বৃহস্পতিবার, ২৯ জুন, ২০২৩

বিস্মৃত কড়া নাড়ার শব্দ - -

রাতের সমস্ত যবনিকা একের পরে এক,
উঠে হলো শেষ, আকাশ গুটিয়ে
নিল আলোকিত শামিয়ানা,
সুদুর ছায়াময় দিগন্তে
দাঁড়িয়ে আছে
যেন
লজ্জাবতী সকাল, কিছু ক্ষণের নীরবতা,
তার পরেই জীবনের ম্যারাথন,
অলিন্দের গা ছুঁয়ে উপরে
উঠে চলেছে ''মর্নিং
গ্লোরির''
ওই সরু লতা, হাতে নিয়ে খবর কাগজ
তাকে দেখতে খুবই ভালো লাগে,
ঠিক যেন কোন এক নিরীহ
শিশু রোশনদানের
বাইরে দেখতে
চায় কিছু
উড়ন্ত পায়রার ঝাঁক, কিছু পথ ভোলা
হলদে প্রজাপতি ! কিছু পরিচিত
কিন্তু বিস্মৃত কড়া নাড়ার
শব্দ, খুঁজতে চায় মন
তোমার বিম্ব
নিজের
বুকের গভীরে, শিরোনামের ছাড়া আর
কিছুই পড়তে ভালো লাগে না  - -

* *
- শান্তনু সান্যাল
 

http://sanyalsplanet.blogspot.in/
sparrow song

বুধবার, ২৮ জুন, ২০২৩

জানি না কার মোহে - -

কার মোহে ধাবিত, জীবনের এই মায়া মৃগ !
খুঁজে নিজের ভিতরে নিজেরই 
প্রতিচ্ছায়া, কিসের জন্য 
এত যে পিপাসা, 
জানি না 
কোন 
মরুপ্রান্তরে আছে, সে ঘনীভূত মরিচিকা !
কেন উঠে সহসা বালুঝড়, সান্ধ্য 
আকাশে নির্বাপিত, সদ্য 
উদিত শুক্রতারা, 
পশ্চিমে গেছে 
বিলীনতার 
মুখে  , 
সব ভ্রমনকারীদল নিয়ে সঙ্গে হয় ত নীল 
আকাশের শামিয়ানা, নিবিড় এই 
তিমিরে তার প্রাণদায়িনী 
মৃদু স্মিতে আমি খুঁজি 
এক রাতের 
ঠিকানা, 
নভ বিহীন সৃষ্টির এই সংরচনায় হৃদয় ভরে 
আনতে চায়, তার চোখের আলো, 
অধরের অমিয় বিন্দু, বুকের
পবিত্র দহন, সৃজনের 
আলিঙ্গন, শ্বাসের 
মধু গন্ধকোষ,
মহা সমর্পণ,
সিক্ত মাটির দেহ ও অদৃশ্য কুম্ভকারের চাক !
এখন জীবনের আকৃতি খুবই লাজুক 
গড়ে চলেছে নিয়তির হাতে, 
কিন্তু তার প্রণয়ের 
আলতো হাতের 
পরশে, স্বপ্ন 
গুলো 
বারে বারে ফিরে আসে জানি না কার মোহে !

--- শান্তনু সান্যাল
http://sanyalsplanet.blogspot.com/
painting by - Stag In Moonlight by Linda Woodward 


মঙ্গলবার, ২৭ জুন, ২০২৩

বহু পুরাতন খোলস - -

কোনো এক শীতকালের ভাসমান অন্ধকারে,
যখন সূর্য প্রায় অর্ধ নিম্মজনের পথে,
তার উষ্ণ নিঃশ্বাসের ছোঁয়া,
জাগিয়ে ছিল বুকে, এক
অদ্ভুত স্বপ্নময়
উৎকন্ঠা, তার অস্পষ্ট চোখের তীরে খুঁজে -
পেয়ে ছিল এ জীবন, কিছু সরু গলির
হদিস, কিছু জোনাকিদের ঘোপ,
আর একে অপরের মধ্যে
নিখোঁজ হওয়ার
চোরাগলি,
কত দূর সে হাত ধরে হেঁটে ছিল, কত দূর
যে ছিল শূন্যে হাতড়ানো, বলা কঠিন,
কিছু দূর অব্দি, নিঃসন্দেহ ছিল
বুকের উপরে উরোগামী
আভাস ! আর সারা
দেহে অদৃশ্য
কম্পন,
যখন সন্ধ্যার আঁধার গড়িয়ে হলো গভীর
রাত্রি, তখন দেখি স্পৃহা হটাৎ উড়ন্ত
সরীসৃপ, উড়ে চলেছে আকাশ
পথে অনিয়ন্ত্রিত রূপে,
পৃথিবীর গায়ে
পড়ে আছে
বহু পুরাতন খোলস এলোমেলোভাবে, আর
চার দিকে এক অন্তহীন নীরবতা !

