শনিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০১১


পুংজাতীয় পুষ্প 

তার স্থিতিমাপে আমার অস্তিত্ব যেন ছিল 
এক দ্যুত খেলা, সে খেলে গেছে 
সহজ ভাবে উঠিয়ে কখনো
সৈকতের ফেনা, আবার 
অনেক সময় ফেলে 
দিয়েছে ভাঙা
শম্বুকের
খোল ভেবে দুঃস্বপ্নের কিছু মর্মস্পর্শী মুহূর্ত,
ওই বিক্ষিপ্ত শ্রাবণের সাঁঝে যখন 
ইন্দ্রধনু মচকিয়ে গেল ভেঙে
রং ছড়িয়ে একাকার,
সেই প্রলোভনীয় 
ক্ষণে, তার
দুর্বোধ্য ভালবাসা করেছে আমায় প্রজ্বলনের 
শিখা, দাহের গভীরতায় খুঁজে পাই 
নি মন নিষ্ক্রমণের পথ, তার 
বহু কুঞ্চিত আবেগের 
গিঁটে ছিল অগ্নি
গহ্বর,
সক্রিয় মায়াবী গ্রন্থী, জীবন্ত আগ্নেয়গিরি,
সেই গহন নিঃশ্বাসে আমি করেছি
আত্মসাত তার প্রগাঢ়
অভিলাষ, বুকের
মাঝে দিয়েছি
আশ্রয়,
হয়ে উঠেছি ক্রমশঃ দ্রবীভূত পূর্ণ পুরুষ,
পাষাণী রুক্ষতা, কালান্তরে হয় 
উঠবে মনে করি এক দিন,
পুংজাতীয় কোনো 
বন্য কুসুম. 

-- শান্তনু সান্যাল
http://sanyalsplanet.blogspot.com/
PAINTING BY EDWARD MUNCH 

বৃহস্পতিবার, ২৭ অক্টোবর, ২০১১

অগ্নিকোণের ভালবাসা

সৃষ্টির সেই খমধ্য বিন্দুর খুব নিকট 
যখন সজল বারিদ যায় ছুঁয়ে 
অন্তর্মন, আমি রাখি 
জ্বলন্ত অধর 
তার 
গলবন্ধ বুকের সন্ধিস্থানে, পরিত্রাণের
আশায়, তাপদগ্ধ ঊষর ভূমি 
ভেসে উঠে বহু লুপ্ত চিড় 
নিয়ে, হটাত 
বসুধার 
দেহে, এমন ক্ষণে মন চায় হয় যেতে 
মুষলধার বৃষ্টি, অবিরাম, 
একরাশ শুধুই ঝরে 
যাওয়া, যেন 
ক্ষিপ্ত 
অভিলাষ, অগ্নিমুখে কৃতিম সরসীর 
সৃজন, আগ্নেয়গিরির অন্তরে 
যাওয়া, ভস্মীকরণের 
আবেশ, সমন্বয়ের 
তীব্র আবেগ, 
হৃদয়ের 
অমত্র্য রূপান্তর, এমন সময় জীবন 
চায় তার অনাবৃত প্রণয়ের 
স্পৃহা, পূর্ণ উজ্জ্বলমুখী 
অর্চির সৌন্দর্য্য,
উন্মুক্ত রুপি 
সমর্পণ,
যেন এক দর্পণের মাঝে অন্য আরশির 
বহুমুখী প্রতিফলন, বিশুদ্ধ মনের 
গন্ধে সিক্ত জীবনের স্বপ্নিল 
পাপড়ি, দেহের গভীরে 
হতে প্রেমের বাহির 
আসা, দিব্য 
আলোর 
উদ্ভাসন - - - 

--- শান্তনু সান্যাল
 

বুধবার, ২৬ অক্টোবর, ২০১১


আলোর আড়ালে 

আলোর উত্সবে, মনে পড়ে
আঁধারের কিছু চেনা 
মুখ, চেয়ে আছে 
যেন আজ ও 
ঝিলমিল আকাশপানে, 
ফুলঝুরির ছুটন্ত 
ঝিকিমিকির মাঝে কিছু 
জোনাকির কোমল
পালক, লুটিয়ে আছে পথের 
দুই ধারে, আতশবাজির 
জ্বলিত অগ্নিশিখার 
তাপে ঝরে চলেছে অর্ধ 
উন্মেষিত কুঁড়ির বহু গুচ্ছ,
নেকড়া সংগ্রহকারী 
যেন আমার মন খুঁজে কিছু 
অবিস্ফোরিত স্বপ্ন,
অলিন্দের আকাশদীপ যদি 
দিত, কিছু আলেয়া 
পথের শিশু যেন ভাবনা,
একদৃষ্ট চেয়ে রয়েছে 
উচ্চ তোরণের মণি মালা,
ভেঙে ছড়িয়ে যেত 
অপ্রত্যাশিত রূপে নিজের 
ভাগের কিছু আলোক 
বিন্দু, কিছু খুশির মুহূর্ত.

