তনু সান্যাল

রবিবার, ১৬ জানুয়ারী, ২০১১

কলাবিজ্ঞ

কলাবিজ্ঞ 

জীবনের কলা দির্ঘায়ে তুমি কী ভাবলে 

শুধুই যৌন লিপ্সা, প্রেম ও ছলনা কিংবা
বস্ত্রহীন নারী পুরুষ, ক্রয় বিক্রয় অথবা
গিদ্ধ ভোজ দেখবে ?

এস দেখে যাও অন্তর্মনের ক্ষুধা, সমাজের
বিকৃতি, আমি পরিত্যক্ত বা অভিশিপ্ত !

বিক্ষিপ্ত ও যদি বল, দুঃখ পাব না
আমি বিভত্স বস্তির লোক
ওই ভারী ভারী সাধুভাষা বুঝি ই না,

পথেই জন্ম, পথেই দেখি স্বপ্ন, শেষে পথের 

ধারে ই মরে যাই, জানি তুমি কোনো দিনই 

ভালবাসতে পারবে না 

ভাব করা এতই যে সহজ না ! তুলে নাও
কিছু গলিত কুষ্ঠের রঙ্গীন ছবি
বুকের চিত্র আঁকতে যেও না, এই ভাঙা

হাড় গুলো গেছে বহুকাল আগে শুকিয়ে

১৯৪৭ থেকে ২০১১, ঘুরেছি আমি, ওই 

রক্তিম সীমান্ত হইতে বিভিন্ন প্রান্ত প্রান্তরে 

দিয়ে যেও যত দিতে পারো শাপ, গালাগাল
সাজিয়ে বারবধু কিংবা বাস্তুহারা বলতে হবে না 

স্পষ্ট ভাষায় বল - ভিখারী, দেশ হারা, জন্মহারা

ভবঘুরু, যাযাবর যত সব ফেলানো !

তোমার ভোটের তালিকায় আমার নাম লিখ না ,

আমার শুধুই পরিচয় রয়েছে
নেহরু কী টাটা আর্ট গেলারী, নিচে লিখে দিও
আহা রে ! বেচারা মানুষ ! যদি ওই কলাকৃতি
উজ্জ্বল দেখা দেয় না, তা হলে হেসে দিও 

কলাবিজ্ঞর ভান করতে ক্ষতি আবার কিসের //
---- শান্তনু সান্যাল 
 painting by arup lodh - kolkata

শনিবার, ১৫ জানুয়ারী, ২০১১

গেরুয়া আকাশ

অনেক সময় কিছু লিখতে, ভাবতে 
কিংবা আঁকতে মন চায় না 
আকাশ হয় উঠে গেরুয়া, চাঁদ যেন 
ধরেছে বৌদ্ধ ভিক্ষুক রূপ 
খালি পায়ে হেঁটে চলেছে অদৃশ্য পথে 
ওই উঁচু নিচু রাস্তায় ঝরে যায় 
পিঙ্গল বর্ণ শেফালির অগনিত ফুল 
বুড়ো বট বৃক্ষের পাখিদের কলরব 
সহসা হয় উঠে সনাতন নিরব 
শব্দ গুলো খসে পড়ে ধরাতলে 
দোলায়মান জটা শিকড়ে জীবন যেন 
ঝুলতে থাকে দিবা নিশি 
বিপরীত দিশায় নদীর ঢেউ 
বহে রয় স্থির ভাবে 
নৌকা গুলো সম্ভ্রমে ঘুরে 
নিজস্ব বৃতে অবিরাম এক তালে 
হাঁড়ির ফেন যেন উথলিয়ে পড়ে
অজ্ঞাত ধুম্র উঠে যায় ক্ষিতিজে 
মহা অট্টহাসএর  মাঝে কবিতার পংক্তি 
দুটি হাত বাড়িয়ে 
উলঙ্গ দেহে আগ্নেয় বস্ত্র চায় 
আকাশগামী বৌদ্ধ ভিক্ষুকদের দল
মোক্ষ বা কী যেন প্রাপ্তির আশায় এগিয়ে 
চলেছে, পৃথিবীর চাপা ক্রন্দন অস্রবণ করে 
আস্তে আস্তে থেমে যায়. যারা শুন্যে থাকে 
পিছিয়ে যায় সাক্ষী পটলে
তারা বলে - লিখে যাও যত খুশি 
এই দুরুহ কাব্য কত জন যে বুঝে 
কৃষ্ণ রুপি দুঃশাসনের এই জগতে অভাব তো নেই /
---- শান্তনু সান্যাল   