* *
- শান্তনু সান্যাল

  


http://sanyalsplanet.blogspot.in/
Still Life with Pink Rose by Jacqueline Gnott

সোমবার, ২৬ জুন, ২০২৩

অসমাপ্ত শূন্যতা - -

সজল নয়নে সে রেখে গেছে কিছু শেষ
প্রহরের অপরিভাষিত মৌন কথা,
কিছু সিক্ত অনুরাগের মর্ম
ব্যথা। সেই নিশান্তের
পরে আজও আমি
খুঁজে বেড়াই
কাঁচা
হলুদরঙ্গী বিহান। আজও মনে হয়ে সে
চেয়ে ছিল শুধুই, হারানো শৈশবের
কোনো এক মুহুর্তের খণ্ডিত
খুশির কণা, উড়ন্ত
কোনো গঙ্গা
ফড়িঙ্গের
কাচিক ডানা। জানি না কেনো, আর
সে ফিরি নি পুকুর পারে কোনো
দিন, ধীরে ধীরে ওই কচুরী -
পানার জগৎ গেছে
হারিয়ে, আর
গড়ে
উঠেছে জলাভূমির মাঝখানে বিরাট 
এক কংক্রিটের আবাসন, আজও
জীবন খুঁজে বেড়ায় এক
ফোঁটা শিশির কণা।
অবশ্যই সেই
সন্ধানটি
রয়ে যায় যথারীতি কালো কুয়াশার -
মাঝে কোথায় যেন নিরুদ্দেশ !
কিংবা আর আকাশের
বুকে জমে না
তুষার,
সব কিছুই মনে হয় যেন ক্রমশঃ খুব
ফাঁপা, এক অসমাপ্ত শূন্যতা - -
* *
- শান্তনু সান্যাল

রবিবার, ২৫ জুন, ২০২৩

নিখোঁজ নাবিকের আশায়

কাচিক মন নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম অনেক ক্ষণ,
যখন ভাঙলো তীরের মাটির স্তর, তখন 
দেখি নৌকো সরে গেছে বহু দূরে, 
মেঘেরা ছিল পরকীয় দেশী, 
কিছু সময় ছিল স্থির 
আকাশে, জাগিয়ে 
গেল অতৃপ্ত 
বাড়তি
তৃষা,
পারদর্শী পালকে লেখা ছিল মৌসুমের গান !
প্রবাসী প্রজাপতির ঝাঁক গেছে উড়ে,
উদাসীন উপবনে এখন পাতা 
ঝরার দিন, কুঞ্চিত নদীর 
বুকে পাষাণের স্তুপ,
জীবনের এই 
প্রান্তে 
রাত দীর্ঘ, আলগা, অগীত, তটহারা সংকীর্ণ 
প্রবাহ, তবু ও মনের ভাবনা মরতে 
চায় না, চেয়ে রয় তপ্ত গগনের 
পানে, করে বর্ষার আহ্বান
গাহে নিরদের মল্হার 
গান, জ্বালিয়ে 
রাখে  
আকাশের দীপমালা, সময়ের উধাত্ত বহিত্র,যদি 
ফিরে আসে এক দিন - - - 

-- শান্তনু সান্যাল
Storm ravaged ship Painting by Vladimir Bibikov 
  

শনিবার, ২৪ জুন, ২০২৩

শেষ মুহূর্তে - -

সুদুর ভূমধ্য সাগর হতে, সিন্ধু নদীর
তীর পর্যন্ত, তার বিজয় পতাকার
ছিল আলোড়ন, তবুও ওই
বিশ্ববিজেতা ছিল
নিজের চোখে
খুবই
নিরুপায়, সহজ নয় মানুষের হৃদয়ে
একছত্র রাজ করা, গায়ের জোরে
ভূ ভাগের দখল খুবই সরল,
নিয়তির আগে সমস্ত
আকলন ছিল
বৃথা !
শেষ মুহূর্তে কিছুই কাজে লাগে না - -
ওই সুবর্ণ মুকুট তখন অর্থহীন,
কাঞ্চন দেহের প্রয়োজন
শুধুই এক ভুমিগৃহ,
খোলা পিঞ্জর
চেয়ে
রয় নির্বাক ভাবে, ইতিহাসের উড়ন্ত
কিছু বিছিন্ন পাতা, কালান্তরে
ভুলে যায় মানুষ ক্রমশঃ
তাদের গৌরব
গাথা !