-- শান্তনু সান্যাল



  

মঙ্গলবার, ২৫ অক্টোবর, ২০১১

গোঙানির রহস্য

সেই শ্রাবণের কোন এক রাত্রি, সাবেকী
আমলের ওই বাড়ির কাছাকাছি,
উত্তর কলকাতার সেই ঘিঞ্জি
গলির মোড়ে, সত্যি সে
দাড়িয়ে ছিল, তখন
বৃষ্টি গেছে অল্প
বিরতির
জন্য,
আটপৌরে ভাষায়, পরিষ্কার ভাবে সে -
তার মনের গ্রন্থী খুলে বললে," তুমি
জানো প্রেম কি হয় " না, এস
ভিতরে এস, ভেজানো
দরজা ঠেলে, কম
ভোল্টেজের
বাল্ব
জ্বালিয়ে, ওই ধোঁয়াটে ঘরে, ভাঙা চেয়ার
টেনে সে বসতে বলল, পাসের রুমে
গোঙানির শব্দ ক্রমশঃ মুখর,
আমি থ হয়ে চেয়ে রয়েছি
বর্ণহীন দেয়ালের
অপূর্ণ ছবি
হয় ত
শিল্পী আনমনা ভাবে বাদ দিয়েছে, যেমন -
অনেক সময় শ্বেত কুষ্ঠ লুকোবার
জন্য ব্যথিত মন, সম্পূর্ণ
দেহের ত্বক পুড়িয়ে
দিতে চায়, সে
সাদা হোক
কিংবা
ছাই রং,আরশির গায়ে এক রঙিয় প্রতিবিম্ব
ভালো লাগে, গোঙানির তরঙ্গ উচ্চতর,
তার ভাবশুন্য আঁখির কোণে
কিসের ঝিলিক, বুঝে
উঠতে গিয়ে
দেখি,
রাত গড়িয়ে গেছে বহু দূরে, তাহলে উঠি -
ওই গোঙানির শব্দ এখন ভাটার
দেশে, খুঁজে হয় ত স্বপ্নের
ভাঙা ঝিনুক, শামুক
তার উদাস মুখে
এখন প্রেমের
ছায়া
কি না,জানি না, কিন্তু তার নিঃশব্দ চোখের 
কবিতা স্পষ্ট ভাবে বলে গেছে দীর্ঘ
কাহিনী, প্রেম ও মৃত্যুর মাঝের
সেই খালে সাঁকো হবার
প্রত্যাশা নিয়ে ফিরে
এসেছি বহুবার
একাকী.


-- শান্তনু সান্যাল 


সোমবার, ২৪ অক্টোবর, ২০১১


নীল শুন্যের আবেগ 

ওই উন্মত্ত পথের অন্ত ছিল না, ঘুরে চলেছে 
তন্তুময় জালে, বহুবিধ ভাঁজে, অনেক 
বিন্দুর নিজস্ব যেন রয়েছে অখণ্ড 
গ্রহ , উপগ্রহ  -এক প্রবাল 
প্রাচীরের বৃহৎ জমি , 
ওই চোখের 
তোরণ 
খুলে না বারংবার ,জীবনে এক  বা দুই বার, 
আবেগময় তরঙ্গ খুবই উপাদেয় , উঁচু 
নিচু লেখ যেন প্রাণ ভরা 
রজনীগন্ধা র বিক্ষিপ্ত 
সুবাস, জঙ্গলময় 
বুকের ভূদৃশ্য
 এবং
 জোছনাময় অধর ,রাত তখন  বিগলিত 
রুপালি বন্যা, দেহ ও আত্মার দিব্য
 মিশ্রণ, চরম আসক্তির সেই 
ক্ষিতিজ রেখায়, পরিপূর্ণ 
 নৈবদ্য , উন্মুক্ত 
সমর্পণ,
 নিশীথ বৃষ্টি ভরে চলেছে প্রণয়ের উপত্যকা, 
নবজাতক  ব্রততী  যেন  খুঁজে চলেছে 
কামনার উত্স, সৃজনের গর্ভ 
দ্বার, নিঃশ্বাস লযবদ্ধ 
ধরে রাখতে চায় 
পরমানন্দ,
বৃষ্টির 
উন্মান্দ তুঙ্গে , রাত্রি অশেষ , রাতজাগা 
আকাশগঙ্গা ঝিমিয়ে চলেছে নীল শুন্যে - 