শুক্রবার, ১৪ জানুয়ারী, ২০১১

উল্কা পাত

উল্কা পাত 
মায়ামৃগ সম তুমি চেয়ে আছ 
বাহিরের জনসমুদ্র, অচেনা মুখ 
কিংবা ছাউ নাচের নানান মুখোশ 
রঙ্গীন আলোর আড়ালে আমিও রয়েছি 
কোনো এক নিস্তেজ আকাশদীপে, সে হয় 
ত  তুমি টের পাও নি,বসে আছি মুখোমুখি 
এই অজানা রেস্টরেন্টে, মুখ ঘুরিয়ে 
তুমি কী যে খুঁজে চলেছ যদি বলতে 
ওই দীর্ঘ ভাঙা গভীর নিঃশ্বাসে
ভালবাসা যেন হাঁপিয়ে উঠেছে 
সুদূর নীল পাহাড়ের গায়ে সূর্য্য গেছে ডুবে
এই নিষ্তব্ধ ক্ষণে দিয়ে গেছে কিছু 
প্রশ্ন চিহ্নেরআলেয়া ও জোনাকির আলো
অবহেলিত মোমবাতি জ্বলে উঠে 
জানি না কোন হারানো করূণ সুরে 
গোলাপ গুচ্ছটি হিমল হাতে ছুঁয়ে 
সরিয়ে রেখেছ এই ভাবে মনে হয় 
মধ্য রাতে নিশি ডাকের শিহরণ যাই নি 
এখনো, না বলে ও বলে গেছ অনেক কিছু 
হাসির প্রতি উত্তরে দেখি উল্কা পাত 
তুমি হারিয়ে গেছ অজ্ঞাত কোন অন্তরীক্ষে 
হয় ত তোমার মধ্যমা অঙ্গুলির মাঝখানে 
গেঁথে গেছে হিরক বলয় 
আস্তে করে স্পর্শ করি তোমার কোমল হাত
মোমবাতির আলো তে দেখি তোমার সরু আঙ্গুলের 
ডগায় ডগায় স্বপ্নগুলো ঝিলমিল ঝিলমিল ---- 
আমি অবাক চেয়ে রই তোমার এই অভিনব 
রূপখানি, শুধুই চেয়ে থাকি !
---- শান্তনু সান্যাল 
 

বৃহস্পতিবার, ১৩ জানুয়ারী, ২০১১

আজ ও ভালো লাগে

তোমার ওই ভাবে নিরব চেয়ে থাকা 
যেন সব কিছু হারিয়ে পাওয়া,
আজ ও ভালো লাগে তোমার আড় চোখে   
ছুঁয়ে যাওয়া, নিঝুম নীলাভ সাঁঝে 
শঙ্খ ধ্বনির মাঝে ওই 
সান্ধ্য প্রদীপ ঢেকে নিয়ে যাওয়া, 
তুলসীর সামনে হাত জুড়ে কিছু নিম্ন 
সুরে গাওয়া, অঙ্গনের আলপনায়
মুচকি হাসির রেখা,তুমি 
এঁকে যাও জীবনের পরিভাষা,
পাত্ঝরার দিনে আঁচলের কোন দিয়ে 
পুরাতন ছবির কাঁচের ধূল 
নিমগ্ন ভাবে মুছে যাওয়া,
আজ ও ভালো লাগে, তোমার শ্যামবর্ণ 
মুখের প্রদীপ্ত আলো নিঃস্বার্থ ভাবে 
ধুপকাঠির মত জ্বলে যাওয়া, 
ওই চশমার ভিতরে দুই সজল আঁখি 
যেন শীতের রেশমি রোদ গায়ে মেখে 
বসে রয়েছে বারান্দায়,
তোমার ওই সাঠ দশকের বাংলা গানের 
আবৃতি, আজ ও ভালো লাগে 
অধর বেঁকিয়ে লুকিয়ে হেঁসে যাওয়া, 
দুপুর বেলায় বই বুকে রেখে সুপ্ত 
অর্ধ খোলা ওই নয়নে 
মমতার নৌকা বেয়ে সুদূর ভেসে যাওয়া 
ভালো লাগে, প্রতিবেশীর সেই দুষ্টু 
মেয়ের আবদারে তোমার অনিচ্ছায় উঠে 
যাওয়া, ওই চন্দ্রাকার মুখে ভালোবাসার
সুরভিময় ঢেউর ভেসে যাওয়া 
খুব ভালো লাগে তোমায় চিরদিন 
মধুমালতীর সঙ্গে এই একান্ত ভাবে, 
শুভ্র নিশীথে পরিপূর্ণ  মিশে যাওয়া //
-- শান্তনু সান্যাল  