* *
-  শান্তনু সান্যাল

 

http://sanyalsplanet.blogspot.in/
Claudio Perina paintings 1

শুক্রবার, ২৩ জুন, ২০২৩

ফিরে আসা - -

সব কিছুই ছিল নিজের জায়গায়
সচরাচর, ঘাটের চাতালে
কিছু শালিকের ঝাঁক
আর উদাস
চোখের
অপরিচিত অর্ধ উলঙ্গ শিশু। ওই
বিশাল নদীর ভাঙনে থেমে
ছিল কোথায় যেন সেই
অপ্রবাহিত প্রেম।
যখন ফিরে
এলো
দিনের শেষ খেয়া, কে যেন ডাক
দিল নদীর ওপার হতে, যে
সূর্য গেছে ডুবে অনেক
ক্ষণ আগে, এখন
তোমার
ফেরার পালা, আর মিছে পথ -
চাওয়ার কোনো মানে নেই,
নদীর হাতে কিছুই
নেই, সময়ের
বন্যা
খুবই একগুঁয়ে, ভেঙ্গে গড়ে যায়
নিজের ইচ্ছায়। আর তুমি
কি ফিরে পাবে ওই
কবলিত এক
ফালি
হরিৎ প্রদেশ। প্লাবিত প্রান্তর করে
যায় অবিরল মৌন অট্টহাস।
* *
- শান্তনু সান্যাল

বৃহস্পতিবার, ২২ জুন, ২০২৩

পরবর্তী স্টপ - -

সবাই একই পথের যাত্রী, কে কখন কোথায়
যে হারাবে কুয়াশার দেশে, বলা কঠিন,
অনেক কিছুর পাওয়ার আশায় অনেক
কিছুই যায় হারায়ে, তবুও
অভিলাষের তালিকা
অন্তহীন, যদি
কোনো
এক দিন বিস্মৃত মরুদ্যানের তীরে দেখা হয়
হটাৎ, তাহলে বলবো, তোমায় মরীচিকার
নীরব কাহিনী, অনেক কিছুই জীবনে
রয়ে যায় অনুচ্চারিত, বুকের
গভীরে চিরস্থায়ী বিলীন,
কিন্তু থামে না ঋতু
চক্র, থামে না
কেউ
কারোর জন্য, আকাশের গায়ে যথারীতি - -
ভরে উঠে চন্দ্র তারার সম্মেলন, আর
পৃথিবীর বুকে জেগে থাকে চাপা
সুপ্ত দহন, আর মানুষের
চিরকালীন ঘাত -
প্রতিঘাতের
মাঝে
জীবন খুঁজে বেড়ায় উজানের পথ, শূন্য
দিগন্তে ভেসে উঠে ডুবন্ত চাঁদের
কিছু ভাঙা ভাঙা প্রতিফলন,
চেয়ে রয় অরণ্য কুসুম
আকাশের পানে,
অন্তর্তমের
কাহিনী
নিজের ছাড়া কেউ কি জানে ? আবার
সেই পরিচিত পুনরাবৃত্তি - - সরু -
পথ, সুড়ঙ্গ, সিঁড়ির ধাপ,
মেট্রো ট্রেন, জন -
অরণ্যের
মাঝে
নিজের সন্ধান। তুমি কিংবা আমি বলে
কিছুই নেই সবাই সহযাত্রী, কত
দূরের সঙ্গী, এটাই বোঝা
মুশকিল - -

* *
- শান্তনু সান্যাল



 