-- শান্তনু সান্যাল  
http://sanyalsplanet.blogspot.com/

Merging Souls | Paintings by Rika Turel

রবিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০১১

অপর পার্শ্বের গন্তব্যস্থান

বিঁধিয়ে গেছে অন্তরতর তার ওই ভাবে 
উজাড় করে চাওয়া, চোখের তীরে 
দেখেছি যেন উঠে আসছে  
ডুবন্ত ময়ুরপঙ্খী 
নৌকা, 
অমন
তাকানির অর্থ, প্রাণপণে খুঁজেছি গ্রন্থের 
পাতায় পাতায়, হিসাবনিকাশের  
খাতায়, বন্ধ দেউলের দ্বারে 
উন্মুক্ত মনের জানালায়,
তার মুক কৌতুহলে 
ছিল জীবনের 
 সারাংশ,
সে যেন স্পষ্ট জানিয়ে গেছে সিঁড়ি ছাড়াও 
উপরে ওঠা যায়, স্বপ্ন ছোঁয়া যায়,
সুরুভিত বিহানের নাই কোন 
জাতি বিচার, সে ছড়ায় 
আলোর ঝরনা, 
সিক্ত করে 
মনের অন্ধকার, সেই আলোকিত আদ্রতায় 
দেখেছি তার অলৌকিক ইচ্ছাশক্তি 
প্রেরিত করে যায় অন্তর্মনের 
গভীরতা -ভীষণ ভাবে, 
উচ্চ তরঙ্গে যেন
ভিড়িয়ে 
চলেছে সে জীবনের উড়ন্ত পাল নৌকা -

-- শান্তনু সান্যাল
 


শনিবার, ২২ অক্টোবর, ২০১১


ভাসন্ত বাসা 
তার পরিতৃপ্তির আকাশ ছিল অপরিসীম 
দিগন্তের পরে মায়া বিম্বিত বলয়,
বহু পরিধির মাঝে আবেশের 
আবর্তন,আমার পৃথিবী 
যেন স্থির, চেয়ে 
রইলো শুধু 
তার সাধের মহা সমুদ্রের বিশালতা,সেই 
আলোড়নের কেন্দ্রে, মন খুঁজেছে
 প্রেমের মৃগজল,অন্তিকের 
পরিভাষা,ভাবনার 
শুচিতা,
তার প্রাণ ভরা হাসির মাঝে শুনেছি, কাচ
ভাঙার স্পষ্ট শব্দ, আসবের সঙ্গে 
অশ্রু বিন্দুর গড়িয়ে যাওয়া, 
মগ ডালের মচকানো 
আওয়াজ,
পুষ্প ঝরার নিঃশব্দ ফিসফিসানি, কিশলয় -
ডগার স্থির, শিশির কণার উদাস 
ভাবে, অরুনোদয়ের আগে   
শুকিয়ে যাওয়া,
ঝিলের 
বুকে এখন কুহেলীর খেলা, কচুরি পানার
ভিড়ে, অনুরাগী জকানা* খুঁজে 
চলেছে ভাসন্ত বাসা, মৌন
জলজ বলতে পারি নি 
তার হারানো 
ঠিকানা.

