বুধবার, ৩০ নভেম্বর, ২০১১


আকাশের পথিক 

বৃষ্টি ছায়ার পথে হয় ত ছিল নিয়তির 
শহর, হাওয়ায় শুনেছে বর্ষার 
খবর, ভিজার সাধ নিয়ে 
বসে রয়েছে জীবন 
ভর, সে যেন 
খারিজ 
রেল পথ, চেয়ে থাকে কচুরিপানার 
ভাসন্ত জগত, ফিঙের শুন্যে 
ঢেউ খেলা, কলমির 
বাতাসের সঙ্গে 
গুজব, 
সেই বন তুলসীর ঝোপে, খুঁজে মন 
লেবুফুলের গন্ধে লুক্কায়িত 
পথ, বুকের উপরে 
হেঁটে যায় শিশু 
সম দুই 
জড়িত হাত, সুদূরে বর্ষা এখন থেমেছে 
মনে হয়, দিনান্তে যেন স্যাঁতসেঁতে
ভাব, ফোনের তার একাকী !
উড়ে গেছে চড়ুই র 
ঝাঁক, সাঁঝের 
গগনে 
ভেসে চলেছে দিশাহারা রঙ্গীন ঘুড়ি -
ক্রমশঃ স্মৃতির আঁধারে 
হারিয়ে চলেছে 
নিরীহ 
ভালবাসা, 

-- শান্তনু সান্যাল
http://sanyalsplanet.blogspot.com/

মঙ্গলবার, ২৯ নভেম্বর, ২০১১

শুভ রাত্রি

অপ্রতিম সান্ধ্য গগনে সে
ভেসে উঠে নীলাভ
বেগুনি রঙ্গে,
স্বপ্নের
নিরুপম বিরল তারক -
লিখে যায় মিলন
বিরহের
গান,
ফুটে উঠে রজনীগন্ধা,
তার অনুরোধে
ঝরিয়ে রয়
মৌ গন্ধ,
সারা রাত চেয়ে থাকে
গগনের উন্মুক্ত
বিস্তীর্ণ বক্ষ
এক দৃষ্ট,
রাত্রি শেষে ঝরে শিশির
কণা, বিন্দু বিন্দু
ভরে যায়
জীবনের
রিক্ত ভাবনার ধরাতল.
-- শান্তনু সান্যাল


নিশীথ রাতের রহস্য

আজ কবিতা নয়, যদি বলি কাহিনী শুনবে কি,
এই কাহিনীর কোনো শীর্ষক নাই, নামহীন !
শুধুই অনুভব করতে হবে, মনের ভিতরে, সে
এখন পাশ ফিরে চেয়ে রয়েছে আমার দিকে,
তার নিঃশ্বাসের ওঠা নামার মাঝে থেমে আছে
জীবনের কিছু অতীতের ছেঁড়া, নোংরা পৃষ্ট,
বুকে আলতো ভাবে হাত রেখে সে শুনতে চায়
সব কিছু, ভূমিকা না বেঁধে সরাসরি আমি
খোলা জানালার বাইরে এক নজর দেখে বলি -
 সে দিন ও ছিল এমনি এক জবজবে রাত,
বাইরে তখন সঘন মেঘের বর্ষণ,আকাশ যেন
ভেঙে পড়তে চায়, শ্রাবণ কি ভাদ্র মনে নাই,
দেখি সন্নিধির সান্দ্রতা ঘনিয়ে চলেছে ক্রমশঃ,সে
এখন প্রায় বিজড়িত, কিছু ক্ষণের নিরবতা,
"তারপর -- বল না, কি হলো ঘুমিয়ে না কি "
হটাত মধ্য রাতে,ওই ১২ টা বা  দেড় টা হবে -
সঠিক মনে নাই,দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ, ঠক
ঠক -- সে এখন আলিঙ্গনবদ্ধ,তারপরে, কিছু
মুহূর্তের বিরতি, আমি জানতে চাইলাম কে
আছে বাইরে,নিশীথ রাতে এই ভাবে কি দরজা
খোলা উচিত, "কি উত্তর পেলে " সেটা খুব
একটা মনে নাই,কিন্তু --"কিন্তু আবার কি হলো,
দরজা খুলে ছিলে," সে এখন বাহুপাশ খুলে
দিয়েছে,মুক্ত হরিণী খুঁজে চলেছে কস্তুরীর গন্ধ,
আলো জ্বালিয়ে জানতে চায় কাহিনীর
উপসংহার, আমি যখন সৃজনের শিল্পী, রহস্য
তো আমার হাতে, শবাধার ঢেকে দিয়েছি,
বাইরে সে দিনের মতন বৃষ্টি এখন থেমে রয়েছে,
ঘুম ভাঙার সঙ্গে সঙ্গে, আবার, তারপর
কি ঘটল,কে ছিল,কি হলো নানান প্রশ্নের মাঝে
দিনের আলো ছড়িয়ে গেছে চার দিকে, তার
কৌতুহলের মাত্রা কমী নি কোনো ভাবে,
আমি ও চাই যে রহস্যময়ী রাতের কাহিনী
যেন এই ভাবে টেনে আনুক তাকে নিকটতম !