মঙ্গলবার, ২০ জুন, ২০২৩

পূর্ব পরিকল্পিত কিংবা - -

অভিলাষের সিদ্ধি ছিল, হয়'ত প্রচ্ছন্ন 
রূপে বুকের গভীরে, অথবা 
সব কিছুই ছিল পূর্ব 
পরিকল্পিত 
চক্রান্ত !
বলা মুশকিল এই মুহূর্তে, এখন - - - 
স্পন্দনের ঢেউ ফেরার 
পথে, নিঃশ্বাসের 
সমীকরণ 
শুন্য মুখী, বহে গেছে বহু দূর সজল 
সমীরণ, প্রবল বর্ষা সুনিশ্চিত, 
অশনি উৎসের সন্ধান 
পাওয়া এই লহমায় 
বড়ই কঠিন,
আবছা 
দিগন্ত, পৃথিবী ও আকাশের পার্থক্য 
অর্থহীন, অপ্রত্যাশিত সব 
কিছু যেন একাকার,
যা ঘটার ছিল 
সে গেছে 
ঘটে, অনাহূত প্লাবনে ভেঙ্গে গেছে 
জীবনের তটভূমি, এখন 
চার দিকে শুধুই 
ক্লেদিত 
অনুভূতি, ঝুলন্ত বট বৃক্ষের শিকড়ে 
জোনাকির ঝাঁক আর 
গভীরে নিহিত 
প্রণয়ের 
উপত্যকার অন্তহীন জলরাশি - - - 
* * 
- শান্তনু সান্যাল 
http://sanyalsplanet.blogspot.com/
artist Julie Gilbert Pollard 





রবিবার, ১৮ জুন, ২০২৩

অপহন্তা রাত্রি

অতিবেগুনী কিরণে দেখেছি অপরূপ মায়াবী রাত,
নীরন্ধ অন্ধকারে, চোখের বন্য হরিতাভ 
আলোর তরঙ্গে, জীবন মরণের খেলা, 
কৃষ্ণ পক্ষের সেই যামিনীর গায়ে 
তাজা মাংসের গন্ধ, গরম 
রক্তের সান্দ্রতা, গহন 
আর্তনাদ, দীর্ঘ 
গোঙানির 
পরে হয় ত ক্রমশঃ মৃত্যুমুখী কিংবা বুনোকুকুরের  
ভক্ষণ ! নিজের চোখে আবছা মৃত্যু দেখা,
হয় ত এই বীভৎস, ঘৃণিত রাতে, 
কোনো অবিকশিত ভ্রুণের 
শ্বাদন্ত হতে ফসকে পড়া,
তৃণাবৃত জীবনের 
উৎপত্তি !
সংবেশিত হরিণের পাল আঁধারে পথ খুঁজে পায় না,
আখেটক দল নিরব ধাপে তাদের হদিস জানে, 
ভয়াতুর জীব এখন দিক ভ্রমিত, বিহ্বল
হৃদয়ের অন্তিম নিঃশ্বাস, কিছু 
ক্ষনেই সন্নিহিত এলাকা 
নিঝুম, হাওয়ায় 
তামসিক 
বিতৃষ্ণা, মুদ্রার টংকার, অসংহত আবরণের খোঁজ !
জীবনের টুকরোগুলোকে জড়ো করে, হিংস 
রাতের বুক থেকে মুক্ত হওয়া, শেষ 
প্রহরে তৃণভূমিতে পড়ে রয়েছে 
অস্থি পিঞ্জর কিছু বিবর্ণ 
মাছিময় রুধিরের 
দাগ, চাপা 
ক্রন্দন,
নিরীহ হরিণশিশুর অসমাপ্ত, দুগ্ধময় স্তনের সন্ধান !

- - শান্তনু সান্যাল
Night Magic Painting by Brenda Owen 
   
  

শুক্রবার, ১৬ জুন, ২০২৩

মায়া মৃগের পথে - -

 


অন্ধকার যত ঘনায়, আলোর তৃষা

অতই বেড়ে যায়, জীবন উঠে
আসে বিহানের উঁচু তলায়,
ফোস্কা পায়ে যেকোনো
অবস্থায়, এই বেঁচে
থাকার নেশা
বারংবার
আশার
সিঁড়ি
বেয়ে নতুন সকালের পথে নিয়ে যায়,
তোমার প্রেমের কুয়াশায় যত বার
হারাই, জীবনে এক অভিনব
অর্থ খুঁজে পাই, অভিলাষের
ফর্দ চিরদিনই অফুরন্ত
থেকে যায়, হাত
থেকে রেশমি
মুহূর্তগুলো
যেন
ফিসলিই সুদূরে গড়িয়ে যায়, নিশীথের
আলো মায়া মৃগের পথে নিয়ে যায় ।
– শান্তনু সান্যাল