বুধবার, ১২ জানুয়ারী, ২০১১

ভারতীয় উপমহাদ্বীপ এবং ভাষা

লঘু প্রবন্ধ -
ভারতীয় উপমহাদ্বীপ এবং ভাষা
বিশ্বের সমস্ত ভাষা, উপভাষা, বিভিন্ন হলেও পরস্পর জড়িত রয়েছে,
আসলে এক বিস্তৃত বিশ্লেষনের ভাবনা দরকার, নিজের মাতৃ ভাষা
ছাড়া ও অন্য ভাষায় কী মাধুর্য্য রয়েছে সে জানার জন্য, সে ভাষার
প্রতি সম্মান, আগ্রহ জরুরি, অধিকাংশ সময়ে আমরা সে এড়িয়ে যাই /
সংক্ষিপ্ত ভাবে ভাষার বিশ্লেষণ, শ্রেণী তালিকা ও উদ্ভবের দৃষ্টি তে
নিম্ন রূপে বিশ্বের ভাষার বিভাজন করা হয় -
১ . সেমেটিক ভাষা - আরবী, আহারামিক, হিব্রু ( মধ্য পূর্ব এশিয়া )
২. ইনডো ইউরোপিয়ান - ইউরোপ, আমেরিকা, ভারত উপমহাদ্বীপ
             প্রায় সমস্ত ভারতীয় ভাষা এই শ্রেণী তে বিদ্যমান রয়েছে /
৩. দ্রাবিড়  - দক্ষিণ ভারতীয় ভাষা
৪. চিনা তিব্বতীয় - দক্ষিন পূর্ব, সকল মোঙ্গলজাতীয়
ইনডো ইউরোপিয়ান ভাষার শ্রেণী তে সংস্কৃত, বাংলার সঙ্গে উড়িয়া, অসমীয়া,
হিন্দী, গুজরাটি, মারাঠি, ভোজপুরি, মৈথলী, অবধি,ব্রজ,রাজস্থানী,
ছত্তিসগড়ি, পাঞ্জাবি, নেপালী, মগহী, মাগধী, উর্দু, কাশ্মিরি, সিন্ধি ইত্যাদি
জড়িত রয়েছে / এই সমস্ত ভাষার নিজস্ব মাধুর্য্য বৈশিষ্ট্য আছে /  এক উন্নত
সাহিত্য ও ইতিহাস রয়েছে / ভারতীয় উপমহাদ্বীপের অধিকাংশ ভাষার
জন্ম প্রাচীন শাস্ত্রীয় এবং গ্রাম্য ভাষার দ্বারা হয়েছে - অর্থ হলো আমাদের
সবাইর বাসার গোড়ায় রয়েছে তিনটি বিশেষ স্থম্ভ - সংস্কৃত, পালি, প্রাকৃত /
যদি পাঠক বৃন্দ হিন্দী জানেন তাহলে  তারা বুঝতে পারেন যে কত শব্দের মিল
 আছে বাংলার সঙ্গে, উদাহরণস্বরূপ - বলদ শব্দ রাজস্থানী ভাষায় ও আছে /
সেই প্রচলিত অর্থের সঙ্গে / পাঞ্জাবি তে কোল শব্দের প্রারূপ কোড হয়েছে,
পাঠনো - এই শব্দ ব্রজ, মারাঠি, ভাষায় সম অর্থে প্রয়োগ হয়ে থাকে,আসলে
সম্পূর্ণ উত্তর পূর্ব, উত্তর পশ্চিম, মধ্য, উত্তরাঞ্চলের বৃহদ ভাগের ভাষার ভিত্তি
একেই রয়েছে, কালান্তরে ভাষা গুলোর রূপ বদলিয়েছে, বিদেশী ভাষীদের সম্পর্কে
এসে ভারতীয় ভাষায় আরবি, ফারসি, ইংরেজি, ইত্যাদি ভাষার প্রভাব ও ঘটেছে /
উর্দু কে নিয়ে নানান ভ্রান্তি আমাদের মনে থাকে, আসলে উর্দুর ফারসি লিপির
জন্য অনেক জন ভাবে যে এটা বিদেশী ভাষা কিন্তু সে টা পূর্ণ মিথ্যা, উর্দু পূর্ণ
রূপে ভারতীয় ভাষা, শুধুই তপাথ রয়েছে শব্দকোষে যে হেতু এই ভাষাটি মুসলিম
দের মধ্যে প্রচিলিত, আরবি ও ফারসি ভাষার অত্রিক্রমন বিপুল সংখ্যায় রয়েছে /
শুধুই উর্দুতে আরবী ও ফারসি ভাষার প্রভাব দেখা যায় না, বাংলা, হিন্দী ও
অনন্য ভাষায় এই ভাষাদের স্পষ্ট প্রভাব পরিলক্ষিত হয় / আসলে ভারতীয় কোনো
ওভাষা পরিপূর্ণ রূপে বিশুদ্ধ নয় / সংস্কৃত আসলে বিশুদ্ধ ভাষা কিন্তু সে সীমাবদ্ধ
রয়ে গেল, পন্ডিতদের বর্চ্স্বের জন্য সংস্কৃত পিছিয়ে পড়ল, কিন্তু সে সমস্ত ভারতীয়
উপ মহাদ্বীপের ভাষার জননী, সংস্কৃত কে সরানো সহজ নয়, সংস্কৃতের প্রভাব, গ্রীক
লাটিন,রোমন ভাষায় বিস্তৃত ভাবে দেখা যায় / বিভিন্ন দেশে সংস্কৃতের শোধ ও অনু-
সন্ধান অবিরাম ভাবে চলছে / ভারতীয় দর্শন ও ধর্ম নিয়ে পূর্ণ বিশ্ব যেন চিন্তনশীল /
ইউরোপিয় দেশের প্রতি ভারতীয় সংস্কৃতি যেন মরু উদ্যান, তাহারা নাস্তিকবাদ এর
দুনিয়া থেকে বেরিয়ে হিন্দুত্ব কে গ্রহন ও আবিষ্কার করতে চায়, এটাই সংস্কৃত ভাষার
অবদান / আমাদের নিজের সাহিত্য সংস্কৃতি প্রতি গর্ভিত হওয়া উচিত / ভারতীয় -
বিভিন্ন ভাষা ভাষী আসলে এক, শুধুই ভারত কেন - বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও শ্রীলংকা,
এই ভাষার দৃষ্টিতে পৃথক নয়, তাহারা স্বাধীন ভূভাগ হলেও ভারতীয় সংস্কৃতি কে কোনো
ভাবেই বাদ দিতে পারবে না, তারা অপ্রত্ক্ষ্য রূপে আমাদের অভিন্ন অঙ্গ / এখানে ধর্ম
একান্ত নিজস্ব শ্রদ্ধা, কিন্তু সংস্কৃতি অনন্ত, সেটা সহজে পরিবর্তিত হয় না /
--- শান্তনু সান্যাল
 