-- শান্তনু সান্যাল 

 





সোমবার, ২৮ নভেম্বর, ২০১১


দরজার আড়ালের শিশু 

প্রত্যাশার ফর্দ নিয়ে সে দাড়ানো, খোলা 
দরজার মুখে, মৃদু জোছনা পথ খুঁজে
পায় না, উঁকি দিয়ে চলেছে 
ভীরু ভালবাসা, তার 
প্রণয়ের জগত -
খুবই 
কঠিন, হৃদয় এখানে কেবল ছায়াচ্ছন্ন 
বস্তু, স্বপ্নের কোনো পরশ পাথর ! 
তার নথিবদ্ধ তালিকায় 
সেটা অন্তিম ক্রমে, 
দরজার 
আড়ালে লুকানো, যেন ডানপিটে শিশু,
সেই ক্রমবদ্ধ তালিকার প্রথমে 
আছে গহন অন্ধকার, 
তাই ঘরে ঢুকে 
দিয়েছে সে 
কপাট, 
সেই  ধড়াস শব্দে ফিরে গেছে জোছনা, 
ভয়ভীত চোখে ভালবাসা এখন 
অন্ধকারে খুঁজে নিরাপদ 
আশ্রয়, ঘামিয়ে 
উঠেছে 
এতক্ষণ উত্তরীয় বিহীন দেহের ঊর্ধ্বস্থ 
ভাগ, উদ্দীপ্ত আঙ্গুলের মাঝে 
অস্তিত্ব এখন বিক্ষিপ্ত 
প্রাগৈতিহাসিক
মানুষ, 
সে ভুলিয়ে দিয়েছে নিমেষে উধাত্ত শিশু !
খেলে চলেছে সে এখন বুক হতে 
সমস্ত শাখা প্রশাখার ভুবন,
পরিপূর্ণ ভাবে দেহের 
শিকড় এখন 
তার 
নিয়ন্ত্রণে, ভাঙা গড়া  শুধুই তার হাতে,
আমি জিজ্ঞাসু চোখে চেয়ে রয়েছি 
ঝকমকে ভাটার দুরে সরে 
যাওয়া অপরূপ রূপ, 
উড়ন্ত কেশের
মায়া, 
ঝঞ্ঝার ফিরে যাওয়ার পথে বসে রয়েছে 
দেখি আতঙ্কিত ভাবনার শিশু,
একাকী শীতের রাতে যেন 
খুঁজে চলেছে নিজের 
ভিতরে অজানা 
আশ্রয়স্থল, 