--- শান্তনু সান্যাল
* এক ধরনের তিতির পাখি
http://sanyalsplanet.blogspot.com/


শুক্রবার, ২১ অক্টোবর, ২০১১


সাঁতারের ঝাঁপ 

মধ্যযুগীন দেউলের ইট ক্ষয়িত দেয়ালে, 
আভিজাতের ছাপ নিয়ে গর্বিত 
হবার কিছুই ছিল না, 
বিগ্রহ বললে -
আভ্যন্তরিক সংস্কার ছাড়া গতি নাই, 
প্রাণ প্রতিষ্ঠার জন্য অর্ঘ্য, ধুপ 
দীপ, পুষ্প অবান্তর এই 
মুহুর্তে, চাই কিছু 
মুঠো চাউল,
ক্ষুধার -
জাতি বর্ণ নিয়ে বিচার কর তার পরে, 
মনের দেবালয়ে গহন আঁধার 
যুগ যুগান্তর ধরে, কোন 
গর্ভ গৃহে তুমি আছ 
অনঘ আসন 
পেতে, 
জীবনের প্রদীপ চায় উজ্জ্বল পারদর্শী আলো, 
পুরোহিতের বুকের আরশির বিম্ব 
পথ খুঁজে পায় না, দেখো 
গিয়ে ঘাটের সোপান -
হতে নামছে 
নদীর 
উলঙ্গ দেহে, মোক্ষ প্রাপ্তির মোহে, এতই 
সহজে মুক্তির পথের উপলব্ধি ?
অনর্থক ছিল যত সব 
সরঞ্জাম, গলা বন্ধ -
হাড় ধরে 
অন্তর 
বলে, চিরন্তন পথ সাঁতরিয়ে যাওয়া কঠিন.

-- শান্তনু সান্যাল 
http://sanyalsplanet.blogspot.com/

বৃহস্পতিবার, ২০ অক্টোবর, ২০১১


নদীর ধরাতলে 

অনবরত গতিশীল জীবনের কাহিনীবৃত্ত,
অভিমুখীন যেন নতুন দিগন্তের পথে,
নদীর এই রূপ অভিভূত করে 
যায় অভ্যন্তরীণ ভাবে,
তার হৃদয়ের আদ্র - 
ভূমি খেলে 
রোদ -
ছায়ার খেলা, দুই প্রান্তের হাসি কান্না -
জড়িয়ে বহে যায় সুদুর সাগরে,
কখনো মাঝির গানে খুঁজে 
উদ্গমের মূল বিন্দু 
আবার চায় 
বর্ষা -
রাতে ভেঙে সমস্ত কারা শিকল, প্লাবিত -
করে আসে মরুভূমির তপ্ত বসুধা,
প্রখর গ্রীষ্মে খুলে দিতে চায় 
যেন গোপন স্রোতের 
উপত্যকা, 
ঘাটের উদাসীন চোখের ভাষা বুঝতে চায় 
সে, ঢেউর রূপে ছুঁয়ে যায় বারম্বার 
সোপানের জগত, আত্মসাত 
করে বাসি ফুলের মালা,
উচ্ছিষ্ট প্রতিদানের 
নিয়তি নিয়ে 
বহে যায় মৌন অহর্নিশি সুদুর মুহানামুখী, 
লিখে যায়ে মর্মের বহু কাহিনী,
গাঙ্গ চিলের মন্ত্রণা শুনে 
চুপচাপ, মীনের 
অস্থিরতায় 
দেখে
 মৃত্যুর প্রতিবিম্ব, সে আনমনা ভাবে চেয়ে 
রয়, তীরের  ধুম্র বলয় উর্ধ্বকার 
উঠে চলেছে অন্তরিক্ষের 
পথে, যেন রহস্যের 
ধুমকেতু 
খুঁজছে হারানো বাসভূমি, চাইছে পারিবারিক 
পুনর্মিলন, কি জানে তার অভিলাষ 
কোনো দিন পরিপূর্ণতার 
বয়স পার করেও 
যাবে কি না ?

--- শান্তনু সান্যাল
http://sanyalsplanet.blogspot.com/


বুধবার, ১৯ অক্টোবর, ২০১১


শিশুবৎ জীবন 

উটকো ভাবনারা প্রায়ই ডানপিঠে হয় উঠে 
সে দিনের ই কথা ধর, মেঘলা আকাশে 
দেখতে চেয়েছিল আকাশগঙ্গার 
সম্মেলিনি, আদিখ্যেতা
ভাব নিয়ে দৌড়িয়ে 
যেতে চায় 
গঙ্গা ফড়িং ধরতে, ঝিনুকের রঙে,জীবনের 
ছবি আঁকতে, কত কি খোশখেয়াল,
অদ্ভুত অদ্ভুত কল্পনার পিঞ্জরে 
সাজিয়ে রাখতে চায়
ভাবের পাখি,
আপন - ভোলা মন নিয়ে খেলে ওই আগুনের 
খেলা, পা ঠুকে উড়িয়ে দিতে চায় 
ভাবনের ধুলা, তার এই খাম -
খেয়ালী অনেক সময় 
হালকা করে যায় 
হৃদয়ের 
বিসন্নতা, যত সব জ্বালা যন্ত্রণা নিমেষে যেন 
ধোঁয়ার মেঘ, বাউলের সুরে যেন 
ভেসে যায় জীবন,পুষ্করিণী
পাড় হয়ে, বাবুইর 
নীড় ছুঁয়ে 
ওই সুদূরের বউ কথা কও পাখির প্রান্তরে,
জানি বর্ষা এখনো বহু দূর, কিন্তু 
বুকে শীতলতার আভাস,
নিমতলা ঘাট বন্ধু 
অনেক দূর, 
স্বপ্ন দেখতে শিকা লাগে কি,তাই বলি অগোছাল
জীবনে হাত দিও না,বেশ ভালই আছি,
কাটকুট করতে চেও না, আমায় 
এখন কিন্তু ভালোবেসো না, 
ফাঁপা পৃষ্ঠায় প্রেমের 
কবিতা লিখ না.