কে তুমি রহস্যময়ী ভালবাসা

কে তুমি রহস্যময়ী ভালবাসা
নিঃশ্বাসের ভিতর হইতে তুমি গেছ
হৃদয়ের মাঝে ছড়িয়ে পারিজাতক,
 পরশে জীবন্ত মম মরু উদ্যান, তুমি
রচিয়েছ জাগ্রত, মৃত প্রণয় ইতিহাস,
রুধিরের সেই প্রাণ কণায় তুমি ভেসে
গেছ বিলম্বিত লয়ে, ত্বক ছিদ্রে ভরেছ
রজনীগন্ধার বিন্দু বিন্দু ইমন স্রোত,
অধরে দিয়ে গেছ মৌ প্লাবিত কবিতা
সজল দুই নয়নে জ্বলে দিয়েছ সান্ধ্য দীপ,
জীবনের তমস ঘন এই অরণ্য পথে
তুমি স্বপ্ননীল প্রজ্বলিত মধু নিহারিকা,
নিদ্রিত মম ভাবনায় তুমি যে নির্ঝরিণী
দিয়ে যাও প্রতিপল নব স্বপ্ন, নব কল্পনা
সেই অমৃত ধারায় ভেসে যাও কে তুমি
অভিসারিকা,হৃদয় মঞ্চের লিখে যাও
অনন্ত স্বরলিপি, কে তুমি হে সুনায়িকা,
তোমার ছোঁয়া লেগে হয়েছে জীবন
অভিশাপ মুক্ত, কে তুমি অশরীরী মায়া,
পাষাণে ও ফুটিয়েছে অসংখ্য কুসুম
মরুতে দিয়েছ যেন অদৃশ্য প্রতিচ্ছায়া,
কে তুমি রহস্যময়ী ভালবাসা !
--- শান্তনু সান্যাল




  

