শনিবার, ৩১ মার্চ, ২০১২


সরে যেতে পারি নি 

না পারি নি দূরে সরে যেতে, যতই করেছি প্রয়াস 
ফিরে এসেছি অনায়াস, জড়িয়ে বুকে মায়া 
যেন একরাশ, জানি না কি যা  আছে
তার প্রীতির কাব্যের অনুপ্রাস,
নিঃশব্দ পায়ে এসে, ক্ষণে 
ক্ষণে হৃদয়ে বেঁধে 
যায় অধিবাস,
রাত ও দিনের ওই মিলন বিন্দুর তীরে সে থাকে 
দাঁড়িয়ে, বুকে নিয়ে জলরঙ্গী উচ্ছ্বাস, কি 
এমন আছে তার চোখের ভাষায় 
বোঝে না অবুঝ মন, সে 
যেন অলস বেলার 
মধুর দীর্ঘ 
নিঃস্বাস,
জীবনের মরু প্রান্তরে শুধুই ভরে থাকে শ্রাবণী
আভাস, তাই আলো ছায়ার পথে সে 
অদৃশ্য রহে আশপাশ - - 

- শান্তনু সান্যাল 
PAINTING BY TONY GROTE 1




সোহাগী রাত্রি 

রহস্যময়ী রাত্রি, সেজে চলেছে বোষ্টমীর সাজে 
নিয়ে হাতে চন্দন ফুলের মালা, বিচরণ 
করে  অজয় নদীর ধারে, কাশ 
বনের মায়াবী পথে, যেন 
অনুগামিনী অজ্ঞাত 
নাগরের লয়ে,
ধরে গান 
কি কীর্তন সেই জানে, ঘুরে বেড়ায় আপন মনে,  
তার সুরের জোছনা ভরে যায় শুন্য 
জীবনের বাতায়নে, হৃদয়ের 
প্রাঙ্গনে বেজে উঠে ওই 
নূপুর ধ্বনির মধুর 
রিনিঝিনি,
সে  উঁকি দিয়ে যায় হাতে নিয়ে স্বপ্ন ভরা ডালি,
সে যে আমার বড়ই সোহাগের সাথী, 
থেমে রয় অনেক ক্ষণ বিছানার 
কাছে, বলে যায় কত রূপ 
কথার কাহিনী, মুদিত 
চোখের পাতে 
সাজিয়ে রাখে আগামী দিনের সপ্তরঙ্গী সকাল, 
বুকে রেখে যায় ভরসার অদৃশ্য হাত, 
অস্পষ্ট বাক্যে কি যেন বুঝিয়ে 
যায় করুন স্বরে, হয় ত 
পরিয়ে যায় ঘুমন্ত 
দেহে পুষ্পের 
মালা, আস্তে  দিয়ে যায় কপালের মধ্যে নিয়তির 
চন্দনরঙ্গী বৃত্ত, আমি তখন সম্মোহিত 
মহন্ত, ভেসে চলেছি গঙ্গার ঘাটে,
অজানা নৌকা বেয়ে 
অপরূপ সেই 
মায়াপুরে,

- শান্তনু সান্যাল 
deer_in_moonlight_Messier Art 







শুক্রবার, ৩০ মার্চ, ২০১২


অন্তরতমের দ্যুতির পথে - - - 

আঁধার যখন কথা বলে, নিরবতা তখন চুরমার, 
পরিজ্ঞানের জাগরণ হয় উঠে চপল, ভালো 
মন্দের মাঝের মতবিরোধ যায় সহসা 
থেমে, অন্তর্দৃষ্টি নিজেই খুঁজে 
উদ্ভাসিত পথ, একান্ত 
হয় উঠে মুখর, 
খুলে যায় 
জীবনের বন্ধ পুস্তক, পৃষ্ঠ গুলো তখন সহস্ত্র -
আয়না, জবাবদিহি চায় প্রতি শব্দ, 
হিংসা প্রতিহিংসা, ধর্মান্ধতা,
পক্ষপাত, শোষণ, 
নিষ্ঠুরতা 
ভেসে উঠে অধঃক্ষেপণের রূপে, প্রাণ তখন 
জলজ বনস্পতি, পচন হতে চায় 
মুক্তি, প্রাণবায়ুর জন্য করে 
ছটপট, মোক্ষের তখন 
উত্পত্তি, আত্ম -
প্রেম সেই 
সময় অতি প্রিয়, করে তখন প্রায়শ্চিতের পথে 
অনুসরণ, বিশ্বাসঘাতকতার সংজ্ঞা 
বুঝে উঠে তৃষিত জীবন, ওই 
সংশোধন কিংবা আত্ম 
শাস্তি, ফিরিয়ে 
আনে 
মনুষ্যতার পরিচয়, জীবন তখন পূর্ণতার দিকে 
অগ্রসর - - - 