রক্তিম কুঞ্জের ব্যথা - -

এ কেমন অগ্নিগর্ভ দেশের নাগরিক, কার বিরুদ্ধে
সমরের হুঙ্কার, চার দিকে উঠছে ধোঁয়ার
জুয়ার, এ কেমন সমাজের পুরোধা
আগুন লাগিয়ে সারা প্রান্তে
সাধুর বেশে দাঁড়িয়ে  
করছে দোষারোপ,
এ কেমন
প্রজাতন্ত্র, রক্ষক হয়ে উঠেছে রক্ত ভক্ষক, এ কেমন
সংবিধানের দোহাই, হাতে নিয়ে বোমা বন্দুক
লাঠি করেছে দানবদের মনোনয়ন, কোন
দেশের এরা বর্বর নাগরিক মানে না
কোনো আইন কায়দা, এ কেমন
গুন্ডাবাহিনী গ্রামে গঞ্জে
করছে তাণ্ডব -
খেলা,
মা গুলো কাঁদছে বুকে নিয়ে ছেলের মরদেহ, মাটির
উপরে গড়িয়ে যায় মানুষের রক্ত ধারা, এ
কেমন রক্তে রাঙা বাংলা, কোনো
দিন কি ফিরবে না রবি
ঠাকুরের সোনার
বাংলা ।
- - শান্তনু সান্যাল      
 

বুধবার, ১৪ জুন, ২০২৩

কিসের জন্য

কিসের বিজয় যাত্রা, পুড়িয়ে সমস্ত মানবতা !
এগিয়ে যেতে চায় স্বর্গের খিলানের পারে,
কোন দর্শনের গোলকধাঁধা, ধ্বংসের 
অভিমূখে ফেলে চলেছে মিথ্যা 
ফাঁদের বৃত্ত, খেলে যেতে 
চায় নিরীহ আবেগের 
সাথে অগ্নিখেলা,
তোমার 
চোখের জলে যদি না দেখি ব্যথিত জীবনের -
বিম্ব, কিসের আমার উপাসনা, শুধুই 
আত্মকেন্দ্রিত ভালবাসার কি যে 
অর্থ, কিসের সুখে হর্ষিত 
মঠাধীশের হৃদয় !
ধু ধু উঠে 
চলেছে 
গ্রাম প্রান্তরে ঘৃণা, হিংসার ধোঁয়া একাকার, কার 
জন্য এত দ্রোহের ঝঞ্ঝা, যখন সব কিছুই 
নশ্বর কিসের লাগি অমৃত সন্ধান,
না তোমার গৌরব চিরস্থায়ী,
না আমার অহংকার রবে 
অনন্তকাল - - - 

- শান্তনু সান্যাল 

সোমবার, ১২ জুন, ২০২৩

জলমগ্ন সমারোহ

সূর্য ডুবেছে গহন অন্ধ খাদের মাঝে,
রাত্রি ভূগর্ভস্থ পথের যাত্রী, ঠিক
অবগাহন বিন্দু থেকে ভেসে
উঠবে সারা গায়ে মেখে
জোনাকির আলো,
আমি অতলে
গিয়ে খুঁজি
প্রাণবায়ু,
তুমি
কিনারায় বসে দেখছো ভেসে উঠা
নিঃশ্বাসের বুদবুদ, আস্তে আস্তে
সারা বিবস্ত্র দেহে জলছবির
অঙ্কন, অথৈ জগতের
এখন আমরা অন্ধ
মাছ, বিবর্তনের
সিদ্ধান্ত এই
মহূর্তে
অর্থহীন, সারা শরীরে চকচকে স্পর্শ
আঁশ, তুমি যে পথ দিয়ে নেমেছো
আমার ভেতরে, ওই পথের
কোনও প্রস্থানের দরজা
নেই, শুধুই একমুখী
রাস্তা, এখন
জলের ধরাতলে সব কিছুই অধরা, না
কোনো ঘূর্ণি, না ভেসে উঠা বুদবুদ,
সূর্যোদয় পর্যন্ত সব কিছুই
নিঃস্তব্ধ, কিন্তু অতলে
জলমগ্ন বসন্তের
সমারোহ |
– শান্তনু সান্যাল