-- শান্তনু সান্যাল
source  - vivian c. olsen 

রবিবার, ২৭ নভেম্বর, ২০১১

হার মানবো না কোনো দিন

যখন তারা কেড়ে নিয়েছ খাতা কলম
পাথরে লিখে গেছি জীবনের
কাব্য, অবহেলার পথে
দাড়িয়ে স্বীকার
করেছি
প্রতিযোগিতা, যখন তারা পুড়িয়ে
গেছে আমার বাসার ছাদ,
হয় ত সে রাতে আমি
ঘুমোতে পারি নি,
কিন্তু দেখেছি
নতুন
ঘরের স্বপ্ন, দহন নিয়ে বুকে খুঁজেছি,
স্থায়ী আচ্ছাদন, তাদের তুচ্ছ
দৃষ্টি উঠিয়ে এনেছে
আমায় শীর্ষে,
হার মানি
নি
কোনো ভাবে, প্রতি মুহূর্তে জ্বলে উঠেছি
ছাইর বুক হতে অঙ্গারের রূপে,
তাদের অট্টহাসের মাঝে
সন্ধান করে গেছি
হারানো মূল্য,
জীবনের
অর্থ, 
খাঁটি সোনা হতে চেয়েছি আমি, তারা
ধূমিল করতে পারি নি অস্তিত্ব,
তাপ্পি ভরা আবরণে
সাজিয়েছি
স্বপ্নের
রেশমী সুতায় আঁকা বাঁকা রাফু, আড়ালে
যেতে চায় নি, ভিজেছি অসহায়
বৃষ্টির অঝর ধারায়, কড়া
নাড়া দেয় নি আশ্রয়
স্থলে, ভালো
ভাবে
বাঁচার জেদ আমার ছিল বন্ধু, নিয়তির
কান্না করি নি কোনো দিন, লড়ে
গেছি জীবনের সঙ্গে অনবরত,
তাদের ভবিষ্যদ্বাণী ছিল
মিথ্যে, প্রমাণ করে
গেছে আমার
পুরুষার্থ,
সফলতার মাপদণ্ডে হয় ত আমার স্থান
সীমিত, কিন্তু মনের প্রাঙ্গণে সে
অসাধারণ, তাদের হাসির
মাঝে এখন ঈর্ষার
ক্রন্দন, কিংবা
ভুল
ভাঙনের প্রায়াশ্চিত, কিন্তু আমি একগুঁয়ে
হার মানবো না মৃত্যু পর্য্যন্ত - - -

- শান্তনু সান্যাল
http://sanyalsplanet.blogspot.com/

রিক্ত অঞ্চল যখন আকাশ 

সেই গুহার ভিতরে গুহার অনুক্রম অশেষ 
নিয়ে চলে অন্তভৌম পথে নিরন্তর,
নজিরবিহীন জগতে, জানি 
মরিচিকার ওই কল্পিত 
বিন্দুর বিম্বে তুমি 
হাসো উন্মুক্ত 
ভাবে, 
নিশীথ রাতের নিরবতা ভেঙে, ফেকাসে 
চাঁদ হটাত তখন উজ্জ্বল, আমি 
ভুলতে চাই, সমস্ত জয় 
পরাজয়ের আকলন,
ঘাত প্রতিঘাতের 
তীব্রতা, প্রেম 
ও ঘৃণার 
সেই 
সূক্ষ্ম বিভাগ রেখায়, তোমার স্পর্শ রেখে 
যায় চুপি চুপি কিছু তাম্রবরণী ফুল 
নকল কি আসল, ধরা মুশকিল, 
কিন্তু জোছনার আলোয় 
তারা হয় উঠে
রজতনিভ, 
তখন দেখি হৃদয় সেজে চলেছে একছত্র 
অধিপতি, তুমি বাড়িয়ে চলেছ 
দুই হাত নিয়ে কৌস্তুভ মণি
খচিত কিরীট, সেই 
অভিষেকের 
লগনে 
জীবনের সাম্রাজ্য  ভরে চলেছে মরুভূমির 
শুন্যতা, অনুর্বর, পরিত্যক্ত ভূভাগ 
ভিজে চলেছে ভাবনার মেঘে, 
আমি তখন চির ঋণী 
চোখে চেয়ে রয়েছি 
অবাক তোমার 
প্রতিদান, 
আমার রিক্ত অঞ্চল হয়ে উঠেছে অকস্মাত 
তারক ভরা নীলাকাশ !