মঙ্গলবার, ১১ জানুয়ারী, ২০১১

যাত্রী

বিফলের সঙ্গেই ছিল সফলতার ছায়া 
হস্তলিখনের পার্শ্বে নিয়তির মায়া 
কপালের ওই কল্পনা লোকে গেছি সাজিয়ে 
ধুম্রকেতু, বহু ভবিষ্যবাণী,
জানার সত্তেও যে জীবন শুধুই 
ক্ষণ ভঙ্গুর, ছাড়ি নি কখনো ও 
স্বপ্ন দেখা, আজন্ম তুমি ভালবাসবে 
এমন  অনুবন্ধ কোনো দিনেই ছিল না 
হৃদয়ে তোমার কি যা আছে তুমি 
শুধুই জানো, আশীষ কিংবা অভিশাপ 
এই পান্থশালায় ভেদাভেদ কিছুই নাই 
কোন দিশায় প্রতিধ্বনিত নাম কির্তন 
কোথায় ভেসে যায় আজানের নৌকা 
ঘাটের চাতালে ঝরে যায় বকুল আপন মনে 
ওই উজানের প্রবাহে জীবনের গান
লিখে যায় শরতের পূর্ণ চাঁদ 
এই পথ কিছু দূরে গিয়ে, দুই ভাগে 
মুড়ে যায় বিপরীত গন্তব্যে 
দুঃখ সুখের মুহানায় জানি আছে 
এক গোপন মহা রহস্য, জল প্লাবিত ভূমিখণ্ড
অথৈ সাগরের সেই স্বপ্নীল লীলা 
ভাসিয়ে নিয়ে যায় অন্য ভুবনে 
পদচিহ্ন বিহীন সেই মহা তটরেখা 
চির মৌন হয় দেখে যায় 
অংশুমালির অস্ত উদয়ের খেলা 
ঋতু চক্র খুলে দ্বার নিজস্ব হাতে 
কখনো শতদল রক্তিম সকাল 
আবার কখনো গহন অরণ্যের মহাকাল 
রাত্রি, আমি তুমি সবাই ওই পথের 
নিরন্তর গতিমান যাত্রী //
--- শান্তনু সান্যাল 

সোমবার, ১০ জানুয়ারী, ২০১১

পূর্ণ কবিতা

পূর্ণ কবিতা
মরু প্রান্তরে কালবেলিয়ার সুরে
খেলে যায় বালুর ডেউ
জেগে রয় অর্ধ শশি সারা রাত
প্রেমের শিখা জ্বলে নিভে
আস্তে আস্তে প্রাচীর, দুর্গ, প্রাসাদ,
মধ্যযুগীন দেউল পেরিয়ে
লিখে যায় জোছনা মরমের কাহিনী
নাগফনি, কেতকীর ঝোপে
ঘুরে বেড়ায় উন্মাদিত ভাবনা
যেন মরুসর্পিনী খুঁজে যায়
পরশমণি, আলো ছায়ার এই  খেলায়
তুমি পদ্মিনী সম পূর্ণ কবিতা
আমি রাজপুত্র রূপে চেয়ে থাকি
তোমার শব্দ প্রতি শব্দে
ভালবাসার অক্ষয় গন্ধ ভরে যায়
কোন দৈবীয় নীল আলো,
এই মধুময় ক্ষণে
উড়ানসেতু গুলো যেন বেঁকে যায়
দিগভ্রমিত মৃগয়া সম,
সহসা জনারণ্য হয় উঠে মহাশুন্য
ওই রাজপথে, আমরা দুই জন
এবং অগনিত জোনাকির দীপ্তি
অমন সময় ভুলে যাই
ক্লান্তময় জীবনের সহস্ত্র তৃষিত কামনা //
-- শান্তনু সান্যাল

কালবেলিয়া - রাজস্থানের এক জাতি বিশেষ, তাহারা গান এবং গায়ন করে

রবিবার, ৯ জানুয়ারী, ২০১১

ত্রিকোণ

ত্রিকোণ 

চৈত্র মাসান্তে সেই নৈসর্গিক হ্রদের 
অনেকটা জলীয়ভূমি গেছে শুকিয়ে 
সুদূর নগ্ন, ধু ধু পাহাড়ের সীমান্তে 
মরিচিকা সম রয়েছে কিছু 
সজল ভালবাসার দিনগুলি,
 ওই মহুয়া বনের ছাই রং বন পথ 
হয় তো কিছু সুকনো 
কিংসুক কুসুম কিংবা 
কৃষ্ণ মৃগের করুন ডাক,
ভেসে যায় পল্লব বিহীন বিতানে, 
নল, দময়ন্তী ও রাজ হংস 
এই ত্রিকোনের মাঝে কোথায় যেন 
আছে, সেই  অলৌকিক বৃক্ষ 
 গাছের কাণ্ডতে লিখিত রয়েছে 
প্রণয়ীদের অজ্ঞাত নাম 
আদিবাসীরা বলে, গ্রীষ্ম কালে 
দাবানলের তাপে শাখা প্রশাখায় নাকি 
অসংখ্য ফুল ফুটে রয় 
কিন্তু সেই দৃশ্য সবাই দেখতে পায় না 
শুনেছি, ভরা পূর্নিমা রাতে 
যুগল অগ্নিস্নান করলে, সেই দুর্লভ 
প্রসূন দেহে প্রণয়ের সুধা ঢালে 
সে যে এক স্বর্ন খনির শুদ্ধিকরণের প্রক্রিয়া 
জানি না কত জন এই ব্রত অঙ্গীকার করে // 
-- শান্তনু সান্যাল 