- শান্তনু সান্যাল
painting by - red flowers - Melissa Sherowski

বৃহস্পতিবার, ২৯ মার্চ, ২০১২


বিরল বীথিকার পথে - - 

পাহাড়ের গা ভিজিয়ে উড়ে গেছে, প্রাক মৌসুমী 
সমীরণ, খোলা জানালার জগতে আছে 
মনের সজলতা বাকি, কিছু আর্দ্র 
অনুভূতি, সে রেখে গেছে 
মিষ্টি অদ্ভুত গন্ধ,
দেহের 
পরিলেখে জেগে আছে প্রগাঢ আবেগের  বিন্দু, -
উড়ন্ত যবনিকার চুনটে ঝুলছে উন্মুক্ত 
ভালবাসা, যেন ছুঁয়ে গেছে 
রুপালি আলো ধীর 
বেগে সেই 
কাঞ্চনজঙ্গার চূড়া, তার চাপানো হাসির কণা
ছড়িয়ে রয়েছে এখনো, তাই ঝিলমিল 
জীবনের মলিন আয়না, কোথা
হতে ক্ষিপ্র সুরভি ভেসে 
আসছে যেন 
অবেলায় 
ফুটে চলেছে হাসনুহানা, সুদূরে শ্রাবণ হয় ত 
দিয়ে চলেছে চরমপত্র, দোষ দিও না 
যদি ভেঙে যায় ভাবনার 
জলাধার, মহা 
প্লাবনের 
পূর্বাভাস, ঝিলের ওপারে নেমে আসছে মেঘের 
সঘন ছায়া, উড়ে যাচ্ছে নীলাভ ছাই 
রঙ্গী সারসের দল, আকাশের 
বুকে অশনি সংকেত, 
কিংবা তার 
প্রণয়ী সৃজনের প্রারব্ধ, নৈসর্গিক বিলুপ্ত সৃষ্টি! 

- শান্তনু সান্যাল
PAINTING BY FRANK ARID 

জীবন দর্শন 

শ্বেত ও শ্যামের সৌন্দর্য্য বুঝতে চায় নি সে কোন 
দিন, কেবল সপ্তরঙ্গী ঢেউতে ভাসিয়ে নিতে 
চায় জীবন, চোখের ভালো লাগা টাই 
তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ, মনের 
প্রতিফলন অর্থহীন, 
বাস্তবতা ও 
স্বপ্নের তফাত হয় ত সে বুঝে উঠতে পারে না, 
কিংবা অদৃশ্য আতঙ্কে সে ছুঁতে চায় না 
শুকানো ক্ষত স্থান, আসলে
চার জনের মধ্যেই ত 
সে এক জন, 
আলাদা 
চিন্তা ভাবনা নিয়ে জীবন যাপনের কি কোনো 
মানে আছে, কোথায় যেন সে ও ঠিক,
কোথায় যেন আমি অতিরিক্ত, 
এই ভিন্নতার মাঝ খানে 
দেহ ও প্রেমের 
মিলন, 
আমার চাহিদা হয় ত তার থেকে দ্বিগুণ বেশি 
অথবা সে শুধুই আমায় এক ক্ষুদ্র নদী 
ভাবে, এক বিরোধাভাস, এবং 
অন্তহীন বিশ্লেষণ, না 
সে বিজয়নি 
না আমি 
পরাজিত যোদ্ধা, তবুও তার তর্কের আগে নত 
মস্তক, তার নিসর্গ দর্শনে খুঁজি বুদ্ধের 
মধ্যম মার্গ, তাই বানপ্রস্থ হতে 
ফিরে আসি ধরে সান্ধ্য 
কালীন লোকাল, 
সে এখন 
যশোধরা, আমি দাঁড়িয়ে আছি নিয়ে শুন্য পাত্র,
দরজায় অবিরাম কড়া নড়িয়ে চলেছি,
শঙ্খ বেলায় তার মাথার সিঁদুর,
ভাঙিয়ে চলেছে ভীষ্ম -
প্রতিজ্ঞা, তাই 
ভুলে যেতে 
চাই আলো ছায়ার খেলা, ধেয়ে চলেছি রং ধনুর 
পিছনে পিছনে বহু দূর - - - 