-- শান্তনু সান্যাল
http://sanyalsplanet.blogspot.com/
Artwork of Karen Ku - Dany's Flowers


কুয়াশাচ্ছন্ন আকাশ পথ 

এত কাছে সে রয়েছে, নিঃশ্বাসের তরঙ্গে 
দেহের ঊষর জমি টেনে রাখতে 
চায় মেঘের পরিপূর্ণ আর্দ্রতা,
শ্রাবণের অবাধ বর্ষণ,
তবু যেন মনে হয় 
ঘোলাটে 
আলোয়, হৃদয়ের মাঝে, জর্জর সাঁকোর 
প্রান্ত স্তম্ভ হারিয়ে চলেছে ক্রমশঃ 
পায়ের মাটি, স্পন্দনের
সেই চিত্র লেখে 
আমি ধরে 
রাখতে 
চাই প্রাণপণে তার বিস্ফুরিত ভালবাসা, 
কম্পিত আলেয়া ধীরে ধীরে গ্রাস 
করে চলেছে দেহের অধিকাংশ 
ভাগ, এই ভাবে গ্রহনের 
প্রচ্ছায়া মোহিত করে 
থাকে জীবনের 
গ্রহ উপগ্রহ,
তার অন্তিকে সারা রাত, নির্বাক পড়ে থাকে 
প্রণয়ের গভীর আগ্নেয়গিরি,অর্ধ সুপ্ত 
অর্ধ জাগা, তার সংকেতে ওঠে 
অগ্নিশিখা কখনো অনুগ্র 
আবার অনেক সময় 
বিস্ফোরণশীল,
শিশির বিন্দু 
কিংবা
শেষ প্রহরের ছিঁটে ফোঁটা সেই দহনে যায় 
হারিয়ে, যেমন বিহানের কুয়াশা   
ঢাকা ক্ষিতিজে, সূর্য্য খুঁজে 
পায় না আকাশ পথ, 
তার অন্তরঙ্গে 
আমি খুঁজি 
অস্তিত্বের অর্থ, প্রেমের পরাকাষ্ঠা, পুনর্জন্ম !

-- শান্তনু সান্যাল
http://sanyalsplanet.blogspot.com/





শুক্রবার, ২৫ নভেম্বর, ২০১১


নিখোঁজ আলো 

খালি কাচের শিশির মাঝে রেখে ছিলাম, 
সেই হরিতাভ আলো, শিশুবৎ
ভাবনা, বন্দী করতে চাই 
নি, তাই ঢাকনা দিতে 
ভুলে গেছি, ঘন 
অন্ধকারে 
দেখি সেই ক্ষুদ্র আলো ধীরে ধীরে উপরে 
উঠে ডানা মেলে, উড়ে গেছে কনক
চাঁপার গাছে, তখন রাত্রি, পূর্ণ -
বর্ধিত নিশাচর ঘ্রাণের 
অঙ্কে বিলীন, 
একাকী 
বেরিয়ে এসেছি খুঁজতে সেই নিখোঁজ দীপ্তি, 
চন্দ্রবিহীন আকাশে আকাশগঙ্গার 
জোয়ার ভাটা স্থায়িত্ব দিকে, 
চেয়ে রইলাম বৃক্ষের 
শীর্ষে, হারানো 
আলোর 
পাষাণ যুগীন নৃত্য, কাচের শিশির ভাঙ্গনের 
শব্দ ! খুঁজে পাই নি আজন্ম সেই
উড়ন্ত  জ্যোতির রহস্য,
হয় ত সে ছিল 
অশরীরী
স্বপ্ন. 
-- শান্তনু সান্যাল   
firefly - J Slayton Abstract Impressionism