-- শান্তনু সান্যাল
http://sanyalsplanet.blogspot.com/


মঙ্গলবার, ১৮ অক্টোবর, ২০১১


অবিরামি জীবন 

অশ্বত্থামার পাঁজর ছিল নিয়তির খেলা 
বহুবার উজাড় করে গেছে যুগের 
পরে যুগ, ঘূর্ণিঝড়ের  থাবা,
তত্সত্ত্বেত্ত জীবন 
অগ্রসর, 
তারা চাবুকের আওয়াজে করেছে -
নিলাম মনুষ্যত্ব, রচেছে বহু 
রক্তাক্ত ইতিহাস, 
লিখেছে 
নিজের স্বার্থের বিধি বিধান, দিয়েছে 
যা ইচ্ছে অন্তিম বিচার, পৃথিবীর 
বুকে গড়েছে হাহাকারের 
সাম্রাজ্য, তবু ও 
থামে নি
মুক্তি পথের যাত্রী, নামিয়ে ফেলেছে 
মহানতম রাজনের সিংহাসন 
রাস্তার ধুলায়, লুটিয়ে 
দিয়েছে বহু হিরক 
জড়িত
কিরিটের কুলীনতা, বিশ্ব বিজয়ের 
অহংকার, সেই সাবেকি কাল 
হতে অর্বাচীন জগতে,
অন্যায়ের 
বিরুদ্ধে মানুষের সেই জন্মগত প্রতিবাদ,
অবিরাম যেন বহে চলেছে গুপ্ত 
আগ্নেয় ধারা, সরিয়ে 
রেখেছে 
মহাপ্লাবনের কাল্পনিক কাহিনী, গ্রহের 
বিনাশের ভবিষ্যদ্বাণী, জীবনের 
প্রসার, পার করে গেছে  সর্ব 
মিথক, অঙ্কিত করেছে 
নতুন সংস্কৃতি ও 
সভ্যতা.

- শান্তনু সান্যাল
http://sanyalsplanet.blogspot.com/








কূল কিনারা 

হাসির আয়ু অল্প কিন্তু দিয়ে যায় অদৃশ্য 
অশ্রু আঁখির কোণে, সে দিন তাই 
হলো, কড়া নাড়ার শব্দ শুনে 
বিরক্তির ভাব নিয়ে 
ছেলে খুলতে 
গেছে 
দ্বার, না মুখ দেখে বলল, মাফ করবেন,
আবার ঠক ঠক, দরজা খুলতে 
না খুলতে, চিত্কার -
হতভাগা নিজের
মাকে চিনিস 
নে, ছেঁড়া জর্জর সেমিজে বৃদ্ধার হাঁপানি, 
জড়ো হলো হালদার গুষ্ঠী, যেন 
চার দিকে ত্রাহি ত্রাহি, আর 
বলিস নে, ওই নাগা 
বাবাদের যুদ্ধের 
কাহিনী,
পরান বাঁচাইয়া ফিরেছি তা দেখবি কেন,
শুধুই জানতে চাস তাদের কেস্সা,
বাসায় ফিরলাম দেখি নিজের 
পেটের পোলা বলে মাফ 
করবেন, ওই যে 
হা করে কি 
দেখছিস, ভূত ভাবছিস না কি, বৃদ্ধার 
ক্লান্ত মুখে কুম্ভ মেলার দাপট, 
ত্রিবেনির পবিত্র মাটির 
দাগ যেন এখন 
দেদীপ্যমান,
বড় ছেলের আবদার একটু বেশি, বললে -
সে জন্যই বারণ করেছিলাম যেও 
না, কারো কথা শুনলে ত,এই
চুপ কর হারামজাদা 
তোকে হাড়ে 
হাড়ে 
 চিনি, ট্রেনের ভাড়ার জন্য যত সব 
ন্যাকামি, আমি সব বুঝি,ন মাস
পেটে রেখেছি বুঝলি, যা  
ফুল কিনে আন দেখি 
যত সব বড় বড় 
কথা আমার 
পূজা দিতে হবে," কুম্ভের স্নানের পরে কি 
আবার স্নান করতে হয় নাকি "
ছেলে ফিসফিসিয়ে 
দরজার 
শিকলে হাত দিল, 
গঙ্গা পর্বের যেন কূল কিনারা নাই - - - -