শনিবার, ১০ জুন, ২০২৩

জীবন্ত সমাধি

অনেকটা পথ হাঁটার পরে ফিরে
তাকিয়ে দেখি সব পিছুটান
আবছা, পুরাতন ঘড়ির
কাঁটা থেমে আছে
কুয়াশা ভরা
আকাশের
গায়ে,
এই
শহরের সীমান্তে, নিভু নিভু আলোর
মাঝে, নদীর বুকে জোনাকিরা
করে অদ্ভুত নীলাভ খেলা,
আর কিনার রেখায়
চলে সারা রাত
মুখাগ্নির
মেলা,
ঝুলন্ত পুলের নীচে বহে যায় শতাব্দীর
আবর্জনা, আধপোড়া সোনার দেহ,
কত কিছু , অগণিত গলন পচনের
পরেও সেই জলেই দেউলের
জলাভিষেক, নদী তখন
দিব্য জলধারা সংজ্ঞা
বিহীন জীবন
দায়িনী
মাতৃ রূপা, মহানগরের বুকেও আছে
এক বিস্তৃত মরা নদীর চড়, ভাঙা
দেউলের গায়ে লেখা আছে
তার ইতিহাস, ব্যস্ত রাস্তার
দুই পাশে রয়েছে কত
হারানো গোঙানি,
চাঁপা কান্নার
মাঝে এক
ঘেয়ে
জীবনযাপন, শেওলা ধরা ছাদে দাঁড়িয়ে
দেখি সুদূর নদীর গায়ে জোছনার
রুপালি চাদর, আর নিথর
দেহে রজনীগন্ধার
আতর - -
* *
- - শান্তনু সান্যাল

শুক্রবার, ৯ জুন, ২০২৩

রঙ্গ মঞ্চ বিহীন

 রঙ্গ মঞ্চ বিহীন এই পুতুল নাচের খেলা, তুমি আর আমি শুধুই নয়,
রয়েছে মহা মিছিল, অদৃশ্য দর্শক ও শ্রোতা,
এই অন্তরিক্ষ জড়িত যবনিকায়
অগণিত প্রকাশপুঞ্জ মায়াবী নিহারিকা,
ভেসে যায় শূন্যে, গতিময় জন্ম মৃত্যুর ভেলা,
বৃহতম সেই কালজয়ী মহাচক্র
দুলে যায় তীব্র বেগে সময়ের অজস্র নাগরদোলা,
জানি তুমি বিশ্ব বিজয়ী নিজের ভুবনে,
তবুও পরাজিত অন্তঃ দাহের সমরে,
রাজন ও ভিক্ষু চলেছে এক পথে অনাম সন্ধি বেলা,
এখানে উদিত ভালবাসার শতদল পূর্ণ রূপে
সরসির বক্ষে, আবার লুপ্ত মহা অগ্নিশিখা নিমিষে,
পাস কাটিয়ে যাওয়া অসহজ ও মুশকিল,
সব কিছুই পঞ্জিবদ্ধ রয়েছে অপরিচিত অদৃশ্য খাতায়,
সময়ের বুকে সব কিছু পূর্ব মুদ্রিত, অনন্ত প্রেম অথবা বিন্দু বিন্দু অবহেলা,
রঙ্গ মঞ্চ বিহীন এই পুতুল নাচের খেলা।
-- শান্তনু সান্যাল