বৃহস্পতিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০১১


উড়ন্ত মধুমাস 

সংবেশিত মূহূর্তে সে ছুঁয়ে গেছে নিস্তব্ধ, 
স্তর প্রতি স্তর, বহিঃস্থ অঙ্গ হতে 
মনের বহু বক্রতা, কিন্তু 
তবু ও যেন ছুঁতে 
পারি নি 
তলদেশের গভীরতা, যদি ও আমি 
খুলে বসে ছিলাম বুকের 
আবরণ, পারদর্শী 
জানালা, সে 
ধরতে 
পারি নি সুগন্ধিত চাঁদের আলো, উড়ে 
গেছে অন্তরঙ্গের জোনাকি, 
ভোরের আলতো 
অন্ধকারে, 
যখন উঁকি দিল প্রথম সূর্যের কিরণ 
জীবনের  ক্লোরোফিল গেছে 
শুকিয়ে, পাতার গায়ে 
সালোকসংশ্লেষণ
অর্থহীন,
ভালবাসা  হয়ে উঠেছে  বাধ্যবাধকতা !
আবেশহীন সাগরে ভাসন্ত হিমশৈল,
তবু ও মন চায় উড়ন্ত মধুমাস 
পল্লব বিহীন শিমুলের 
গায়ে গন্ধহীন 
রক্তিম ফুল.

- শান্তনু সান্যাল
http://sanyalsplanet.blogspot.com/
  

মঙ্গলবার, ২২ নভেম্বর, ২০১১


ফুলের কঙ্কাল 

ধুলিধুসর বইর মাঝে ছিল লুকিয়ে সেই 
ফুলের কঙ্কাল, বইর তাক গোছাবার
সময় হটাত দেখি অতীত 
মুখোমুখি, চোরকাঁটা
বিঁধে  চলেছে বাহ্য 
আবরণ, শুষ্ক 
শিরা সমূহ
হয়ে 
উঠেছে আস্তে আস্তে মাংসল শরীর,
পার্শ্ববর্তী বর্তমানের ডাক আর 
শুনতে চায় না বধির মন, 
সে দেখে চলেছে এখন 
দিবা স্বপ্ন, স্বজ্ঞার 
পুনর্জন্ম কিংবা
জীবাশ্মের 
জীবিত 
হয়ে ওঠা, দশক চার  ফিরে যাওয়া, দেহে 
জড়িয়ে সেই নীল রেশমি শাল, পুষ্প 
দাড়িয়ে আছে, নিঝুম  শীতের 
সাঁঝে, কাশী বিশ্বনাথের 
কাছে, বিছিন্ন পাতার 
বোর্ড ঝুলে রয়েছে 
থিয়েটারের 
গায়ে, 
পাঁচমাথার দিকে ট্রাম এই মাত্র যেন গেল,
"কত ক্ষণ " আমার প্রশ্নের উত্তরে সে 
মুচকি হেসে বলল - যুগ যুগান্তর 
ধরে, রাস্তার আলো তখন 
পূর্ণ বিকশিত, ঝলমল 
মালঞ্চে বসে দেখি 
তার  ক্লান্ত 
মুখে 
ভেসে উঠছে  অসময়ের মেঘের সঘন ছায়া,
কালান্তরে সে ঝরে গেছে মরুভূমির 
বৃষ্টি সম, বলা মুশকিল কি ভাবে 
সে রয়ে গেল বইর পৃষ্টে 
চাপানো গোলাপ, 
আঙ্গুলের 
ডগায় প্রজাপতির পরিত্যক্ত রঙের ছাপ.

-- শান্তনু সান্যাল 
 painting by ELEXIS BARANCK
http://sanyalsplanet.blogspot.com/

  