শনিবার, ৮ জানুয়ারী, ২০১১

কলকাতা ডায়রি

কলকাতা ডায়রি
পুরনো বইর দোকানে খুঁজতে গিয়ে
ছিলাম, জীবাশ্ম শাস্ত্রের নামকরা
লেখকের বই, হয় তো রাশিয়ান কিংবা
নার্ভেজিয়ান, তুমি ই সেধে বললে
পাষানের শাস্ত্রে কী ভালবাসার আমেথিস্ট
ও থাকে না কী ! আমি মুখ ন দেখে ই
বললাম, সে তো জানি না -
তোমার অপরচিত সেই প্রশ্নময়ী আলাপ
ভূগর্ভ শাস্ত্রের পরিভাষা দারুন ভাবে
বদলিয়ে, দিয়ে গেছে যেন -
বিস্তৃত এক অনুসন্ধানের পথ,
ওই এক পশলা বৃষ্টির মাঝে, গল্পের
মধ্যে কলেজ স্ট্রীট হইতে বেথুন
কবে আমরা পৌঁছিয়ে গেছি মনে নাই,
আমেথিস্ট র বাংলা অনুবাদ সেই
আদ্র ভাবসে নিশীথে চেয়ে ছিলাম করতে,
পারি নি, জীবনের জাদুঘরে  সব কিছু ই
উপলব্ধ থাকে, জরুরি নয়
---- শান্তনু সান্যাল

অনেক দিনের পরে

অনেক দিনের পরে তুই আসলি
ভালই লাগছে, ত্রিস কী চল্লিশ বছরের পরে
আজকাল জানিস অনেক কিছু গুলিয়ে যাই
এই চশমাটার কী যে আবদার বুঝি না
মাঝে মাঝে আবছা
আবার অনেক সময় উজ্জল হয় উঠে
আবার দেখা হবে  ভাবতেই পারি নি
যাক, আর বল- কোথায় যে বসবি
জীবন আর এই তক্তপোষ, বেশ মিল না
একটু সাবধানে যেন বসিস
এই লাটুবাবু লেনের ঠিকানা ত কেউ ই জানে না
খুঁজতে নিশ্চই কষ্ট হয়েছে
এমনিতে খুব একটা কেউ আসে না
আসবে ও বা কেন, এই অন্ধ গলি তে
ভাড়া র  ঘরে, স্মৃতিগুলো কবে যে মরে গেছে
সবাই তোকে অবশ্যই অবাক চোখে দেখেছে
বলিস নি ত যে ত্তুই আমার এক কালের
বন্ধু, তথাকথিত বিদ্রোহী বন্ধু
যাক গে, বল- ওই মুম্বাই  থেকে এত দূরে
ভালই ত আছিস নাম আছে সুখ্যাতি ও কম নয়
প্রতিবেশী বাড়ির টিভি তে প্রায় তোর মুখ দেখি
ভালই লাগে, সবাই তোকে ভালবাসে
জানিস সেই যে তুই হটাত নিরুদেশ্য হলি
আমি সে দিন খুবই দুখিত ছিলাম
আমরা নিম্নবিত্তীয়, জামিন পাই নি
কাচা সেই বয়সে মনে হয়ে ছিল যে তুই
বিশ্বাসঘাতকতা করেছিস
কিন্তু আজ ভাবি ভালই করেছিস
বাঁচিয়ে নিলি গোটা কুটুম্ব কে
আমি জানতে চাই না তোর অকস্মাত
আসার কারণ -
কিন্তু তোর কিছু বিদ্রোহী কবিতা, উপন্যাস
প্রবন্ধ আমি এখনো সংগ্রহ করে রেখেছি
ওই উই ধরা কাঠের বাক্সের ভিতরে
নিয়ে যা হয় তো সিনেমার জন্য ভালো প্লট হবে
আর বল কী বা দিতে পারি, তোর জিনিষ তুই নিয়ে
যা, আমি না অতীত নিয়ে বাঁচতে চাই না /
--- শান্তনু সান্যাল

