সোমবার, ৩ জানুয়ারী, ২০১১

মাটির প্রদীপ

মাটির প্রদীপ 
অবশেষে মেঘেরাও বিমুখের পথ নিল 
কিছু ক্ষণ তোমার সমীপে ছিল বৃষ্টিছায়ার 
সংকুচিত ভূভাগ, দুপুরের অলস ভরা 
রোদ আবার হেলান দিয়ে রয়েছে,
আধ নুয়া সেই খেজুর গাছের গায়ে 
কিছু আলো ছায়ার মাঝে স্বপ্ন উঁকি 
দিতে চায় সবুজ সেই মৃত পুকুরের পারে,
দূর বহু দূর রেলের  ধড়ধড় শব্দে
উড়ে যায় চড়ুই পাখির ঝাক, যেন
 মৌন মিলনের ভাষা, গেছে ছড়িয়ে 
সাঁঝের কাঁথায় প্রীতির পুরনো গন্ধ,
জীবনের গ্রীষ্মে হটাত যেন প্রথম 
আষাড়ের বৃষ্টি, তোমার অপ্রত্যাশিত 
 গায়ে হাত ছুঁয়ে বলা, যে তুমি দিব্যি 
নিয়ে বলছ - তুমি শুধুই আমায় -
ভালোবাসো, আর দেখছ অমন ভাবে 
চার দিগে যে কেউ শুনে তো নেই নি,
ওই নিরিবিলি তে আমিও চেয়ে দেখি 
আসেপাসে কে বা আছে, সেই লমহায়
তুমি মাছ রাঙ্গা সম উড়ে গেছ -- 
দেউলের তুলসী তলায় মাটির প্রদীপ, 
সলতের কেঁপে যাওয়া আর আমার 
হৃদয়ের সমীকরণে তুমি হয় উঠ 
মৃদু বৈশাখী ঝড়, আমি জেগে থাকি 
নিভে যাওয়া সেই প্রদীপের রিক্ত নিঃশ্বাসে
আগামী সাঁঝের পথ চেয়ে ---
--- শান্তনু সান্যাল   

অর্ধ নিঃশ্বাস

অর্ধ নিঃশ্বাস 
কত কিছু বদলিয়ে গেছে 
তবু মাঝে মধ্যে 
রূপবাণী, মালঞ্চ ভেসে উঠে 
সহজে মিছিলের ভিড়ে 
পাঁচ মাথার মোড়ে যেন তুমি 
আজ ও রয়েছে পথ চেয়ে 
ওই সরু ভুরুর মিলন বিন্দুতে 
ছিল মরুন পূর্ণিমা চাঁদ  
শ্লোগান লিখতে গিয়ে তুমি বাধা 
দিয়ে ছিলে, কবি নিষ্ঠুর হয় না 
এই ভাবে ক্রুর শব্দে তোমার 
কচি আঙ্গুল টি ডুবি ও না 
সে দিন আমি বুঝি নি তোমার ভীরু 
মনোভাব, লিখে গেছি 
রক্তে ভেজা  ক্রান্তির কাব্য খানি 
আজ পড়ন্ত বেলায় ভাবি 
তুমি ঠিক ই বলে ছিলে 
উধ্বস্ত জীবনে আমি রয়ে গেছি 
একাকী 
দেয়ালের ওই কাঁচা হাতের লেখা গুলো 
কবে যে মিটে গেছে কেউ তা জানে না 
যারা দিয়ে ছিল কলম কিংবা ব্রাশ হাতে 
তারাই হয় ত মিটিয়ে গেছে স্বপ্ন 
ওই পুরনো ক্যানভাস বুকে জড়িয়ে 
ঘুরেছি সারাটা জীবন 
এই দশ বাই দশের ঘরে আর তো কেউ 
আসে না, আমি রয়ে গেছি 
অতীতের পৃষ্ঠে 
শুধুই এক অর্ধ নিঃশ্বাস  হয়ে /
---- শান্তনু সান্যাল  

অমরত্ব প্রাপ্তির সন্ধানে

ছায়াময়ী ধরাতলে ঘনীভূত 

কিছু মৃগজল কিংবা স্নিগ্ধ সকাল,

তোমার উজাড় করে উন্মুক্ত চাওয়া 

উদ্বেলিত করে যায় মনের বন্ধ্যা ভূমি 

ওই নয়নের তিলের মায়া

ঘনিয়ে আনে রাত্রি নিবিড়

ভুলে যাই ক্লান্ত দাহিত এই জীবন  

যেন কোনো এক অনন্য বসুন্ধরা 

অকল্পনীয় মহাদ্বীপ 

ভেসে যায় নীল হৃদির লহরে 

দূর অনেক দূরে নিয়ে যায় আপন করে 

কাছে আলতো করে জড়িয়ে বলে রয় 

ওই দেখো চাঁদের আলোয় তোমার 

কবিতায় প্রাণ জেগে উঠেছে 

শব্দগুলো ডানা মেলে উড়ে যেতে চায় 

সমবেদনার গায়ে নিশি অশ্রু ঢেলেছে 

ছন্দের গভীরতা, অর্থের গহনতা

নিয়ে নতুন প্রেমের পরিভাষা গড়েছে

আম্মি সম্মোহিত হেঁটে যাই বালুকা বেলায়

ঝিনুকের বক্ষে দেখি তোমার নয়ন খানি

ক্রমানুগত যেন মুক্তায় পরীনিত হয়

চলেছে, আমি নির্বিবাক চেয়ে রই

তোমার অপ্রতিম রশ্মি প্রবাহিত সে রূপ

সন্ধি ক্ষনে উত্সর্গ করি দেহ প্রাণ

পরিপূর্ণ ভাবে অমরত্ব প্রাপ্তির সন্ধানে /

-- শান্তনু সান্যাল