সোমবার, ২১ নভেম্বর, ২০১১


আরোহী 

আরোহণের পূর্বে হয় ত আমি বাঁধি নি 
কটিবন্ধে দড়ি, শীর্ষে উঠতে গিয়ে 
নেমে এসেছি ঠিক যেখানে 
ছিল আরভমানের
প্রস্তর চিহ্ন, 
তোমার হাসির গন্ধে ছিল অবহেলার 
প্রবণতা, এখানে কিন্তু জীবন 
পুনরায় প্রস্তুত, অবাধ্য 
ভাবে উঠে যেতে 
চায় অধর 
ছাড়িয়ে 
হৃতপিন্ডের বোধাতীত জগতে, তুমি 
থামাতে পারো নি আমার 
অনুপ্রবেশ, অসহায় 
ভাবে মেনে 
নিয়েছ, 
দৈহিক, অদৈহিক, সর্ব অপ্রত্যাশিত আধিপত্য,
সমর্পণের মুহূর্তে তুমি এখন কেবল 
জলবিহীন মাছ, দিঘির বাইরে 
তোমার নিঃশ্বাস, একমাত্র 
আমার হাতে, নিয়তির 
চক্রে আরোহী তুমি 
যদি পারো ধরে 
রাখো 
পাষাণী বুকের জোরাল, শুষ্ক পাঁজরের অগ্রভাগ.

-- শান্তনু সান্যাল
http://sanyalsplanet.blogspot.com/



রবিবার, ২০ নভেম্বর, ২০১১


অগ্নি বলয়ের ওপারে 

সন্ধ্যা নামার পূর্বে কপিন্জলের ডাকে 
ঝিলের তরঙ্গ সহসা যেন অস্থির -
কিছু ক্ষণেই বোধ হয় বৃষ্টির 
ঝাঁপ ভিজিয়ে যাবে অন্তর্মনের দহন, 
মেঘেরা ভিড় করে আছে,
মালভূমির উপরে, সুদুর পাহাড়ে কি 
রাত অসময়ে ঘিরে আসে ?
তোমার এই প্রশ্নের মধ্যে আমি  দেখি 
সহসা হয় উঠেছি ক্রুর  আলফা 
নেকড়ে, সিগারেটের ধোঁয়া মুক্ত করে 
মন চেয়েছিল তোমার অস্তিত্ব 
সম্পূর্ণ ভাবে গিলে নিতে, ঘোরের -
সান্দ্রতা তখন আঠাল, তুমি 
ফেলে চলেছ টোপের অপর  টোপ -  
দুজনই নিজের জগতের স্বামী,
স্বয়ংভূ, বিশৃঙ্খল দুই উন্মুক্ত চরিত্র !
অভয়ারন্যে বর্ষা তখন চূড়ান্ত 
ভাবে ঠেলে চলেছে শুকনো নদীর -
বালু, পাথর, তীরের অশক্ত  
ঝোপ যেন নিজেই ভেসে যেতে চায়,
নুয়ে পড়ছে একের পরে এক,
তখন তুমি কিছুই শুনতে রাজি না,
আমি চাই নি বিশ্বাস কর এই 
ভাবে তোমায় উধ্বস্ত করতে, কিন্তু 
তুমি নিজেই চাও নিজেকে 
উজাড় করতে, তাই করে গেছ সেই 
মনের খুব নরম ভাগে ঘাত -
প্রতিঘাত, জাগিয়ে গেছ সুপ্ত পৌরুষ,  
সেই পান্থশালায় তোমার পৃথিবী 
অন্ধকার, কেড়ে নিয়েছি  আনুগত্য !
জানালার কাচে তোমার আগামী 
সকাল, ভিজে কাঁপছে একাকী,
আমি এখন গর্বিত পুরুষ দাঁড়িয়ে 
দর্পণের মুখে নির্লজ্জ ভাবে 
পরে চলেছি অধোবস্ত্র, তুমি খুঁজে 
চলেছ এমন সময় বিছিন্ন 
সিঁদুরের কৌটো, বিবর্ণ  কাজলদানী,
মরিচিকার পথে মমতাময়ী 
মরুদ্যান, আমি নিজগৃহে এখন আর্য 
সুপুরুষ, ভদ্র এক জন, তুমি 
শুধুই এক রাত্রির প্রহসনের অংশ -
আমার কাছে তোমার এই 
পরিচয়, যবনিকা ফেলার পরে কে 
তুমি, কে আমি, অনুবন্ধের 
খেলা তুমি নিজেই খেলতে চাইলে এখন 
বলার কিছুই নাই, মৌন অনন্ত,