-- শান্তনু সান্যাল

http://sanyalsplanet.blogspot.com/



সোমবার, ১৭ অক্টোবর, ২০১১


যা ইচ্ছে নাম দিও 

সে জিজ্ঞেস করে চলেছে আমায়, আমার ঠিকানা 
এই যে শুনুন, আপনি কি চিনেন ওই 
লিকলিকে মানুষ, মোটা চশমায় 
ঝুলন্ত ভাসা - ভাসা চোখ 
মাথায় টাক, কিছু 
লিখত ঠিকত, 
মনে হয় 
নামটি কি যেন, এই যে ভুলে যাওয়ার বেরামটি -
মন্ত্র মুগ্ধ চেয়ে আছি তার মুখে নিজের 
আত্মজীবনী, শুনেছি এককালে 
তিনি না কি জঙ্গল মহলে 
ঘুরে ঘুরে কি যেন 
জন জাগৃতি 
ঠাগ্রতি
করে যেতেন,  তাই না কি, তাহলে এখন কোথায়,
আমার প্রশ্নের সেঁকা জানি না কত দূর, 
ছুঁয়েছে তার মর্মের ত্বক, অল্প 
বিরামের পরে তিনি 
দেখি, আবার 
প্রস্তুত, 
এর  মধ্যে সাত টার উপনগরীয় লোকাল গেছে,
পার হয়ে কচুরি পানার জগত, কাঁপিয়ে 
ঝাঁপিয়ে সমস্ত বাগদি পাড়া হতে 
সাঁওতাল ভিটা, মহুয়া 
গাছের ছায়া, 
নালার 
গায়ে ভাঙা পুল, গাল চিপা সাঁঝ নেমেছে মনে হয় 
অরণ্যের পাংশু রঙ্গী ঝুলন্ত বুকে, আঁধার 
খুঁজে চাঁদের বিম্ব, রিক্ত হাঁড়ির
হাঁড়িয়া গেছে ফুরায়ে 
বহু দিন আগে,
এখন আমি থাকি গা ঢাকা, গোলাপী শীত যদি 
লাগে গায়ে, আমার যে শীতের ধাত, 
না ভাই, আমি চিনি না, হয় ত 
কখনো দেখেছি কিন্তু 
আপনি - - -আর 
জেনে কি বা 
হবে,  
ওই পাহাড়ের নিভানো আগুন, খুঁজি বর্ষার ক এক 
ফোঁটা জল, আমি কাহিনীর হারানো শীর্ষক 
খুঁজি উপসংহার, লেখকের নাম, 
যে করেছে আমায় স্বপ্নময়,
এখন নিজেই যেন সে 
নিখোঁজ - - - 

-- শান্তনু সান্যাল
http://sanyalsplanet.blogspot.com/




রবিবার, ১৬ অক্টোবর, ২০১১


রিক্ত জীবনের থলি 

কখনো কাঁচা ধানের গন্ধে, গোধুলির আকাশ 
বলে সে নাকি আখের সরু ডাঁটা, শীতের 
পথ চেয়ে আছে, বুকে নিয়ে 
স্যাঁতসেঁতে সুরুয়া,
পানসে -
নিরস স্বাদ, কি বা করা যায়, যদি সব কিছু 
হত কবিতার মতন, এই ফিকে সাঁঝের 
অসাড় ভাব, অনিচ্ছায় আনে রাত্রির 
মোহিনী রূপ, ওই পাসের পাঁচ 
তলার বাড়ি, উঠতে দিতে 
চায় না যেন শিশু 
চাঁদের আলো,
অলিন্দির সেই খণ্ডিত জোছনায়, ভুলিয়ে 
আনতে চায় মন, চন্দ্রমল্লিকার গন্ধ,  
পুরাতন ভালবাসার পরশ, 
অবুঝ চিত্রলিপি, নীল -
নদের  নৌকাবিহার,
তার চেয়ে ও 
না দেখার ভান, ভাঙিয়ে যায় কর্কশ কন্ঠের 
খোঁটা, স্বপ্নে কি পেট ভরে, বেরিয়ে আসে
 দীর্ঘ ফর্দ, বাস্তব ভূমি স্পষ্ট ভেসে 
উঠে, গলা পর্য্যন্ত দেখি জল -
রাশি, হৃদয় এমন সময় 
মধ্যম মার্গীয় 
সিদ্ধার্থ,
রাত ক্রমশঃ রিক্ত থলি, ভাবনা হাট মুখী,