শুক্রবার, ৭ জানুয়ারী, ২০১১

কখনো কখনো

কখনো কখনো
বিরহ মিলনের বাহিরে ও আছে
সে এক অপ্রকাশিত হারানো কবির
পান্ডুলিপি, শব্দগুলো নিজেরাই
যেন খেলে যায় লুকোচুরি
কাঁচের সেই পারদর্শী ঘরে
মনের রঙ্গীন মাছেরাও বুঝি
অনেক সময় খেলে কানামাছি,
ভালবাসা ভেসে উঠে স্তরে স্তরে
যখন কোনো পরিচিত স্পর্শ
ছুঁয়ে যায় বাহ্য আস্তরণে
ব্যথার ফেনপুঞ্জ সরে যায়
আস্তে আস্তে সমুদ্র সৈকতে
সূর্যের ক্ষীণ আলো ভরে যায় স্বপ্ন
মধুর,এমন সময় আমি ভুলে যাই তোমারে
না, ভালবাসার ঢেউ কী শুধুই
তোমার জন্য, মনে পড়ে যায় 
কত অশ্রুময় মুখ চেয়ে রয়েছে যে আমায়
আশার হাত বাড়িয়ে, সেই মুহুর্তে
মন তুলে দিতে চায় যা কিছু হৃদয়ের
খুশি ও রং তাদের হাতে,
আঁকতে চায় জীবনমুখী অনুরাগের
কিছু অপূর্ণ ছবি, গড়ে দিতে চায়
কিছু খেলনা, আমি ভুলে যাই সব কিছু
এমন সময়ে ------
---- শান্তনু সান্যাল
  

বৃহস্পতিবার, ৬ জানুয়ারী, ২০১১

সে কী যে মায়া

 সে কী যে মায়া বুঝি নি আজ ও 
যেন অরণ্য নদীর বালু চরে 
খনন করে  যাই দিবস রজনী 
অঞ্জলি ভরা  তোমার ভালবাসা 
উঠে আসে জলের সেই ক্ষুদ্র 
রেনু স্রোতে, সেই দেখে  তুমি 
হেসে যাও শিশু সুলভ হাসি
আমি বারে বারে গর্তের গভীরতায় 
খসে যাওয়া বালু গুলো উপরে 
আনতে চাই, আর চেয়ে দেখি তোমার 
শ্যামবর্ণ মুখের দীপ্তি 
তুমি কখনো চেয়ে রয়েছে 
আমার বালু মাখা বুকের দিগে 
আবার মাঝে মাঝে নিমগ্ন চোখে 
এক দৃষ্ট হেরিয়ে চলেছ 
পাহাড়ের গায়ে সূর্যাস্ত 
সেই জামুনি সন্ধ্যার আগমনে 
তোমার অনেক কাছে বসে যাওয়া 
আমায় মন্ত্রমুগ্ধ করে যায় 
বালুর বক্ষে সজল প্রতিবিম্ব তোমার 
আমি আবিষ্কার করে যাই 
তুমি বল কী  সুন্দর লাগছে চাঁদ 
তোমার নির্মিত এই ছোট্ট ঝিলে, অদ্ভুত 
কই চাঁদ কৃষ্ণ পক্ষে 
নিজের প্রতিচ্ছবি চিন না আমি বলি 
তুমি শুধুই হেসে যাও 
জল প্রপাতের বিন্দু সম ছড়িয়ে 
বহু রঙ্গীয় জাদু 
এমন সময় জীবনের ক্লান্ত বেলা 
হয় উঠে মধুর হইতে মধুরতম //
--- শান্তনু সান্যাল  
  

বুধবার, ৫ জানুয়ারী, ২০১১

কমলা রং বিহান

কমলা রং বিহান 

  জানালার পারে মধুমাস
চেয়ে দেখি কমলারং বিহান 

পলাশের গায়ে সাজিয়ে গেছে
 কে যেন রঙ্গীন কবিতা গুচ্ছ,
উঁকি দিয়ে যায় কাঠ বেড়ালীর 
দুই চঞ্চল চোখে কার
 প্রণয়ের সুপ্ত অভিলাষ, 
ভরে যায় অন্তঃকরনে
 স্বপ্নময় অভিসার, 
সুদূর সাল সাগুন বনে 
কুহুক উঠে অজানা কোন পাখির,
 মনে হয় কে যেন ডেকে যায় মধু নাম,
আমি বিহ্বল হৃদয়ে সহসা 
খুলে যাই মুখ্য দ্বার, 
দেখি তুমি সদ্য প্রস্ফুটিত
 অনাম ফুলের দেহে
 ঘুমিয়ে রয়েছে এখনো,
আমি চাই সূর্য্য যেন ঢেকে যায়
 আবার সঘন মেঘের চাদরে,
নীলাম্বরী অন্তরীক্ষে দেখি
 দূর দূর মেঘের কোনো সাড়া নাই,
নিসর্গ জেগে উঠে বুকে নিয়ে অজস্র ভালবাসা,
 তোমার পরশে মধুমাস ছড়িয়ে
 গেছে মায়াবী বন্য সুরুভি দিগ দিগন্তে //
--- শান্তনু সান্যাল