- শান্তনু সান্যাল 
the blooming flowers

বুধবার, ২৮ মার্চ, ২০১২


পলাতক পাখির ঝাঁক 

জীবনের যুদ্ধ অশেষ, ঘিরে আছে চার দিকে 
বিষন্নতা  অবসাদ, তা সত্তেও মনের 
পৃথিবী চায় গড়তে নতুন 
ভাবনার উপগ্রহ, 
স্বপ্ন খচিত 
ভব্য আকাশ, তুলতে চায়  তছনছ  আবাস, 
স্খলিত মাটির উঠোনের কাছে পুঁততে 
চলেছে হৃদয় আবেগী ফুলের 
লতা, হিংস্র ঝড়ের
প্রতিহিংসা 
গেছে ক্রমশঃ বহুদূর পেরিয়ে সাগর ধরাতল, 
ভুলিয়ে চলেছে সকালের মলয়ানিল
রাতের দুঃস্বপ্ন, নরম সূর্যের 
সোনালী আলোয় 
দেখি
আরশির মৌন আমন্ত্রণ, ফুটে চলেছে ঝোপের 
মাঝে অসংখ্য নামবিহীন বন্য 
কুসুম, উড়ে আসছে 
পলাতক পাখির 
ঝাঁক - - - 

- শান্তনু সান্যাল
Painting by  Lori McNee Fine Artist

মঙ্গলবার, ২৭ মার্চ, ২০১২

আলিকস্তম্ভ

সীমিত গণ্ডির  ভিতরেই সে খুঁজে প্রেমের মীমাংসা,
বৃত্ত রেখার বাইরে যেন শুন্য ছাড়া কিছুই 
নাই, তবু ও  দৈহিক জ্যামিতির 
পরিপূর্ণতা পড়ে রয় 
নিবিড়
আঁধারে, মরিচিকার  পিছনে দৌড়িয়ে যায় তথা -
কথিত ভালবাসা, শরীর মন্থনের অভিযানে 
অগ্রসর , প্রাণের উর্বরতা যায় 
হারিয়ে, কালান্তরে ভুলে 
যায় জীবন নিজস্ব 
নির্ধারণ, 
সেই  বিন্দু হতে আত্মঘাতী ভাবনার উদয়, অতুষ্টির 
সূত্রপাত, ক্রমশঃ দর্পণের ক্ষীণালোকে লুপ্ত 
প্রতিচ্ছায়ার সন্ধান, সে এক বিরক্তি -
জনক অবস্থা, অনেক কিছু 
পাওয়ার পরে ও যেন 
রিক্ত হাত, 
এখানেই মনের পৃথিবী হয় উঠে একাকী, বিচ্ছিন্ন,
সর্বহারা, খুঁজে বিশুদ্ধ প্রেমের অনুভূতি, 
ফেলে আসা ঝিনুকের বুকের 
দীপন, মুক্তার সৃষ্টি, 
জীবন্ত পরশ, 
কিন্তু কি পাওয়া যায় বারে বারে হৃদয়ের আলিকস্তম্ভ!

- শান্তনু সান্যাল



সোমবার, ২৬ মার্চ, ২০১২


দেখো যদি পেয়ে যাও ওই চিঠি 

বিলম্বিত ছিল শ্রাবণের আগমন কিংবা মন 
নিজেই চেয়েছিল প্রলম্বিত দহন জ্বালা, 
জোর করে যেন মধুমাস কে 
থামিয়ে রাখা, কিন্তু 
সেটা কি সম্ভব, 
মৌসুমের 
নিজের ব্যক্তিত্ব থাকে, মনের অনুসারে সে -
কোনো দিনই থামে না, তাই প্রেমের 
সমীরণ খুবই অস্থির, কখনো 
যে দক্ষিণা বাতাস 
সহসা দমকা 
হাওয়া, 
প্রশান্ত ভাবে উঠে, ক্ষণিকে যেন কালবৈশাখী, 
করে যায় জীবনের ভূ ভাগ বিধ্বংস, 
জানি না কত জন যে ফিরে 
আসে ওই নৌযাত্রার 
নাবিক,
ঘাটের চাতালে দেখি চিরদিনই অদৃশ্য ক্রন্দন,
উজান দেশের ঠিকানা বিহীন 
চিঠি, ভেসে আসে প্রায়ঃ
জোয়ারের তরঙ্গে, 
ভাটার জলে
আবার 
যায় হারিয়ে ভোরের স্বপ্নের সঙ্গে বহু দূর - - - 