---- শান্তনু সান্যাল

http://sanyalsplanet.blogspot.com/
PAINTING BY ASIT KUMAR SARKAR 

শনিবার, ১৫ অক্টোবর, ২০১১


সাময়িক আবেশ 

উলকি রং ছিল ফিকে উত্তরোত্তর গেছে ঝরে, 
অন্তর্নিহিত ভালবাসা চেয়েছে  আপ্রাণ
ধরে রাখতে তার আধিপত্য,
শিরায় শিরায় থেকেও 
সে দিয়ে গেছে 
ফাঁকি,
ওই আসক্তির  বন্ধনে বিস্মৃত স্বগুরুত্ব, এখন 
খুঁজে চলেছে বাস্তব ভস্মভূমি, তার নিগূঢ়
রূপের জাদুময় গভীরতা, ঠাহর 
করতে পারি নি হৃদয়, 
শুধুই স্পর্শের 
অনুভূতি, 
দেহের উচ্চতর অংশের অধরাঙ্কিত ভূভাগ,
এখন জ্বলিত অরণ্য শিখা, ঝলসিয়ে 
পড়ছে লোম, ত্বক, মাংসপেশী 
উলকি খুদিত সেই 
পলকা স্থলে 
প্রেমের 
নিলীন চিহ্ন, প্রায় অধুনালুপ্ত, নিস্পন্দ নেত্র 
চেয়ে আছে চাঁদের সঙ্কোচন, রাতের 
শেষে নিপতিত বন্য কুসুম,
গন্ধের অবসন্নতা, 
জীবনের 
সংপ্রশ্ন আঁকতে চায় দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভ, কিন্তু 
কোথায় যেন মন চায়, আবার উলকির
শাশ্বত রং,গভীরতম দংশ 
নবীন বোতলে যেন 
পুরাতন সোম 
রস, 
নেশার ঘোর কাল, যুগ, তর্কের বাহিরের জীব.

-- শান্তনু সান্যাল
http://sanyalsplanet.blogspot.com/


শুক্রবার, ১৪ অক্টোবর, ২০১১



জীবন তৃষ্ণা 

পরিত্যক্ত নদীর হ্রদ, গ্রীষ্ম উত্তাপে হয় উঠে 
প্রাণবন্ত, তৃষ্ণার্ত মৃগ পাল নিঃশব্দ 
পদক্ষেপে নামে জল কুম্ভের 
জগতে, অরণ্য এখন 
নিঝুম, হৃদয়ের 
স্পন্দনে, 
আতঙ্কের ঢেউ খেলে যায় ঐন্দ্রজালিক খেলা, 
শান্ত ঝিলের কম্পিত বুক শিহরিয়ে 
উঠে সহসা, পাতা ঝরার  শব্দে -
ও যেন জীবন, ঝুলে রয় 
শুন্যে, হাঁটু গভীর 
জল যেন 
অসহায় দৃষ্টি তে দেখে যায় আসন্ন ঘটনাক্রম,
মৃগ সারের সজল নয়নের ভাষা, কেও 
কি কোনো দিন জানতে চেয়েছে,
দুঃস্বপ্ন জড়ানো সেই 
বাঁচার প্রচণ্ড
ইচ্ছা, 
সে মৃত্যুর ভয় ভুলে যায় নিমেষে, সারংদল 
এবং শিকারীর লুকোচুরির এই খেলা 
চলে মধ্য নিশির শীর্ষে, অবিরাম, 
প্রাগৈতিহাসিক প্রবৃত্তি সহজে 
জেগে উঠে ব্যাপক ভাবে 
তিমিরাচ্ছন্ন মুহুর্তে,
কে বিজয়ী 
কে বা পরাজিত, বলার কিছুই নয় যদি 
জানার ইচ্ছে করে কোনো দিন 
চলে আসবে মহুয়া ঝরার 
মাসে, রক্ত রঞ্জিত 
ধরাতলে, 
খুঁজে যদি পাও হাড়, মাংস, হৃতপিন্ডের 
অবশেষ, নিঃশ্বাসের কিছু টুকরো,
স্বপ্নের বিছিন্ন পাতা, জীবনের 
ছড়ানো নিপীড়িত পাপড়ি,
ম্লানমুখী নিশি পুষ্পের 
গন্ধ, হারানো 
প্রতিবিম্বের এক মুঠো আলো, অশ্রুবিন্দু.