বুধবার, ৭ জুন, ২০২৩

সে যখন আরণ্যক ভালবাসা

কিছু অপ্রত্যাশিত ঘটে যায় জীবনে, নিঃশব্দ, অনেক সময় মনে হয় যেন নিজের
ছায়া অনুধাবন করে চলেছে,
তখন অস্তিত্ব নিয়ে ভয়
পায় মন, নির্লজ্জ
আয়না চেয়ে
রয়, লোম
প্রতি
লোমের প্রতিক্রিয়া, জানালার ভাঙা কাচের
কপাটে তখন জোছনার চঞ্চল কণা স্থির,
বন্য বেড়ালের মতন ঢুকতে চায়
চাঁদের আলো, গুটিয়ে গুপ্ত
সব নখর, তার
অতৃপ্ত মন
কি দেহ !
বুঝতে গিয়ে হৃদয় হয় উঠে আরণ্যক মৃগয়া,
সে এখন অরণ্য নদী গ্রীষ্ম কালের, রুক্ষ,
শুষ্ক, নির্জলা, নিষ্প্রাণ পড়ে রয়েছে,
বুকের পাঁজর ধরে, তার
অভিলাষের সীমানা,
বৃহত ! আকাশ
কুসুম তুলে
আনার
বাহিরে, তবু আমি সরিয়ে যাই তার কটিবন্ধের
পাথর, শেওলা, জলজ কন্টকের লতা বৃন্ত,
দিবা নিশি ঝুঁকে রয়েছি তার উপরে,
যদি হটাৎ কোনো ভূগর্ভস্থ
স্রোত চমৎকৃত করে
যায় ঊষর ভূমি,
স্বপ্ন গুলোর
বীজাণু
এখনো অভিনব, কাঁচা হলুদের রঙে ডুবানো,
 প্রাণ পণে করে চলেছি খনন, অবিরাম
নিরন্তর, পরিশ্রান্ত মুখে মাঝে মাঝে
তার অধরের কম্পনে খুঁজি
স্পর্শমণি, তার চোখের
ছায়ায় যেন বসে
আছে বিহান,
হাঁটুর উপরে মুখ রেখে, ক্লান্ত, নিদ্রালু চোখে -
চেয়ে আছে তার শ্রাবণী রূপ, মাংসল
শরীর, বীজের মাঝের পথে দেখি
সবুজ রং, কচি পাতার উঁকি,
নদী এখন তীর দ্রোহী,
বহুগামিনি, দুঃখের
দিন মনে করতে
চায় না, শুধু
বহে যেতে
চায়, বহিয়ে নিয়ে যেতে চায় পাথর, অরণ্য,
লৌকিক পরলৌকিক, সমস্ত স্বপ্নের নৌকা
উজানের দেশে।
- শান্তনু সান্যাল
http://sanyalsplanet.blogspot.com/







মঙ্গলবার, ৬ জুন, ২০২৩

কাগজের ফুল হলেও - -

শহরের ওই শেষ প্রান্তে দেখেছি তাকে

শুকনো লাল মাটির বুকে, বেশ
হাত পা ছড়িয়ে, জীর্ণ শীর্ণ
দেউলের গায়ে হেলান
দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে
একরাশ ফুলের
সাথে, সে
যেন বুঝিয়ে দিতে চায় বেঁচে থাকার
মন্ত্র উপেক্ষিত প্রান্তরে, সে নিজের
বুনো দাপট নিয়ে পর্যটক কে 
জানিয়ে দিতে চায় তার
উপস্থিতি। তারা
হার মানে
না, হয়'ত তাদের চাহিদা খুবই কম -
তাই সারাটা বছর শাখা প্রশাখায়
ফুটে রয় অজস্র ফুল, আসলে
তাদের অভ্যন্তরীণ বুকে
জমে থাকে গভীর
জলস্রোত !
তারা শুকতে জানে না । শুধুই লুটিয়ে
যায় অন্তহীন প্রেমের কুহক ! তারা
কোনো ভাবেই ভাঙ্গা দেউলের
প্রাচীর ছেড়ে যেতে চায়
না, আকড়িয়ে
রাখতে
চায় উপাসনার ওই পবিত্র মাটিকে -
চিরকালের জন্য - -
* *
- শান্তনু সান্যাল 

সোমবার, ৫ জুন, ২০২৩

জীবনের সার্থকতা

পৃথিবী জুড়ে রয়েছে শোক, বিলাপ,
বিষন্নতা, জীবনের এই উধ্বস্ত
পরিমন্ডলে কিছু ক্ষণ যদি
তার সমীপে স্বপ্ন ঝিনুক
কুড়িয়ে যাওয়া, ক্ষতি
কী? জানি প্রেম
ও নিয়ে যায়
অদৃশ্য
ধ্বংসের মুখে, কিন্তু অবুঝ হৃদয়
মরিচিকার ভাষা বুঝে না,
ব্যাধের তীরে গরল
আছে কি সুধা,
মায়া মৃগ,
সুকরাত
কিংবা
সিদ্ধার্থের পরিচয় জানে না, সে - -
নিসর্গের সাথী, শ্রাবণের ধারায়,
মধুমাসের মৌন আমন্ত্রণে,
পলাশের রক্তিম প্রবাহে
কেবল ভাসতে জানে,
অরণ্য বীথিকায়
কস্তুরীময়
গন্ধে
নিজের জীবন হারিয়ে দিতে চায়,
এই চরম উৎসর্গ বিন্দুই ত
প্রেম, প্রণয়ের পথের
যাত্রি, কখনো
রাধার
অশ্রু
ধারা, আবার যাযাবর সম
বাউলের ওই একতারা !
কান্না ও হাসির মাঝে,
অনাবৃষ্টি ও বর্ষণের
মধ্যে তার দুই
চোখের
বৃষ্টিছায়ার ভূমিতে, হৃদয় দেখে যায়
বেঁচে থাকার স্বপ্ন, পুঁতে যায় নব
পুষ্প চারা !