-- শান্তনু সান্যাল 
painting self reflection - source unknown
 http://sanyalsplanet.blogspot.com/

শনিবার, ১৯ নভেম্বর, ২০১১


পার্শ্বপথের যাত্রী 

ক্রমশঃ অন্তরণের ভাব নিয়ে তার দূরে সরে 
যাওয়া, হয় ত ইঙ্গিত করে গেছে 
বহু আগেই, টের পাই নি 
মনের কিনারা, যখন 
সে এক শীর্ণ জল -
ধারা, বৃষ্টি 
যাযাবর,
উড়ে চলেছে উদ্দেশ্যহীন এখানে সেখানে -
জানার সত্তেও যে সে আর ভালবাসে 
না, আমি খনন করেই চলেছি 
বুকে লুকানো বালির 
ধ্বসে যাওয়া 
জল কূপ,
সেই সকাল থেকে সন্ধে, নন্দন থেকে 
পুরোনো বইর পাড়া, খুঁজেছি সেই
শুকনো ফুলের শিরায়
ঘনীভূত ক একটা 
শিশির ফোঁটার 
ঠিকানা,
জন অরণ্যের মাঝে সাঁঝের আলোয়, এখন 
রঙ্গীন চিরকুট, টুকরো টুকরো 
উড়ে চলেছে ধুসর জামীরা
আকাশে, ছুঁতে চায় 
দূরগামী 
উড়োজাহাজের লাল সবুজ আলোর ফুলকি,
স্বপ্ন দেশান্তরী, নিশীথরাতে নাকি 
গান করে, নাচ করে,
মূর্চ্ছিত বুকে প্রাণ
ভরে, সাগর 
পারে,
আমি হেঁটে চলেছি একাকী ফাঁকা পথে বহু দূর,
শহর এখন অমূর্ত অবুঝ চিত্রবীথি,দর্শক
বলতে আকাশের জগত, চেয়ে 
আছে উন্মুক্ত বক্ষের
সমাধিস্তম্ভের 
দুর্বোধ্য 
লিপি.

--- শান্তনু সান্যাল
http://sanyalsplanet.blogspot.com/
source - pinoy exchange 


সিক্ত ঝরা পাতা 

না, আমি চাই নি সে দিন তোমাকে ভালোবাসতে,
শুধুই চেয়েছিলাম একান্ত পুতুল খেলা খেলতে, 
তোমার শ্যামবর্ণ দেহে কিছুই এমন ছিল 
না, যে অনায়াসে করে যেত উদ্বেলিত
প্রসুপ্ত পৌরুষ গ্রন্থী, জানি না 
কোন মুহূর্তে কেন যে 
এমন হলো, হঠাত
দেখি তুমি 
ভেসে চলেছ স্নায়ুর ভিতরে, রক্ত কণিকার রূপে, 
সন্ধে ঘিরে যখন নামল ছিঁটে ফোঁটা বৃষ্টি,
জানালার ধারে দেখি লুকিয়ে চলেছে 
অচেনা কোন এক পাখি, আমি 
চেয়ে ও জানালা দিতে 
পারি নি, কোথায় 
যেন তোমার 
নিরীহ 
চোখ, নীড় বেঁধে চলেছে তখন হৃদয়ের মাঝে,
আবার এক দিন ভিজা পাখির মত
দেখি তুমি দাঁড়িয়ে আছ 
দরজায়, ঘামিয়ে 
একাকার, 
মন 
হয়ে উঠলো সহজে অশ্বত্থ গাছ, ছায়াচ্ছন্ন তোমার 
শ্যামলা শরীর হয়ে উঠেছে সেই ক্ষণে 
অঙ্কুরিত নব কিশলয়, বুকের 
আশ্রয়ে তুমি তখন পূর্ণ 
নারী, সৃজনের পথে 
অগ্রগামী,
তুলনার চিত্রলেখে তুমি শীর্ষ বিন্দু, আমি খুঁজে 
চলেছি অধোবিন্দুর সমাপ্তি, সেই অক্ষের 
ধরাতলে বহু বার  তুলে নিয়েছ 
আমায়, আমি তখন ঝরা 
পাতা চেয়ে আছি 
শিশির বিন্দু.