-- শান্তনু সান্যাল   
painting by - Phillippa-Cannan

বৃহস্পতিবার, ১৩ অক্টোবর, ২০১১


অন্তঃ করণের মৃত্যু  ঘটে নি  .

প্রচ্ছন্ন রূপে তার মাঝ রাতে, ঘুমন্ত দেহে
জড়িয়ে যাওয়া, দমকা বৃষ্টির 
ইশারা ছিল না, অবিকল 
ভাবে পরাশ্রয়ীর 
হবার 
প্রস্তুতি মাত্র ছিল, আমি বাধা দিতে পারি 
নি, খুলে দিয়েছি সহজে, মনের 
বন্ধ স্নায়ুর মার্গ, সে বহে 
গেছে প্রাণ বায়ুর 
সমান্তরাল,
বিমুক্ত, যেখানে ইচ্ছে ওখানে, করেছে 
দংশ, সেই দংশিত দাহ  অঞ্চলে 
ছড়িয়ে গেছে অতিরিক্ত 
বাসনার নিষ্ঠীবন, 
আরশির 
মুখ ভার, সে যে এক চরিত্রবান মানুষ 
হয় তো মোহাবিষ্ট রূপে আমায় 
দেখতে চায় না, সে চায় 
শুধুই নির্বস্ত্র 
বিশুদ্ধ 
রূপে, তার এই ধর্ষিত দখল করে যায় 
আত্ম মন্থন, ঝরন্ত মর্মঘাত জেগে 
উঠে, পূর্ণ চন্দ্র ভাস্যমান, 
জোছনার সেই 
অমত্র্য
ধারা পূর্ণ দেহে  ছড়ায় স্বয়ংশ্রদ্ধার 
শীতলতা, আমি নিজেকে 
তুলি নিজের হাতে 
কাচের মত
ঝন্ন করে ভাঙার আগে, অন্তঃ করণে
এখন হাসনুহানার গন্ধ 
একাকার.

-- শান্তনু সান্যাল
http://sanyalsplanet.blogspot.com/
     

বুধবার, ১২ অক্টোবর, ২০১১

উদ্ভাসিত হৃদয় 

অভিভূত করে যায় যেমন অদ্ভুত আলো,
মধ্য নিশির গগনে, সেই নক্ষত্রের
ঔজ্জ্বল্য ক্রমশঃ হয় উঠে 
স্তিমিত, নদীর ঢালুর 
পার্শ্বে 
গ্র্যানিট পাথরের পুরাতন দেউলে, মৌন
সান্ধ্য প্রার্থনা এখন মুখরিত, আহত 
হৃদয়, শোণিতলিপ্ত আত্মারা 
করে অন্তহীন বিলাপ,
মধ্যস্থিত
প্রবাহে সমতার স্বপ্ন, সমবেদনার অর্চনা,
বহে চলেছে উজানের কোন দূরবর্তী
মহাসাগরের বুকে, সুদুর এক 
অজ্ঞাত দ্বীপে ওই 
উদ্ভিদকূলে 
ভাবনারা গড়তে চায় নতুন বসবাস -
নতুন সংস্কৃতির বীজারোপন,
প্রেম, শান্তি, মানবতার 
আদ্র মাটি চেয়ে রয় 
প্রশান্ত আকাশের
অবুঝ মন,
নদীর দুই ধারে সারি সারি লোক একত্র 
কন্ঠে করে চলেছে উদঘোষ, চাইছে 
বাঁচার অধিকার, উদ্বর্তনের 
অন্তিম অভিমত, 
জীবনের 
সার্থকতা, পরিপূর্ণ মানবতার প্রসার.

-- শান্তনু সান্যাল
 http://sanyalsplanet.blogspot.com/
painting island by  Kerri Settle