- শান্তনু সান্যাল
Boat_in_river_Bangladesh

রবিবার, ২৫ মার্চ, ২০১২


একটু সাবধানে - - - এসো, 

ধূমায়িত জীবন ও তার  সজল  আঁখি, কে 
হতে  চায়  মুক্ত আর  কাহাকে  যে
বুকে  বেঁধে  রাখি, 
উপান্তে 
আছে  যে  মানুষ, পরাজিত, খুবই যে -
একাকী, তার  নিরব  বেদনার 
কোনো  দিনই কেউ 
ছিল না সাক্ষী, 
তার 
ওই  নিঃসঙ্গ  হেঁটে  যাওয়া  ঘুমোতে দেয় না 
সারা রাত, ধেয়ে যায় মন তার 
পিছনে নিঃশব্দ বহু দূর, 
তার একগুঁয়েমি 
মাতিয়ে 
তুলে  অন্তরতম, দেহ ও প্রাণের  বিপ্লব, রাত 
তখন অনাথ শিশু, দাঁড়িয়ে  থাকে 
উদাস  মুখে, মফস্বলের 
সেই নির্জন রেল 
স্টেশনে, 
সুদুর পাহাড়ী নদী পার করে গেছে  অন্তিম -
প্রহর, তড়বড়িয়ে ছুটে চলেছে 
আঁধার, ধরতে যেন 
সুখের অদৃশ্য 
পাখি, 
ঝুলে আছে সজল চোখের আগে, কিছু  আবছা 
ভবিষ্যত, ময়লা থলি, কালচে  দেয়াল,
আইবুড়ো  স্বপ্ন, পুরাতন  রং
বিহীন রবি ঠাকুরের 
পেন্টিং, ছেঁড়া 
ক্যালেন্ডার,
চৌবাচ্চার কাছের শেওলা  ভরা  প্যাচপেচে -
মেঝের  জগত, দিবা  নিশির  একঘেয়ে
স্খলন, কিছু  রোদন  ভরা
সকাল  আর  কিছু 
প্রতিশ্রুতি 
ভাঙা  সন্ধ্যা, এদের  মাঝ  হতে  উপান্তে  সরে 
যাওয়া  এটাই  কি  জীবন - - - 

- শান্তনু সান্যাল
contemporary-miniatures-group-exhibition-of-small-format-paintings kolkata

শনিবার, ২৪ মার্চ, ২০১২


ফিরে আসি বারে বারে -- 

ওই সুর যে প্রাণ হতে ভেসে আসে, চোখের জলে 
লিখে যায় অগোচর প্রেমের মহাকাব্য, সে
একটি ভাবনা যে থেমে রয় শিশির 
বিন্দুর বুকে ফুলের হাসির
রূপে, তাজমহল কি 
কাচের মহল 
তার আগে কিছুই নয়, শুধুই রাজবংশীয় এক 
প্রদর্শনী, ওই আড়ম্বরের বাহিরে ছিল 
হয় ত তার ভালবাসা, সেই 
ক্ষয়িত দেয়ালের চুনে, 
কিংবা ভাঙা
জানালার 
কাচে, ছিল আটকিয়ে যেন ঝরা পালকের রূপে, 
সে যেন শৈবালিনি নামের নায়িকা 
জড়িয়ে রয়েছে প্রাচীরের 
বুকে যুগ যুগান্তর 
হতে, বেঁধে 
আছে 
শুন্যে প্রণয়ের বাসা, প্রলয়ের পরে ও যেন খুঁজে 
যায় মরমীর সন্ধান, সে যে এক ঘিঞ্জি 
গলির নিঃশ্বাস জেগে রয় দিবা 
নিশি, ভরে যায় জীবনে 
কাল্পনিক সুবাস, 
অঝর শ্রাবণ 
ধারায় 
ধরে রাখে আমার হৃদয়ের বিধ্বস্ত স্তম্ভ, ক্ষণিক
সেই স্পর্শ থামিয়ে রাখে ভাঙনের 
কালচক্র, ফিরে আসে প্রাণ
বারে বারে ওই প্রাণ -
ঘাতক
উপত্যকার উপর হতে, তাই আমি আবার তাকে 
ভালোবাসি নতুন পরিভাষা নিয়ে 
বুকে - - 