-- শান্তনু সান্যাল
http://sanyalsplanet.blogspot.com/


বৃহস্পতিবার, ১৭ নভেম্বর, ২০১১

আলোর রুমাল

প্রণত নয়নে তার বালুকা বেলায়
অঙ্গীকারের কবিতা, প্রায়
রেখে যায় কিছু ম্লান
অস্পষ্ট শব্দের
খোল,

কুজনের রহস্য রোমাঞ্চ, সাঁঝের -
ক্লান্ত নিঃশ্বাস তুলে রাখে
তার পরিত্যক্ত
শল্কের কিছু
রঙ্গীন

টুকরো, মন চায় ফিরে পাওয়া অবেলার
 জোয়ার, দেহের জোছনা,
জীবনের আঁধার এই
মুহূর্তে চায় পূর্ণ
পরিত্রাণ,

সম্ভবত  সে এখন ঝুলন্ত নাগরদোলা,
ফেলে চলেছে আলোর রুমাল,
তারকের ভিড়ে খুঁজে
হৃদয়ে তার ভেঙে
পড়ার পথ,

চেয়ে রয় স্থির দৃষ্টে মন, বিস্তীর্ণ আকাশ !

-- শান্তনু সান্যাল
http://sanyalsplanet.blogspot.com/

creator of painting -IRENE FRANKEL 

সৃজনের কাহিনী 

দেখতে চাই নি সে জীবনের ধুসর পৃষ্টে 
লেখা, বাস্তবিক কাহিনী, কুত্সিত 
লোম ভরা বুকের মধ্যখানে 
ত্বক বিহীন সাদা দাগ,
নিভিয়ে গেছে
নিজেই 
আলোর স্রোত, সে এখন বিগলিত তরলতা 
 উচ্চ তাপে আসীন একান্ত রাজমহিষী,
 জ্বলন্ত পথ হতে নেমে যেতে 
চায় সাগর ধরাতলে,
খালি পা, এলো
 কেশ,
 নির্বস্ত্র 
দেহ, বিক্ষিপ্ত ভাবে সে ভালবাসতে চায় 
পরিত্যক্ত প্রবাল দ্বীপ, আমি কাচের
শিল্পী, ঘামানো স্বপ্ন নিয়ে 
দাঁড়িয়ে আছি, অবাক 
অগ্নি কুণ্ডের
সম্মুখীন,
উঠন্ত অগ্নিশিখায় লিখতে চাই শ্রাবনের গান, 
তার উষ্ণ নিঃশ্বাসের বুদ্বুদ, চোখের 
নিঃশব্দ, মায়াবী রূপের  প্রদীপ্ত
বালু  কণা,  এঁকে চলেছে 
অমূর্ত চিত্রকলা,
সেই ক্ষনিক 
তীব্র সময়ে পৃথিবীর আবর্তন হয়ত থেমে  
 ছিল কিছু ক্ষণ, হাতের সেই 
দোলায়মান জাদু  নিমেষে 
রচে গেছে 
প্রেমের 
 অধর চিহ্নিত অভিনব সুরাপাত্র, সামলিয়ে 
রেখে আসলাম সেই উচ্চ  তপ্ত 
ধুম্রময় কৃতি, পারদর্শী 
স্বর্গ, অনন্ত বীথি 
এখন তার 
নিম্নাঞ্চলে উচ্ছলীয় রয়েছে বাষ্পিত উর্মিমালা,
ভেসে চলেছে ঝামা পাথর, হয়ত কালান্তরে 
হয়ে উঠবে সে গুলো রঙ্গীন জীবাশ্মের 
রূপ,বহুমূল্য রত্ন মালা, সৃষ্টির 
বিরল আবেশের দীপ্তি,
প্রেমের দীপশিখা,
সৃজনের 
প্রারব্ধ !

--- শান্তনু সান্যাল 
 http://sanyalsplanet.blogspot.com/