 -  শান্তনু সান্যাল     



রবিবার, ৪ জুন, ২০২৩

নিঃসন্দেহে তোমায় - -

নির্মোহী রাত ফিরে গেছে ঝরা ফুলের

পথে, নিভিয়ে তারকের ঝাড়বাতি,
আবছা আলোয় দেখি, নব
প্রভাত করে চলেছে
পুনশ্চ আহ্বান,
জীবনের
সৌন্দর্য্য চিরস্থায়ী, যেখানে ছিল শেষ
পদক্ষেপ, সেখান থেকেই আবার
অভিনব যাত্রার প্রারব্ধ,
পরিচিত চেহারা
বা পান্থ -
নিবাস, সব কিছুই এই জগতে নীহার
বিন্দু, শুধুই ক্ষণিক মুহূর্তের
কাহিনী, যথারীতি
আসা যাওয়া
এবং
অস্থায়ী ঠিকানা, তবুও ভালবাসতে -
চায় এই  হৃদয় চিরকাল, পৃথিবী,
আকাশ, মহাসাগর হতে
সুদুর চিরহরিৎ
অরণ্য -
প্রদেশ এবং নিঃসন্দেহে তোমায় - - - -

* *
- শান্তনু সান্যাল

 

http://sanyalsplanet.blogspot.in/

শনিবার, ৩ জুন, ২০২৩

কল্পনার অপর পারে - -

এলোমেলোই থাক জীবনের সমস্ত পৃষ্ঠ, 

পরিপূর্ণতার ছোঁয়া লাগলেই 
শূন্যতার আমন্ত্রণ !
এই আলুখালু
ভাবের 
মাঝেই আমি চাই তোমার ভালবাসা,
বিশৃঙ্খল ভাবনা দিয়ে তোমায় 
জড়িয়ে রাখা, খুব কাছে 
বুকের অভ্যন্তরে
লুকিয়ে 
রাখা, জানি এই বিবর্ণ ঘর, সেঁতসেঁতে
গন্ধে ভরা, রঙ্গ বিহীন দেয়ালে
ঝুলন্ত, ছেঁড়া পুরাতন
সস্তা পেইন্টিং, 
হয় ত 
তোমার মনে বিরক্তি এনে থাকবে - - 
অস্বাভাবিক ও নয়, কিন্তু 
প্রকাশ্য সত্যের এক 
সৌন্দর্য্য ও 
থাকে 
বৈকি ! ওই নিগূঢ়তার মাঝে আমি - - 
খুঁজে পেতে চাই তোমায়, পুরো -
পুরি ভাবে, এখানে কিছুই 
গোপন নয়, সব 
কিছুই 
প্রকাশিত, আবরণ বিহীন দেহ প্রাণ !
বুক খুলে যেন নিশি পুষ্পের 
গন্ধ লুটিয়ে যাওয়া,
আনত পাপড়ির 
ডগায় 
ঝুলানো ওই এক ফোঁটা নীহার কণার 
মত আমি চাই তোমার প্রেম 
ঝরে পড়ুক আমার 
দগ্ধ নিঃশ্বাসে,
বিন্দু 
বিন্দু সারা রাত কল্পনার অপর পারে।
* * 
- শান্তনু সান্যাল  




শুক্রবার, ২ জুন, ২০২৩

পুষ্পিত মোড়ে হঠাৎ - -

উড়ে যাক অস্থির সমস্ত তুষার কণা

সকালের মন্থর বাতাসে, জোর 
করে আটকালে যাবে 
সব কিছুই 
গলে,
নতুবা শীত দহন নিয়ে করতলে - -
জীবন খুঁজে বেড়াবে বিলুপ্ত 
প্রেমের ঠিকানা, সব 
কিছু কি পোষ 
মানে,
আসলে মনের মিল যদি না হয়, কি 
অর্থ আছে, জোরাজুরি হাতে 
হাত মিলিয়ে দূরে 
হেঁটে যাওয়ার 
অভিলাষ,
শুধুই 
ছদ্ম অভিনয়ের ছলে পরস্পরকে - -
ধরে রাখা, আর পুষ্পিত 
মোড়ে হঠাৎ সরে 
যাওয়া - - 

* * 
- শান্তনু সান্যাল