- শান্তনু সান্যাল
paiting - Ralph F Perdomo's Albums 

শুক্রবার, ২৩ মার্চ, ২০১২

মনে হয় ভিন দেশী - -


ডানাবিহীন উড়ে যাওয়ার  উত্কন্ঠা, জেগে ছিল 
মনে তার, সেই ক্লেদিত বিকেলে, হাওয়ায় 
তখন সেঁতসেঁতে ভাব, অনেক দুরে 
যাওয়ার প্রবল ইচ্ছা, নদীর 
কিনারা ধরে সমানে 
হেঁটে যাওয়া, 
সম্ভবত কিছু দূর আমরা হেঁটে ও গেছি, আঁধার
নামার আগে, ঘামে একাকার, ওই
উপচ্ছায়া ঘেরা বিরাট বট 
বৃক্ষের নীচে, সে যেন 
হাঁপিয়ে উঠেছে, 
উটকা
ভয় যেন দাগ কেটে গেছে এঁদো গলির গায়ে, আর 
এগোতে পারি নি সে দিন, অবশ্যই মিথ্যে 
সাহস আমি ও দেখিয়েছিলাম তাকে, 
আসলে আমি চেয়ে ছিলাম 
একটি রঙ্গীন সাঁঝ 
চুরি করতে, 
কিছু সিক্ত চুম্বন, কিছু শিহরিত আলিঙ্গন, না 
জানিয়ে বুকের যাদুঘরে চেয়ে ছিলাম 
লুকিয়ে রাখতে, তার মধুরিম 
সামিপ্য, আর মনের 
দ্বন্দ্বের মাঝে 
সামঞ্জস্যের অভাব ছিল নিশ্চই, অর্ঘ্যের ফুল  রয়ে
গেছে হাতে, মন্ত্রমুগ্ধ এমন কি মন্ত্রৌচ্চার
গেছি ভুলে, উপাসনার শেষে 
দেখি দু জন দাঁড়িয়ে 
আছি প্রাচীন 
দেউলের 
মুখে, পুরোহিত অবাক বলে "মনে হয় ভিন দেশী -
আগে তো দেখি নি"

- শান্তনু সান্যাল 
http://sanyalsplanet.blogspot.com/  
Blue_Leaf


স্মৃতি চিহ্ন

জোছনা রাতে পাংশু রঙ্গী পাহাড়, পাগলের 
মতন ডাক দিত আমায়, যখন সবাই
ঘুমিয়ে পড়ত, চেয়ে থাকতাম 
সম্মোহিত ভাবে তার 
নিরব অনুরণন, 
অশ্বত্থ 
গাছের পাতা, নিশুতি রাতে দুলে দুলে কি -
যেন বলতে চাইত আমায়, মালতির 
গন্ধে  যখন ভরে উঠত মনের 
আঙ্গিনা, সাবধানে দরজা 
খুলে বাইরে বেরিয়ে 
আসতাম, 
চার দিকে নিস্তব্ধতা, নিশাচর পাখির ছায়া 
ছাড়া সব কিছু যেন ঘুমন্ত পৃথিবী, 
স্থির, চেতনা শুন্য, মনে হত 
নভ, জল, স্থল, অণু
পরমাণু সবাই 
অসাড়
পড়ে রয়েছে, সুদূরে সারসের কাতর ডাক ও 
গেছে হয়ে বোবা, কেমন একটা ঘোর,
কুয়াশাচ্ছন্ন জগত ঘিরে থাকত 
জীবনে, কিন্তু আমার 
ওই ভাবে নিশা 
অভিসার,
ক্রমাগত হয়ে উঠে ছিল অভ্যেস, মধ্য রাতের 
সঙ্গে নেশার প্রভাব ঘনিয়ে উঠত, ওই 
গল্পের মতন ঘুমে হেঁটে যাওয়া, 
সুদুর নদী, পাহাড়, সাগর 
মরুভূমি, পেরিয়ে 
ভোরের মুখে 
ফিরে আসতাম, দেহের ক্লান্তি দুরে সরে যেত,
যখন সবাই বিহানের স্বাগত করে 
চলেছে, তখন আমার চোখ 
নিজে নিজেই বুজে 
আসতো, কে 
যেন 
বলত ঘুমিয়ে পড় দেখি, মাথায় হাত বুলিয়ে 
অদৃশ্য ভাবে বলত, আমি তোমায় 
ভীষণ ভালোবাসি, আস্তে
আস্তে সে যেন হাত 
সরিয়ে বিলুপ্ত 
হয় যেত,
চোখের ফাঁক হতে দেখতাম সে উড়ে চলেছে 
পুবাল আকাশে, ছড়িয়ে সোনালী 
ডানা, উন্মুক্ত স্বপ্নীল 
বাতাসে, রেখে 
প্রেমের 
ময়ুরপঙ্খী পাখা বালিশের তলে, স্মৃতি চিহ্ন রূপে,