মঙ্গলবার, ৪ জানুয়ারী, ২০১১

দড়িতে ঝুলানো স্বপ্ন গুলো

দড়িতে ঝুলানো স্বপ্ন গুলো 
 
অলিন্দ পেরিয়ে প্রত্যুষ কিরণ দিয়ে গেছে
 
তোমার অভিনব কবিতা 

খবরের কাগজ ভেবেছে সবাই, 

আধ ভাঙা কাঠের চেয়ারে আমি বসে
 
থাকি বারান্দার এক শেষে,

বিগত সাঁঝের তোমার গায়ের সেই
 
পরিচিত, অনুরাগী ঘামের গন্ধ 

জড়িয়ে, পড়ে যাই তোমার নয়নের
 
নিরব সাঙ্কেতিক লিপির অর্থ,

কে যেন শুধিয়ে যায় শাল গায়ে দিতে,

সেই ডাহুক ডাকে তোমার নির্বাক
 
মুখাকৃতি আস্তে আস্তে মনিপ্লান্টের
 
লিক লিক লতায়ে যেন সবুজ আভা
 
ভরে যায়, আর যেন শীতের আভাস
 
কেটে যায়, ব্রিটিশ যুগের বারান্দার
  
রেলিঙে হাত রেখে,আমি চেয়ে দেখি 

আকাশে, তোমার কবিতার শব্দ গুলো
 
ঝরে যায় উত্তর কলকাতায়, সোনালী
 
কৃষ্ণচুড়ার সেই বর্ষণে তুমি আছ যেন
 
আমার হাত ধরে, আর বারে বারে
 
বলে চলেছ একই কথা যে তুমি 

শুধুই একমাত্র আমায় ভালোবাসো,
 
এই ভাবে কত ক্ষণ যে দাড়িয়ে আছি 

আমি নিজেই জানি না, পার্শ্বের 

ডাকাডাকির মাঝে আমি দড়িতে 

ঝুলানো স্বপ্নগুলো নামিয়ে বলি -

যাই মা --

--- শান্তনু সান্যাল 

সোমবার, ৩ জানুয়ারী, ২০১১

মাটির প্রদীপ

মাটির প্রদীপ 
অবশেষে মেঘেরাও বিমুখের পথ নিল 
কিছু ক্ষণ তোমার সমীপে ছিল বৃষ্টিছায়ার 
সংকুচিত ভূভাগ, দুপুরের অলস ভরা 
রোদ আবার হেলান দিয়ে রয়েছে,
আধ নুয়া সেই খেজুর গাছের গায়ে 
কিছু আলো ছায়ার মাঝে স্বপ্ন উঁকি 
দিতে চায় সবুজ সেই মৃত পুকুরের পারে,
দূর বহু দূর রেলের  ধড়ধড় শব্দে
উড়ে যায় চড়ুই পাখির ঝাক, যেন
 মৌন মিলনের ভাষা, গেছে ছড়িয়ে 
সাঁঝের কাঁথায় প্রীতির পুরনো গন্ধ,
জীবনের গ্রীষ্মে হটাত যেন প্রথম 
আষাড়ের বৃষ্টি, তোমার অপ্রত্যাশিত 
 গায়ে হাত ছুঁয়ে বলা, যে তুমি দিব্যি 
নিয়ে বলছ - তুমি শুধুই আমায় -
ভালোবাসো, আর দেখছ অমন ভাবে 
চার দিগে যে কেউ শুনে তো নেই নি,
ওই নিরিবিলি তে আমিও চেয়ে দেখি 
আসেপাসে কে বা আছে, সেই লমহায়
তুমি মাছ রাঙ্গা সম উড়ে গেছ -- 
দেউলের তুলসী তলায় মাটির প্রদীপ, 
সলতের কেঁপে যাওয়া আর আমার 
হৃদয়ের সমীকরণে তুমি হয় উঠ 
মৃদু বৈশাখী ঝড়, আমি জেগে থাকি 
নিভে যাওয়া সেই প্রদীপের রিক্ত নিঃশ্বাসে
আগামী সাঁঝের পথ চেয়ে ---
--- শান্তনু সান্যাল