- শান্তনু সান্যাল
 http://sanyalsplanet.blogspot.com/
 Thomas Oil Paintings Night Sky & moonlight

  

বৃহস্পতিবার, ২২ মার্চ, ২০১২

তলহীন

দেখতে  চেয়ে ছিল সে ঝলসানো বুকের মাংস
পেশী, হয় ত পোড়া লোম ও ত্বকের 
গন্ধ তাকে কামার্ত ভাবে 
আবেশিত  করে 
গিয়েছে 
সে দিন, কিন্তু আমি বাধা দিয়ে জানিয়েছি, না, 
এখনো  জীবন জ্বলনশীল, হাত  দিলে খুঁজে
পাবে না নিজের  সম্ভ্রম, হারিও না 
অকারণে নৈসর্গিক কুহক, 
নিভুক  অরণ্য অগ্নি,
উঠুক আবার 
অঙ্কুরিত,
প্রেমের  কিশলয়, ছাইর স্তর পার করে ক্রমশঃ,
আস্তে করে তার দুই হাত, বুক থেকে 
সরিয়ে শুধিয়ে ছিলাম, ছিঁড়ে 
ফেল না কচি পাতার 
সঙ্গে তরুণ 
শেকড়, 
বোধ হয় সে সময় তার চোখে আমার অস্তিত্ব 
ছিল, কেবল জিজ্ঞাসাচিহ্ন, পরাজিত 
যোদ্ধা কিংবা কাপুরুষ, জানি 
না কি ভাবতে ভাবতে 
সে গুছিয়েছে 
খোলা 
বিনুনি, কিছু ক্ষণ চেয়ে রইলো বাতায়ন পারে, 
অবশ্যই তখন সন্ধ্যা নেমে এসেছে নিয়ে 
এক পশলা বৃষ্টি, ভিজিয়ে গেছে 
পাঁচ মাথা হতে মির্জা 
গালিব স্ট্রিট, 
আঁচল 
বুকে টেনে, আনত চোখে সে তুলেছিল কবিতার 
বই, চেয়েছিল অনুমতি বা  দিয়ে ছিল 
নিরব অভিশাপ, আমি কোন 
দিন তা বুঝতে পারি নি,
তার তেতলা 
হতে 
বাস স্টপ অব্দি নিস্তব্ধতার সঙ্গে হেঁটে যাওয়া, 
মনের ভিতরে পাতিয়ে ছিল বিচিত্র 
ভাঙন, এগিয়ে দিলাম তাকে 
হয় ত  জীবন পথের 
অনেক আগে, 
প্রেমের 
প্রমাণ করা টা হয় উঠি নি সহজ,  রাতে অনেক 
ক্ষণ ঘুম আসি নি চোখে, যেন  বিরাট 
একটি ভুল করে গেছি, কিন্তু 
সেই ভুলের সঙ্গে দেখি 
আগামী সন্ধ্যা 
হয় উঠেছে 
বেশি মধুর, দেখেছি তার মুখে অপ্রত্যাশিত 
বিশ্বাস, সঘন ভালবাসা, যেন নিশি 
গন্ধার বৃন্তে ফুটে চলেছে 
থোকা থোকা 
শুভ্র ফুল, 
কিছু লালচে ভাব, কিছু  আধখোলা পাপড়ি, গন্ধে 
ভরা অধিকরণ, অনন্ত সুবাসিত 
অঙ্গীকার - - 

- শান্তনু সান্যাল
 http://sanyalsplanet.blogspot.com/
 painting river by Abhijit Bhattacharya